- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৮ নভেম্বর ২০২২, ০৩:১৭, আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২২, ০৪:২৮
বিশ্বকাপের প্রথম বড় ম্যাচে সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি ও স্পেন মধ্যে ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। ‘ই’ গ্রুপের খেলায় কাতারের আল বায়ত স্টেডিয়ামে রাত ১টায় মুখোমুখি হয় স্পেন ও জার্মানি। প্রথম ম্যাচে জাপানের কাছে হেরে যাওয়া সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির কাতার বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়ে যাবার সম্ভাবনা ছিল আজ। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে কোস্টারিকাকে ৭ গোলে হারানো স্পেন জয় পেলেই পৌঁছে যেত শেষ ষোলতে।
প্রথমার্ধে আক্রমণে এগিয়ে ছিল স্প্যানিশরা। দ্বিতীয়ার্ধে এসে তিকি-তাকার ঝড় সামলে নিজেদের গুছিয়ে নেয় চারবারের শিরোপাজয়ীরা। তবে এরই মাঝে খেয়ে ফেলে ধাক্কা, বদলি হিসেবে নেমে গোল করে ফেলেন মোরাতা। তবে কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলেছে জার্মানি, তাদের হয়ে গোল করা নিকোলাস ফুলক্রুগও ছিলেন বদলি।
ম্যাচের শুরু থেকেই বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল স্পেন। ম্যাচের ৬ মিনিটেই গোলের সুযোগ তৈরি করে দলটি। পেড্রি, গাবি এবং অ্যাসেন্সিওর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দারুণ একটি সুযোগ তৈরি হয়। লেফট ফ্ল্যাংকে থাকা ড্যানি অলমো শট নেন তাদের বাড়িয়ে দেওয়া বলে। সেই বুলেট গতির শট বাঁচিয়ে জার্মানিকে স্বস্তি দেন জার্মান গোলকিপার ম্যানুয়াল নয়্যার।
ধীরে ধীরে বল পজেশন ফেরত পেতে শুরু করে জার্মানি। ২২ মিনিটের মাথায় আবারো আক্রমণে যায় স্পেন। বুসকেটস বল বাড়িয়ে দেন মাঠের বামে থাকা জর্ডি আলবাকে, তবে বেশ দূর থেকে আলবার ডান পায়ে নেয়া শটটি চলে যায় বারের ওপর দিয়ে।
দু’ মিনিট পরে অবশেষে পালটা আক্রমণের সুযোগ পায় জার্মানি। লুজ বল পেয়ে শট নিয়েছিলেন জার্মান উইংগার গেন্যাব্রি। তার বাম পায়ে নেয়া শটটি বেরিয়ে যায় বারের পাশ দিয়ে। বড় রক্ষা পায় স্পেন।
৩২ মিনিটের মাথায় লেফট ফ্ল্যাংক ধরে ডানি অলমোর বাড়ানো পাস রিসিভ করেন ফেরান তোরেস। গোলবারের সামনে খুব সুবিধাজনক অবস্থান থেকে শট নিলেও তা বারের ওপর দিয়ে চলে গেলে লিড নেয়ার সহজ সুযোগ মিস করে স্পেন। কিছুক্ষণ পর আবারো ক্লোজ রেঞ্জ থেকে শট নিতে যান ফেরান তোরেস। তবে তার আগেই এগিয়ে এসে শটটি ব্লক করে দেন জামাল মুসিয়ালা।
