ঢাকায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, রাজশাহীতে পদযাত্রা পণ্ড

BBC Bangla 25 May 2023
রাজশাহী নগরে বিএনপির জেলা কার্যালয়ের বাইরে পুলিশের বিশেষ বাহিনীর কড়াকড়ি।

ছবির উৎস,BNP MEDIA CELL

ছবির ক্যাপশান,রাজশাহী নগরে বিএনপির জেলা কার্যালয়ের বাইরে পুলিশের বিশেষ বাহিনীর অবস্থান ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি মঙ্গলবার দেশব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করলেও ঢাকার ধানমন্ডিতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে পুলিশ অনুমতি না দেয়ায় রাজশাহীতে পদযাত্রা করতে পারেনি দলটির নেতাকর্মীরা। দলীয় কার্যালয় ছিল পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সরকার গত ১৪ বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করছে। একে সরকারের ‘স্বৈরাচারী আচরণ’ উল্লেখ করে তারা তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে এবং বলেছে আন্দোলন থেকে তারা পিছু হটবে না।

গত ১৯শে মে রাজশাহীর এক সমাবেশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রীকে কবরস্থানে পাঠানোর ‘হুমকি’ দেওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনও তোলপাড় চলছে।

ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা দায়েরের খবর পাওয়া গিয়েছে। এ নিয়ে পুরো রাজশাহী নগর শহরজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর মালোপাড়ায় বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে দলটির পদযাত্রা বের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দলের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে পুরো কার্যালয় ঘিরে পুলিশের বিশেষায়িত টিম সিআরটিকে কড়া অবস্থান নিতে দেখেন।

এসময় বিপুলসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি জলকামান এবং আরমার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার-এপিসি গাড়ি দিয়ে সড়কে ব্যারিকেড দিতে দেখা যায়।

বিএনপি নেতাদের দাবি, তাদের কাউকে কার্যালয়ের ভেতর কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এমনকি বাইরেও নেতাকর্মীদের জমায়েত হতে দেয়া হয়নি। নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচলও।

বিপুলসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি জলকামান ও এপিসি গাড়ী দিয়ে সড়কে ব্যারিকেড দেয়া হয়।

ছবির উৎস,BNP MEDIA CELL

ছবির ক্যাপশান,বিপুলসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি জলকামান এবং আরমার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার-এপিসি গাড়ি দিয়ে সড়কে ব্যারিকেড দেয়া হয়

পুলিশ বলছে, এই কর্মসূচিকে ঘিরে একটি গোষ্ঠী নাশকতার পরিকল্পনা করছে এমন তথ্য থাকায়, সেইসাথে সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে যেন কোন প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয় এজন্য তারা এতো কড়া অবস্থানে গিয়েছেন।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “গত সপ্তাহে বিএনপির জেলা আহ্বায়ক যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটার প্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে। এজন্য আমাদের আশঙ্কা ছিল যে বিএনপি নেতারা যদি পার্টি অফিসে আসে তাহলে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে রাজশাহীতে নির্বাচন চলমান অবস্থায় আছে। যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোন অবনতি না ঘটে এজন্যই আমরা এই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ”

পদযাত্রার অনুমোদন পেতে গত ২০শে মে পুলিশ কমিশনার বরাবর চিঠি দেয় জেলা বিএনপি। সোমবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে রাজশাহী নগরীতে যেহেতু নির্বাচনের সময় চলছে, তাই নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী কোন কর্মসূচি করা যাবে না।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ সিটি নির্বাচন আর জেলা আহ্বায়কের বক্তব্যের অজুহাত দিয়ে পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের দলীয় কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, “পদযাত্রার অনুমতি না পেয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে সকালে পার্টি অফিসে গিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। কিন্তু গিয়ে দেখি পার্টি অফিসে কড়া পাহারা। বলা হল যে কেন্দ্র থেকে নাকি বলা হয়েছে জেলা আহ্বায়ক গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত প্রোগ্রাম করতে দেয়া হবে না।”

“আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি যে এটা কোন শর্ত হতে পারে না। কারও বক্তব্য শিষ্টাচার বহির্ভূত কিনা সেটা বিচার করবে আদালত। কিন্তু এজন্য তো তারা চাপ দিতে পারে না। আজকের পরিস্থিতিতে রাজশাহীর মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার হরণ করার ক্যাপাসিটি তো সরকারের নাই, ” বলেন তিনি।

