তেল সঙ্কটের পেছনে এস আলম গ্রুপের গোপন কৌশল

 

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২১ ১১:৫২:২৪

তেল সঙ্কটের পেছনে এস আলম গ্রুপের গোপন কৌশল

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত এক মাস ধরে বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে ভোক্তারা বিকল্প তেলের দিকে ঝুঁকছেন। এর ফলে ক্রেতাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। ডিলাররা বলছেন, মিলমালিকরা দাম বাড়ানোর জন্য কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করেছেন। তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সয়াবিন তেলের সঙ্কটের পেছনে এস আলম গ্রুপ রয়েছে, যারা সরকারের বিপক্ষে বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে।

১০ ডিসেম্বর ব্যবসায়ীদের চাপের পর সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি আট টাকা বাড়ানো হয়েছিল। তবে কিছুদিন সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার পর আবার বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ডিলাররা বলছেন, বাজারে সব প্রতিষ্ঠান সয়াবিন তেল সরবরাহ না করায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কারওয়ান বাজারে কিছু দোকান বন্ধও দেখা গেছে। ভোক্তারা বলছেন, যদি সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারে, তবে রমজান মাসে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাবে।

আজমিরা খাতুন নামে এক ভোক্তা বলেন, “বাজারে সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া মানে সোনার হরিণ খুঁজে পাওয়া। আমি কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখলাম, কিন্তু সয়াবিন তেল পাইনি। এটা কতটা বড় সংকট, তা বোঝা যাচ্ছে।”

একটি সূত্র জানায়, বাজারে সয়াবিন তেলের সঙ্কট কৃত্রিমভাবে তৈরি হচ্ছে এবং এর পেছনে এস আলম ও বসুন্ধরা গ্রুপ দায়ী। এই দুটি কোম্পানি আগে ৬০-৭০% ভোজ্যতেল সরবরাহ করত, তবে এখন তাদের মিল বন্ধ হয়ে গেছে, যার কারণে তেলের সংকট তৈরি হচ্ছে।

বর্তমানে সয়াবিন তেলের অভাবে ক্যানোলা তেল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, তবে এটি সয়াবিন তেলের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের দাম ৮৫০ টাকা হলেও, ক্যানোলা তেল ৯৪০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে কোম্পানিগুলো ক্যানোলাকে সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে বেশি দামে বিক্রি করে অতিরিক্ত লাভ করছে।

অন্যদিকে, বাজারে অস্বাস্থ্যকর, অনিরাপদ এবং ফুডগ্রেডবিহীন খোলা তেলও পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া, নকল বোতলও বাজারে প্রচলিত রয়েছে।

হাতিরপুল, নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারে সয়াবিন তেল খুব কম দোকানে সীমিত পরিমাণে পাওয়া গেলেও, অন্যান্য ব্র্যান্ডের ক্যানোলা তেল স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে। তবে এই তেলের দাম বেশি হওয়ায় ভোক্তাদের সমস্যা বাড়ছে। কারওয়ান বাজারের হাজি মিজান ট্রেডার্সের মালিক মিজানুর রহমান জানান, যেখানে তাদের সপ্তাহে ৫০০ থেকে ৬০০ কার্টন সয়াবিন তেল প্রয়োজন, সেখানে তিন দিন পর পর মাত্র ৫-১০ কার্টন তেল পাচ্ছেন।

তারা মনে করেন, বাজারে একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে এবং সরকারকে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

মেসার্স আল-আমিন ট্রেডার্সের আজগর হোসেন বলেন, “সয়াবিন তেল তো পাওয়াই যাচ্ছে না। বিক্রি করব কোথা থেকে? আমি ১০০ কার্টন তেল চাই, কিন্তু পাচ্ছি না।”

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া জানান, সিন্ডিকেট চক্র তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন যে, সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ নেই, বরং বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তব্য এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।

রমজানকে সামনে রেখে বাজারে সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে সরকার এখন পর্যন্ত কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়নি। আর এই সংকটের কারণে জনগণের জন্য খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছে, যা রমজানে সাধারণ মানুষের জন্য আরও বড় সমস্যা তৈরি করবে।

এছাড়া, আদা ও আলু সহ বিভিন্ন পণ্যের দামও বেড়েছে। আদা কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এবং আলুর দামও কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়ে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এভাবে, বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট এবং মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং এর পেছনে সিন্ডিকেট চক্রের জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

আমিন/

 

facebook sharing button Share
twitter sharing button

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here