প্রথমার্ধ শেষের ঠিক আগে, ৪০ মিনিটের সময়ে কিমিখের ফ্রিকিক থেকে হেডে গোল করেন রুডিগার। কিন্তু ভিএআরে চেকিং-এ অফসাইড বলে প্রমাণিত হলে গোলটি বাতিল হয়ে যায়। ফলে ০-০ স্কোরবোর্ডেই দু’দল বিরতিতে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ফেরান তোরেসের পরিবর্তে মাঠে নামেন আলভেইরো মোরাতা। এবারে প্রথমেই আক্রমণে যায় জার্মানরা। স্প্যানিশ গোলকিপার উনাই সিমনের পা থেকে বল পেয়ে যান ইলকায়ে গুন্ডোগান। তিনি বল বাড়িয়ে দেন জশুয়া কিমিখকে। বক্সের ভেতর থেকে কিমিখ শট নিলেও শটটি সেইভ করে দলকে রক্ষা করেন সিমন।
৬০ মিনিট সময়ে একটি ফ্রি কিক পায় জার্মানি। তবে সেই ফ্রি কিক কাজে লাগাতে পারেননি জশুয়া কিমিখ। বরং দু’মিনিট পরেই জর্দি আলবার বাড়ানো বলে গোল করে স্পেনকে লিড এনে দেন ‘সুপার সাব’ আলভেইরো মোরাতা। নিকলাস সুলে তাকে আটকানোর চেষ্টা করলেও নয়্যারকে পরাস্ত করে জালে বল জড়ান তিনি। তুমুল উল্লাসে মেতে ওঠে স্প্যানিয়ার্ডরা। কিছুক্ষণের ব্যবধানেই আরেকটি গোলের সু্যোগ তৈরি হলেও কাজে লাগাতে পারেননি অ্যাসেন্সিও।
এরপরে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন আনেন হান্সি ফ্লিক। উঠে যান টমাস মুলার, ইলকায়ে গুন্ডোগান, থিলো কেহরার। খেলতে নামেন নিকলাস ফুলক্রুগ, লেরয় সানে, লুকাস ক্লোস্টারম্যান। এবারে মরিয়া হয়ে আক্রমেণর চেষ্টা করে জার্মানি। তাতে অবশ্য লাভ হচ্ছিল না। এই যেমন ৭২ মিনিটে জামাল মুসিয়ালা ডান প্রান্ত ঘেঁষে বল নিয়ে দৌঁড়ে ফুলক্রুগকে পাস দেয়ার আগেই বল নষ্ট করে দেন রড্রি।
কয়েক মিনিট পর আবারো চমৎকার একটি গোলের সুযোগ আসে জার্মানির সামনে। কিন্তু জামাল মুসিয়ালার শট রুখে দেন উনাই সিমোন। অবশেষে ৮৩ মিনিটের মাথায় মুসিয়ালার পা থেকে বল নিয়ে গোল করে জার্মানিকে সমতায় ফেরান জার্মানির হয়ে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে নামা নিকলাস ফুলক্রুগ।
৮৭ মিনিটের মাথায় ডেভিড রাউমের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন নিকো স্ক্লোটারব্যাক। তিনি মাঠে নামার কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই আবারো সুবিধাজনক অবস্থান থেকে মোরাতার গোল করার আশঙ্কা জেগে উঠলে দারুণভাবে সেই বল ক্লিয়ার করে জার্মানিকে বাঁচিয়ে দেন তিনি। অতিরিক্ত সময়ে গোল করে দলকে জেতানোর সুযোগ পেয়েছিলেন লেরয় সানে। তবে তিনি গোল করতে পারেননি। ফলে ড্র করেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে জার্মানিকে।
কাতার বিশ্বকাপে প্রথম পয়েন্টের দেখা পেয়েছে জার্মানি। যদিও সংখ্যাটা ‘এক’, তবে তাতেও কেটেছে শঙ্কার কালো মেঘ। তবে এই ড্রয়ে জমজমাট হয়ে গেছে গ্রুপ ই -এর লড়াই। শেষ দিনেই নিশ্চিত হবে কে যাচ্ছে শেষ ষোলতে, কিংবা কে উঠছে দেশের বিমানে। তবে জার্মানির লক্ষ্য একটাই, জিততে হবে; জিততে হবে বড় ব্যবধানে।