তালিকায় ফ্যাসিস্টের দোসর কর্মকর্তারাও

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

248Shares
facebook sharing button
তালিকায় ফ্যাসিস্টের দোসর কর্মকর্তারাও

যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিতে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে কেন্দ্র থেকে মাঠ প্রশাসনে। বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের দোসর হিসাবে চিহ্নিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ায় মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে একজন অবসরপ্রাপ্তকে পদোন্নতি এবং বিগত ১৫ বছরে বঞ্চিত বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা ফের পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গোটা প্রশাসনে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও অস্থিরতা। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।

এদিকে রোববার বঞ্চিত শতাধিক কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. নাসিমুল গণির সঙ্গে দেখা করে পদোন্নতি দাবি করে লিখিত আবেদন করেছেন। বিষয়টি তারা দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার যুগ্মসচিব পদে ১৯৬ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি দেয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচকে প্রধান্য দিয়ে এ পদোন্নতি বিবেচনা করা হয়। ওই ব্যাচে মোট কর্মকর্তা ৩৪৪ জন। এর মধ্যে পদোন্নতি পেয়েছেন ১৪৪ জন। শুধু ২৪তম ব্যাচের ২০০ জন কর্মকর্তা নিয়মিত পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। কোনো কারণ ছাড়াই বিগত সরকারের সময় উপসচিব হিসাবে পদোন্নতিবঞ্চিত প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা এবার যুগ্মসচিব হিসাবে পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। পদোন্নতিবঞ্চিতদের প্রশ্ন-আমরা কেন পদোন্নতিবঞ্চিত হলাম, তা প্রকাশ করতে হবে।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অতিরিক্ত সচিব নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) মো. এরফানুল হক যুগান্তরকে বলেন, ভুলে একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নামে জিও জারি হয়েছে। আমরা জিও সংশোধন করব। এছাড়া পদোন্নতিবঞ্চিতদের আবেদনের বিষয়ে এপিডি বলেন, তাদের আবেদন পেয়েছি। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দেবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পদোন্নতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে জানা যায়, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাবশালী উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের একান্ত সচিব (পিএস) ছিলেন উপসচিব আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ। তিনি স্বৈরাচার আমলে যেমন নিয়মিত পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন পেয়েছিলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও প্রথম দফায় কোনো বাধা ছাড়াই যুগ্মসচিব পদোন্নতি পেয়েছেন। তার ক্ষমতার উৎস নিয়ে অন্যদের মধ্যে কৌতূহল দেখা দিয়েছে। একইভাবে তৎকালীন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর পিএস মোহা. আমিনুর রহমানের পদোন্নতি নিয়েও সমালোচনা চলছে। পতিত সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব বিনা বাধায় যদি যুগ্মসচিব পদোন্নতি পেয়ে যান, তাহলে গোয়েন্দা প্রতিবেদন কেন প্রয়োজন-এমন প্রশ্নও করছেন কেউ কেউ।

লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা (উপসচিব) ড. চিত্রলেখা নাজনিন ২০২২ সালে আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হওয়ার রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ পান। তিনি সরকারের শীর্ষমহলে ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কাউকে পাত্তা দিতেন না। সেসময় রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক তাকে ‘স্যার’ সম্বোধন না করায় ওই শিক্ষককে অপদস্থ করেন। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে সরকারের উচ্চমহলের পরামর্শে তিনি ক্ষমা চেয়ে পার পান। ওই কর্মকর্তাও পদোন্নতি পেয়েছেন। একসময় জামালপুরের জেলা প্রশাসক ছিলেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সচিব (উপসচিব) মিজ শ্রাবন্তী রায়। বিগত সরকারের সুবিধাভোগী হওয়া সত্ত্বেও যুগ্মসচিব পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সুবিধাভোগী এসব কর্মকর্তার পদোন্নতির নেপথ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রভাবশালী আমলারাই ভূমিকা রেখেছেন। যে কারণে পদোন্নতি পেতে তাদের অসুবিধা হয়নি। শেরপুরের সাবেক ডিসি সাহেলা আক্তার, গাইবান্ধার সাবেক ডিসি মো. অলিউর রহমান, চুয়াডাঙ্গার সাবেক ডিসি মনিরা বেগমকে যুগ্মসচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক একেএম মনিরুজ্জামান, সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছিরের পিএস ড. মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল, ফরিদপুর সদরের সাবেক ইউএনও এবং বেয়াই মোশাররফের একান্ত অনুচর মো. জহিরুল ইসলাম, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নানের পিএস কামরুজ্জামান, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার পিএস ও সাবেক সরকারের হজ অফিসার আবুল হাসান, গোপালগঞ্চের সাবেক জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, ওএসডি উপসচিব ড. মাসুমা পারভীনকেও (তিনি অস্ট্রেলিয়ায় স্বামী-সন্তানসহ বাসবাস করেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে) যুগ্মসচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী সুবিধাভোগী জান্নাতুন নাঈম, মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী আ. লতিফ সিদ্দিকীর পিএস মুহাম্মদ আনিসুর রহমান, জয়পুরহাটের সাবেক ডিসি আফরোজা আক্তার চৌধুরী, মাগুরার সাবেক ডিসি অহিদুল ইসলাম, সৌদি আরব বাংলাদেশ দূতাবাসে দুই দফায় ৮ বছর শ্রম কাউন্সিলর মুহাম্মদ রেজা ই রাব্বি, পর্তুগালের কাউন্সিলর লিসবন পর্তুগাল লায়লা মুস্তাজেরী দীনাকে যুগ্মসচিব পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পদোন্নতির আদেশে ১৭০নং ক্রমিকে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা কামাল হোসেন এক বছর আগে অবসরে গেছেন। শিক্ষা ক্যাডারের অবসরে যাওয়া ওই কর্মকর্তার নামে পদোন্নতির জিও জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অবসরে গেলেও গভর্নমেন্ট এমপ্লিয়জ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (জেমস) তার পিআরএডের তারিখ ২০২৮ সালে লেখা রয়েছে। জেমস দেখেই তারা আদেশ জারি করেছেন।

messenger sharing button

twitter sharing button
whatsapp sharing button
print sharing button
copy sharing button

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here