দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অগ্রগতি ‘ভঙ্গুর’ : জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত

  • নয়া দিগন্ত অনলাইন
  •  ৩০ মে ২০২৩, ২২:৩৬
জাতিসঙ্ঘের চরম দারিদ্র্য ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত অলিভিয়ে ডি শ্যুটার – ছবি : বিবিসি

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি করেছে সেটিকে ‘ভঙ্গুর’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসঙ্ঘের চরম দারিদ্র্য ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত অলিভিয়ে ডি শ্যুটার।

বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বিরের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশের সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন বলে জানান।

রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাড়া না দেয়াকে ‘কলঙ্কজনক’ বলেও আখ্যা দেন ডি শ্যুটার।

২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নীত হবার পর মজুরি বৃদ্ধি এবং সামাজিক খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে শ্যুটার বলেন, বাংলাদেশের উচিত মজুরি বাড়ানো যেন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সুবিধা পেতে দেশটির জনগোষ্ঠিকে দারিদ্র্যের মধ্যে রাখতে না হয়।

বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক একটি জরিপে দারিদ্র্য কমে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

‘সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চরম দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসা অনেক মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার সামান্য উপরে উঠেছে। এর ফলে হঠাৎ কোনো বিপদ এলে সেটা মোকাবেলা করার মতো অবস্থা তাদের নেই।’

‘অনেক পরিবার দারিদ্র্যসীমার ঠিক উপরে উঠে এলেও তাদের টিকে থাকার সামর্থ্য নেই। তাদের অর্থ সঞ্চয় করা বা পুঁজি জমানোর সক্ষমতা নেই। ধাক্কা সামলানোর মতো কোনো সম্পদ তাদের নেই। ফলে এই অগ্রগতি ভঙ্গুর’, বলেন শ্যুটার।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছ থেকে তহবিল কমে আসার বিষয়টি নিয়ে উদ্বগ প্রকাশ করেন জাতিসঙ্ঘের এই বিশেষ দূত।

‘জাতিসঙ্ঘের মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলো তাদের সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছে যে আবেদন করছে, তাতে সাড়া মিলছে না। মানবিক সংস্থাগুলো এবছরের জন্য ৮৭ কোটি মার্কিন ডলারের সহায়তার অনুরোধ করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার মাত্র ১৭ শতাংশ পাওয়া গেছে।’

‘এটি কলঙ্কজনক’, বলেন তিনি।

শ্যুটার মনে করেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উঠে আসার ধাক্কা সামলাতে বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল পরিবর্তন করা উচিত।

‘রফতানি বাড়ানোর চাইতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর দিকেই বেশি নির্ভর করা উচিত এই উন্নয়ন মডেলের। যেটি কিনা চীন করেছে ১৫-২০ বছর আগে, যখন তারা স্থানীয়ভাবে মজুরি বাড়াতে শুরু করে। তখন তারা সামাজিক সুরক্ষার পেছনে বিনিয়োগ করতে শুরু করে।’

‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসার পর বাংলাদেশও এটি করতে পারে এবং করা উচিত’, মন্তব্য করেন তিনি।

বেলজিয়ান আইনজ্ঞ অলিভিয়ে ডি শ্যুটার ২০২০ সাল থেকে চরম দারিদ্র্য ও মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করছেন। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি খাদ্য অধিকার বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সূত্র : বিবিসি