গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করছে বিএনপি। এতে আগামী নির্বাচনের পর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোকে নিয়েই জাতীয় সরকার গঠনের বার্তা দিচ্ছে দলটি। এজন্য ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সব দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বিএনপি’র তরফে। পাশাপাশি সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ৩১ দফা রূপরেখা বাস্তবায়নে সারা দেশে দলীয় কার্যক্রম জোরদারের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
সমমনা দল ও জোটের নেতারা জানিয়েছেন, ৩১ দফা বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন আছে। এই ঐক্য তারা বিনষ্ট করতে চান না। প্রয়োজনে ৩১ দফায় যদি আরও কিছু পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হয়, সেটাও করা হবে। এ ছাড়া নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়েও আলোচনা হয়। এই সরকার গঠন করা হবে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুররুদ্ধারে থাকা প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে। কারণ বিএনপি চায়- আগামীতে সবাই দেশ পরিচালনায় অংশ নিবেন, যাতে দেশ তাদের অবদানের সুফল থেকে বঞ্চিত না হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমমনা দল ও জোটের দুই শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে বলেন, বৈঠকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে এই সরকারের সময়, তাদের রাষ্ট্র সংস্কার এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বৈঠকে পরবর্তী বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নতুন ভাবনা প্রত্যাশা পূরণে যারা যুগপৎ আন্দোলনে ছিল তাদের নিয়ে করণীয় ঠিক করতেই এই বৈঠক। সকলের আস্থা আছে এই সরকারের উপর। তাদের আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো। রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় তা নিয়েও কথা হয়েছে। আর ৩১ দফা সবাই মিলে করেছি, বাস্তবায়নও একসঙ্গে করবো। জাতীয় সরকার বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করবো। রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের প্রত্যাশা করি।
মিয়া মশিউজ্জামান বলেন, সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনার জন্য সরকারকে আমরা সহযোগিতা করবো। আগামী নিবাচনের পর কী সংস্কার করতে চাই, তা ৩১ দফায় আছে। জাতীয় সরকারের মাধ্যমে এসব বাস্তবায়ন করতে চাই। সম্প্রতি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে গতকাল দলের চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক হয় ৩টি দলের সঙ্গে।
বৈঠকে বিএনপি’র পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও লিয়াজোঁ কমিটি প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এবং লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। এতে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক হারুন আল রশিদ খানের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেন। বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের সঙ্গে বৈঠক করে দলটি। এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এই বৈঠকে অংশ নেন। সর্বশেষ বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। এতে দলটির আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান ও সদস্য সচিব ফারুক হাসানের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেন। আজ বিকাল ৫টায় চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনে সদ্য নিবন্ধন পাওয়া গণঅধিকার পরিষদের (নুর) সঙ্গে বিএনপি’র বৈঠক হবে।
গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, আজকে আমাদের সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। ৩১ দফা আমাদের সকলের মতামত। জাতীয় প্রয়োজনে পরিবর্তন করা যাবে। আজকে যে সরকার ক্ষমতায় আছে তাদের কঠিন দায়িত্ব রয়েছে, তাদের অনেক সংশোধনী আনতে হবে।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে যে বক্তব্যটি দিয়েছিলেন- সেটারই পুনরাবৃত্তি করেছেন জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হবে। আমরা দেখেছি উনি বলেছেন যে, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারাই অংশগ্রহণ করেছিলেন আগামীতে তাদের সকলকে নিয়েই দেশ পরিচালিত হবে। তারেক রহমান মহা ঐক্যের উপর জোর দিয়েছেন এবং আন্দোলনরত সকল দল ও জোটকে আশ্বস্ত করেছেন যে বিএনপি তার বক্তব্য থেকে এক পা পিছু হটেনি।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ফারুক হাসান মানবজমিনকে বলেন, বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বলা হয়, এই সরকারকে বিএনপি এবং সমমনা দল ও জোট যৌক্তিক সময় দিবে। এই সময়ে এই সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
manabzamin