‘মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ কর্তৃক মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ছাত্রকে থানায় দেওয়া ও ওই ছাত্রকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার পথে সালেহউদ্দিন-আহনাফের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে এবং হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে’ আজ বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্র অধিকার পরিষদ৷ সেখানে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম প্রাধ্যক্ষকে দ্রুত পদত্যাগ করার আহ্বান জানান৷
বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘সালেহউদ্দিন সিফাত ও আহনাফ সাইয়্যেদ খানের গায়ে যারা হাত দিয়েছে, সেই হাত পুড়ে যাবে৷ ছাত্রলীগ একটি দানবীয় মেশিনে পরিণত হয়েছে। যে শিক্ষার্থীদের সন্তানের মতো স্নেহ করার কথা, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা করার কথা, সেখানে শিক্ষকেরা ছাত্রদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করছেন! এটা তাঁদের কী ধরনের মানবিকতা, কী ধরনের গণতান্ত্রিক চর্চা? আমরা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করছি৷’
সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, সালেহউদ্দিন সিফাত ও আহনাফ সাইয়্যেদ খানের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে৷ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া হল প্রশাসনের দায়িত্ব৷ সেটি দিতে ব্যর্থতার দায় নিয়ে জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষকে দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে৷ তিনি পদত্যাগ না করলে ছাত্র অধিকার পরিষদ লাগাতার কর্মসূচি দেবে৷
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ভুক্তভোগী ছাত্র মেফতাউল মারুফ, ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আকরাম হুসাইন, সাহিত্য সম্পাদক জাহিদ আহসান ও নাট্য সম্পাদক নুসরাত জাহান বক্তব্য দেন৷
ছাত্র অধিকার পরিষদের ডাকা সমাবেশে অংশ নিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্র মেফতাউল মারুফ বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ ছাত্র, যে কখনো চিন্তাও করতে পারেনি যে কোনো ধরনের ট্যাগ দিয়ে আমাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হবে৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি একটি রাজনৈতিক আলাপ তুলেছিলাম, যার সারমর্মটা এ রকম—কোনো সরকারের আমলে যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, সেটি ঘটার পেছনে সেই সরকারের দায় আছে কি না, তার পেছনে ব্যাপক আলোচনা থাকতে পারে৷ এটা একটা পলিটিক্যাল ডিসকোর্স৷ এই আলোচনার ভুল ব্যাখ্যা কোনোভাবে আমাদের চ্যাটিং গ্রুপ থেকে হল শাখা ছাত্রলীগের কাছে যায়৷ তারা এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং ভুল ব্যাখ্যা করে আমাকে হল প্রশাসনের কাছে নিয়ে যায়৷ দুর্ভাগ্যজনকভাবে হল প্রাধ্যক্ষ কোনো ধরনের বাছবিচার না করে ছাত্রলীগের প্রোপাগান্ডাকেই গ্রহণ করে নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডির মাধ্যমে আমাকে থানায় সোপর্দ করেন৷’
শারীরিক নির্যাতন না হলেও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানান মেফতাহুল৷ নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই অন্যায়ের বিচার কে করবে, সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আমার বিভাগের (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) সম্মানিত চেয়ারম্যান তাসনীম আরেফা সিদ্দিকী ও শিক্ষার্থী-উপদেষ্টা মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম আমার খোঁজখবর নিয়েছেন৷ পরে আমার বন্ধু এবং সিনিয়র-জুনিয়ররা আমার সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন ও পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ তাঁদের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞতা জানালেও শেষ হবে না৷ অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও রাজনৈতিক কর্মীরা বিষয়টি তুলে ধরেছেন৷ পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী পেয়েছে যে আমার সাধারণ মতামতটি কোনোভাবে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক ছিল না, যেটাকে আমাদের হল প্রশাসন রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে প্রচার করে আমাকে পুলিশে সোপর্দ করেছে৷’
যা বললেন প্রাধ্যক্ষ
এদিকে পদত্যাগের দাবি উঠলেও এ নিয়ে তাঁর কিছু বলার নেই বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন৷ আজ সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার পদত্যাগ চাওয়ার অধিকার তাঁদের আছে৷ এখানে আমার কিছু বলার নেই৷ আমি যেটা করেছি, আমার কাছে মনে হয় যে সঠিক পথেই কাজটা করেছি৷ সংশ্লিষ্ট তিনজন শিক্ষককে পাঠিয়ে বিষয়গুলো দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ তাঁর (মেফতাহুল) বিরুদ্ধে অভিযোগটা এখনো তদন্তাধীন আছে৷’ তিনি দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ একটি সংগঠনের (ইসলামী ছাত্রশিবির) সঙ্গে এই ছাত্রের সম্পৃক্ততা আছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই৷
মেফতাহুল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নন বলে জানান প্রাধ্যক্ষ৷ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকেরা যখন (গতকাল) তার কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন, সে (মেফতাহুল) কোনো তথ্য দিয়ে সহায়তা করেনি৷ কথাবার্তা এমন ছিল যে সে কোনো বিষয় লোকানোর চেষ্টা করছে।’