মানভেদে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা, যা মাসখানেক আগেও বিক্রি হয়েছে মাত্র ১ থেকে ৩ টাকায়। জারবেরা বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৮ থেকে ১২ টাকায়। এছাড়া গাঁদা ফুল বিক্রি হচ্ছে প্রতি হাজার ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা পর্যন্ত। যা আগে ছিল ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত।পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা সিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে আসন্ন তিন দিবসে ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় করোনাকালের প্রায় দুই বছর পর মুখে হাসি ফুটেছে গদখালীর চাষিদের। তারা বলছেন, এই তিন দিবস যত এগিয়ে আসবে ফুলের দামও ততই বাড়বে। আশা করেছেন গত দুই বছর ধরে করোনায় লাগাতার যে ক্ষতির শিকার হয়েছেন, এ বছর ফুল বিক্রি করে কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য মতে, যশোরে ফুলচাষি রয়েছেন প্রায় ৬ হাজার। তারা অন্তত ১৫শ’ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষ করেন। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে অন্তত ১১ ধরণের ফুল চাষ করেন। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কলনডালা, চন্দ্র মল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল শোভা পাচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শীত প্রধান দেশের ফুল টিউলিপ চাষের মাধ্যমে গদখালীতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে প্রতিবছরই গদখালীর ফুলচাষিরা নতুন জাতের ফুল উপহার দিয়ে থাকেন। গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, লং স্টিক রোজের পর এবারের ভালোবাসা দিবসে ফুলপ্রেমীদের জন্য নতুন উপহার হচ্ছে টিউলিপ।
স্থানীয় চাষীদের উৎপাদিত ফুল বিক্রির জন্য যশোর-বেনাপোল সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম ফুলের বাজার গদখালী। শনিবার কাকডাকা ভোর থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরব হয়ে ওঠে ফুলের বাজার। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুলের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় শত শত ফুলচাষিকে। সেই সঙ্গে কয়েকটি পাইকারি ফুলের আড়তেও ফুলের সমারোহ। অল্প জমিতে ফুলচাষ করা চাষিরাও বাইসাইকেল-মোটরসাইকেল ও ভ্যানে ঝুঁড়ি ভরে ফুল নিয়ে বাজারে এসেছেন। এখানে আসা পাইকাররা সেসব ফুল কিনে নিচ্ছেন।
পহেলা ফাগুন উপলক্ষে গত দু’দিন ধরে ফুলের বাড়তি চাহিদা থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ফুল কিনছেন এই বাজার থেকে। একই সঙ্গে বেশি দাম পাওয়ায় চাষিরাও বাজারে দ্বিগুণ ফুল এনেছেন। সবমিলিয়ে উৎসবের এই মাসে আবারও ফুল-বেচাকেনা জমে ওঠায় চাষি কিংবা ব্যবসায়ী সবার মনে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
হাড়িয়া থেকে গদখালী বাজারে ফুল নিয়ে আসা চাষি খালেক মোড়ল বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় দুই বছর পরে ফুলের বেচাকেনা অনেক ভালো হচ্ছে।
ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, মহামারি করোনার কারণে ফুলের বাজার বসলেও গত কয়েক মাসে ভালো পাইকার মিলতো না, ফলে নামমাত্র দামেই ফুল বিক্রি করতে হতো।
পটুয়াপাড়া গ্রামের রিজাউল ইসলাম চার বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন। এখন গোলাপের দাম দ্বিগুণ। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আরও দাম বাড়বে। এ কারণে ফুল যাতে দেরিতে ফোঁটে সেজন্য গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখা হয়েছে। এজন্য বাড়তি তিন থেকে চার টাকা খরচ হচ্ছে। ভালবাসা দিবসকে টার্গেট করে সেই ফুল বিক্রি করতে পারলে সব খরচ উঠে লাভ হবে দ্বিগুণ।
গদখালীতে প্রথমবারের মতো টিউলিপ চাষ করেছেন পানিসারার ইসমাইল হোসেন। তার পাঁচশতক জমিতে ফুঠেছে বিভিন্ন রঙের ৭ প্রকারের টিউলিপ ফুল। তিনি জানান, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে তার জমিতে টিউলিপ ফুট শুরু করেছে। ভালোবাসা দিবসে এসব টিউলিপ বিক্রি করা হবে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি একাংশের সভাপতি আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন কারণে এবার ফেব্রুয়ারিতে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে এবার তিন দিবসে অন্তত ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হতে পারে।
তিনি আরও জানান, অসময়ের বৃষ্টিতে অনেক ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে সবধরণের ফুলের দাম দ্বিগুণ। দিবস যত এগিয়ে আসবে, ফুলের দামও তত বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
এমএমজেড