তারেক-জোবায়দার অনুপস্থিতিতে মামলা নিষ্পত্তির পদক্ষেপ নিয়েছে ফ্যাসিবাদের অনুগত আদালত

 আমার দেশ
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবায়দার অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ চলার ঘোষণা

তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবায়দার অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ চলার ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিনিধি

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবায়দা রহমানকে পলাতক দেখিয়ে গেজেট প্রকাশের পর চার্জ গঠনের দিন ধার্য্য করেছে শেখ হাসিনার অনুগত আদালত। তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ চলবে এমন ঘোষণা দিয়ে আগামী ২৯ মার্চ চার্জ গঠনের জন্য দিন ধার্য্য করেছে ফ্যাসিবাদের সহায়ক বিচারক মো: নাআসাদুজ্জামান। তিনি ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের দায়িত্বে রয়েছেন।

২০০৭ সালের জানুয়ারিতে জরুরী আইন জারি করেছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমদ। তখন মূলত সেনা প্রধান মঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে রাষ্ট্র ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে ছিল। সেনাবাহিনীর পছন্দ অনুযায়ী গঠিত সরকার তখন সেনাবাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহন করত। জরুরী আইনের এই সরকারের সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সাবেক সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরীকে। তাঁকে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার দুবাই থেকে ফেরত নিয়ে সেনা প্রধান বানিয়েছিলেন।

সেনাবাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী তখন শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়াসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র অনেক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করেছিল হাসান মশহুদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন। কিন্তু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা একাধিক মামলায় চার্জ গঠন করে বিচার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে নেওয়া হয়েছিল তখন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় তথ্য উপাত্ত না থাকায় তখন বেশিদূর আগাতে পারেনি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

এক পর্যায়ে শেখ হাসিনার সাথে তাদের সমঝোতা হয় এবং তাঁকে কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার নামে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার। বিদেশে অবস্থানকালে নির্বাচনে বিজয়ের চুড়ান্ত নকশা হাতে পাওয়ার পর দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শেখ হাসিনা অংশ নেন একজন ওয়ারেন্টের আসামী হিসাবে। তাঁর বিরুদ্ধে তখন একটি গ্রেফতারি পরোয়া ছিল আদালত থেকে। কিন্তু এই গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল না করে বরং নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল শেখ হাসিনাকে। গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামী হিসাবেই শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন।

অথচ, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা বানোয়াট মামলায় শেখ হাসিনার নির্দেশে ফরমায়েশি রায় দিয়ে আটক রাখা হয়েছে। এখন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জরুরী আইনের সময়ে দায়ের করা বানোয়াট মামলা নিষ্পত্তির জন্য শেখ হাসিনা তড়িঘড়ি করছেন।

গত ১৯শে জানুয়ারি আদালত এই মামলায় তারেক ও জোবায়দাকে ৬ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাজির হওয়ার জন্য একটি গেজেট প্রকাশ করতে সরকারকে নির্দেশ দেন।

গেজেটের উদ্ধৃতি দিয়ে বিচারক বলেন, এর আগে তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা দেওয়া হলেও গ্রেপ্তার এড়াতে তারা বিদেশে চলে যাওয়ায় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

বিচারক পুলিশকে তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন এবং পুলিশ তা করতে ব্যর্থ হয়। তাদের উপস্থিতির সুযোগ না থাকায় তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে বিচার চলবে বলে আদেশে বলা হয়েছে।

২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কাফরুল থানায় তারেক রহমান, তাঁর স্ত্রী জোবায়দা ও সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ২ কোটি ১৬ লাখ টাকার তথ্য গোপনের সাজানো অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন সংস্থা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২০০৯ সালের ৩১শে মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

তবে ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম প্রত্যাহার করা হয়।

উল্লেখ্য, তারেক রহমান ও জোবায়দা ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে রয়েছেন।