বিকেলে বিএনপি নেতারা আরএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে তাদের অভিযোগের কথা জানান।

আরএমপি কমিশনারের উদ্ধৃতি দিয়ে মি. হোসেন বলেন, “কমিশনার আমাদের জানিয়েছেন যে তারা কেন্দ্র থেকে প্রচুর চাপে আছে। জেলা আহ্বায়ক গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত তারা কিছু করতে পারবেন না। বিভিন্ন এজেন্সি এ বিষয়ে কাজ করছে।”

এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে বিক্ষোভ করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

ওই বক্তব্যকে ঘিরে বিএনপির এই নেতা বলেন, ” প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে জেলা আহ্বায়ক যে বক্তব্য দিয়েছে সেটি সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত মন্তব্য।”

বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পদযাত্রায় ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা।

ছবির উৎস,BNP MEDIA CELL

ছবির ক্যাপশান,বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পদযাত্রায় ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার সায়েন্সল্যাব মোড় এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলমসহ আরও কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন পদযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেলের সামনের রাস্তা থেকে পদযাত্রা শুরু করে বিএনপি নেতারা। ঝিগাতলা ও সিটি কলেজ পেরিয়ে ধানমন্ডি তিন নম্বরের মোড়ে এসে পদযাত্রা শেষ হয়।

এই শেষ পর্যায়ে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাদের হঠাৎ সংঘর্ষ বেধে যায়।

পুলিশের দাবি- বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের ওপর ইট পাটকেল ছুড়তে থাকলে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকাগুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

বিএনপি নেতারা এসময় রাস্তায় থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ও বাস ভাঙচুর করে বলে পুলিশ অভিযোগ করে।

পুলিশের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মাসুম জানান, “কর্মসূচি শেষে যখন সিনিয়র লিডাররা চলে যান, তখন মিছিলের পেছন থেকে কয়েকজন ব্যানার থেকে লাঠি খুলে হঠাৎ করে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়, রাস্তা থেকে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। বেশ কয়েকটা গাড়ি ভাঙচুর করে। একটা বিআরটিসি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমরাও চিন্তা করতে পারিনি যে এরকম হামলা হতে পারে। তখন আমরা আত্মরক্ষায় পাল্টা প্রতিরোধ করি। আমরা কয়েকজনকে আটক করেছি।”

আরও পড়তে পারেন

অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের দাবি পুলিশ শেষ পর্যায়ে তাদের ব্যাপারে হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ওই পদযাত্রায় ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসিরুদ্দিন অসীম। তিনি বলেন, “যখন আমরা ফিরে যেতে শুরু করেছি সেসময় যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে পুলিশ তাড়া দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুরু থেকেই পুলিশের মধ্যে একটা অ্যাকশন নেয়ার আচরণ ছিল। আক্রমণাত্মক বলতে পারেন। তারা তো উপরের নির্দেশ ছাড়া কিছু করেন না। গণতান্ত্রিকভাবে কেউ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করলে তাদেরকে বাধা দেয়া হলে উত্তেজনার সৃষ্টি তো হবেই।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের যে পর্যন্ত পদযাত্রা হওয়ার কথা তার আগেই পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে দেয়। আমরা হাজার হাজার নেতাকর্মী চাইলে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে যেতে পারতাম। তারপরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা শেষ করি। কিন্তু তারপরও সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়।”

এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “এটা তো সরকারের স্বৈরাচারি চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তারা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারে আগেও যেমন বাধা দিয়েছে, এখনও তাদের পুলিশ বাহিনী ও কর্মীদের দিয়ে বাধার সৃষ্টি করছে। কারণ তারা আইন কানুনের তোয়াক্কা করে না। এজন্য তারা গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করছে। ”

দেশব্যাপী বিএনপির বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরপাকড় ও নির্যাতন করা হচ্ছে এমন অভিযোগ এলেও তারা আন্দোলন থেকে পিছু হটবেন না বলে তিনি জানান।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবাই সরকারের রূঢ় ও অগণতান্ত্রিক আচরণের সাথে পরিচিত। তাই তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখছে। এসব বাধায় তারা ক্ষুব্ধ হবে, কিন্তু আন্দোলন থেকে পিছু হটবে না, এই আত্মবিশ্বাস আছে। কারণ গত ১৪ বছর ধরে আমাদের নির্যাতন, গ্রেফতার করেও দমন বা দুর্বল করতে পারে নাই। পারবেও না। ”