অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি তিন বছর ধরে বাড়ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই প্রথমবারের মতো নতুন বাজার হিসেবে পরিচিত তিনটি গন্তব্যে পণ্যটির রপ্তানি ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য এখন নতুন বাজার।
সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তার আগের অর্থবছরে নতুন বাজারের মধ্যে শুধু জাপানে এক বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ছিল। তবে এই তিনটি দেশই পোশাকের নতুন বাজার হিসেবে পরিচিত।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রচলিত বাজারগুলোয় যখন বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখলাম, তখন আমরা নতুন বাজারে যাতায়াত বাড়িয়ে দিই। সেসব দেশের প্রদর্শনীতেও অংশ নিতে শুরু করেছেন আমাদের উদ্যোক্তারা।’
শহিদউল্লাহ আজিম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে অস্ট্রেলিয়াসহ অন্য দেশে সম্মেলন করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। সব মিলিয়ে নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়ছে।’ শহিদউল্লাহ আজিম জানান, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া, চীনসহ অন্য দেশে পোশাক রপ্তানি বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে নতুন বাজারের মধ্যে সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানি হয়েছে জাপানে, ১৬০ কোটি ডলারের। এই রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় ৪৫ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। বাজারটিতে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে যথাক্রমে ৯৪ ও ১১০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১০১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৪১ শতাংশ। দুই বছরের ব্যবধানে এই বাজারে রপ্তানি বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এই বাজারে রপ্তানি ছিল ৪২ কোটি ডলার। পরের বছর তা বেড়ে ৭২ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।
অন্য নতুন বাজার
বিদায়ী অর্থবছরে নতুন বাজারের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় চতুর্থ সর্বোচ্চ ৫৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি আয় তার আগের বছরের তুলনায় ২২ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই বাজারে রপ্তানি ছিল ৩২ কোটি ডলার। পরের বছর সেটি বেড়ে হয় ৪৪ কোটি ডলার।
এ ছাড়া পঞ্চম সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়েছে রাশিয়ায়। যদিও এই বাজারে রপ্তানি কমেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরই মূলত বাজারটিতে রপ্তানি কমতে থাকে। বিদায়ী অর্থবছরে রাশিয়ায় ৪৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ কম। ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে রাশিয়ায় যথাক্রমে ৫৯ ও ৫৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, নতুন বাজারের মধ্যে বিদায়ী অর্থবছর মেক্সিকোতে ৩৫ কোটি, চীনে ২৯ কোটি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৯ কোটি, মালয়েশিয়ায় ২৯ কোটি, তুরস্কে ২৯ কোটি, ব্রাজিলে ১৬ কোটি, চিলিতে ১৬ কোটি, সৌদি আরবে ১৩ কোটি, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৩ কোটি ও নিউজিল্যান্ডে ১৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে শুধু চিলিতে রপ্তানি কমেছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বছর দশেক আগে মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ৫ থেকে ৬ শতাংশের গন্তব্য ছিল অপ্রচলিত বাজার। বর্তমানে সেটি এক–পঞ্চমাংশে পৌঁছেছে। নতুন বাজারের তিনটি গন্তব্যে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি হচ্ছে। এটি আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা ও বৈচিত্র্যের নির্দেশক।’
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে প্রচলিত বাজারে উত্থান-পতনের মধ্যে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন বাজার আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কুশন হতে পারে।’
নতুন বাজারের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলেও মনে করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, নতুন বাজারগুলোর মধ্যে একেক গন্তব্যের ভোক্তাদের চাহিদা একেক রকম, কমপ্লায়েন্স কিংবা শুল্ক কাঠামোও ভিন্ন। ফলে বাজারগুলোর সম্ভাবনা কাজ লাগাতে আলাদাভাবে পরিচর্যা করতে হবে। সেখানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রদর্শনী করা যায়। আবার বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড বা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণও জানানো দরকার। সেসব দেশের বিনিয়োগকারীদেরও বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো যেতে পারে।
সিপিডির এই গবেষক মনে করেন, নতুন বাজারে শুধু তিন গন্তব্য নয়, আরও বেশ কিছু দেশে ১০০ কোটি বা ১ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি সম্ভব।