ডুগডুগি কন্যা এবং রগকাটা কন্যার একশন
===========================
শেখ মুজিবের গায়ের চামড়া দিয়ে তিনি একসময় ডুগডুগি বাজানোর খায়েশ করেছিলেন । এখন প্রতিমুহূর্তে সেই মুজিব নামটি জপেন। আশে পাশের অন্যদের চেয়ে মনে হয় একটু বেশিই জপেন । ৬৯ এর সেই অগ্নিকন্যা ৭২ এ এসে হয়ে পড়েন ডুগডুগি কন্যা । মুজিব সরকারকে রীতিমত তটস্থ করে রেখেছিল এই ডুগডুগি কন্যা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
ডুগডুগি কন্যা আবার নতুন করে ডুগডুগি বাজানো শুরু করেছেন । মনের সমস্ত ঘৃণা ও কন্ঠের সমস্ত শক্তি মিশিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছেন । অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশা মোরশেদা বেগম নামের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছেন। ডুগডুগি কন্যার সাথে সাথে দেশ পেয়ে গেছে এক রগকাটা কন্যা ।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে দেশের পুরো ছাত্র সমাজ । আক্ষরিক অর্থেই তাদের পিঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে । দেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি । উন্নয়নশীল দেশের অগ্রিম তকমা পেয়ে নর্তনকুর্দনে এই পাঁচ কোটি বেকারের কথা আমরা ভুলে গিয়েছি । এই পাঁচ কোটির মধ্যে একটা বিরাট অংশ শিক্ষিত বেকার , যাদের চোখ কান খোলা রয়েছে । রাষ্ট্রীয় লুটপাটের সমস্ত খবর এদের নখ দর্পনে । এদের দুর্ভাগ্যের মূল কারণগুলো নিজেদের কাছে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে।
ক্ষমতায় আসার আগে আগে ঘরে ঘরে চাকুরি দেওয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল । ক্ষমতায় এসে লীগ ছাড়া বাকিদের চাকুরির পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ।এই বিষয়ে এখন আর রাখঢাক বলে কিছু নেই । ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কেউ সরকারের চাকুরি পাবে না এই কথা এইচটি ইমাম সহ আরো অনেকে বুক ফুলিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন । ছাত্রলীগের সমাবেশে তিনি সরাসরি বলেছেন , ‘ লিখিত পরীক্ষা পাশ করে এসো , ভাইভা আমরা দেখবো । ‘
মরার উপর খাড়ার ঘা হিসাবে কোটা সিষ্টেম উদয় হয়েছে । মেধার চেয়ে কোটার সংখ্যা বেশি এবং তা আজ বাড়তে বাড়তে ৫৬% এ এসে দাঁড়িয়েছে ! এর ফলে জনগণের এক বিরাট অংশ নিজেদেরকে বন্চিত মনে করছে ।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মুক্তিযাদ্ধাদের নাতি পুতিদের কোটা নিয়ে । এখানে চেতনার আবেগ জড়িয়ে ফেলে সকলের মুখ বন্ধ করে ফেলা হয়েছে । যে মুখ খুলে কিছু বলবে , সেই রাজাকারের বাচ্চা হয়ে পড়বে । ডুগডুগি কন্যা ও রগকাটা কন্যারা টের পাননি যে দেশের ৯৭ বা ৯৮ ভাগ মানুষ রাজাকারের বাচ্চাদের দলে পড়ে গেছে ।
তদানিন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি যে অর্থনৈতিক বৈষম্য শুরু করেছিল – সেই বৈষম্যই এদেশের মানুষকে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষীপ্ত করে তুলেছিল । সেই বৈষম্য দূর করে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠাই মুক্তিযোদ্ধাদের মূল স্বপ্ন ছিল । অথচ আজ তাদের নামেই নতুন বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে । তাছাডা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে মতলববাজরাই এই সুযোগটি বেশি গ্রহন করছে । এখানেও খায় দায় রোস্তম , মোটা হয় আব্দুল অবস্থা ।
এই ভাবে নিজেদের সন্তান সন্ততিদের জন্যে কোটা সংরক্ষণের জন্যেই এই মানুষগুলো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন নি । মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান সন্ততি গণ পঙ্গু কিংবা পিছিয়ে পড়া কোনো জনগোষ্ঠি নহেন । এই ধরনের অনুগ্রহ দেখিয়ে বরং মুক্তিযাদ্ধাদের অবমাননা করা হচ্ছে । এই ভাবনা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে খাটো করছে , তাদের আত্মত্যাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে ,
একটা আত্মকেন্দ্রিকতার কোঠরে বন্দি করে ফেলা হচ্ছে ।
কোটা সিষ্টেমের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের দেশটিকে
মেধাহীন করে ফেলা হচ্ছে । নতুন প্রজন্ম ৭২-৭৫ সালে রক্ষীবাহিনী দেখে নাই , লাল বাহিনী দেখে নাই । তাদের জন্যে সেই সময়ের পরিস্থিতি অনুধাবনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে । ছাত্রলীগ আর গোপালিশ বাহিনী একাকার হয়ে রক্ষীবাহিনী হয়ে পড়েছে ।
আশার কথা হলো , এই গণজোয়ারকে থামানো কিংবা বিভ্রান্ত করা সরকারের পক্ষে কঠিন হবে । সাগর-রুনী হত্যার বিরুদ্ধে সৃষ্ট আন্দোলনের মত এখানে কোনো ইকবাল সোবহান মার্কা নেতৃত্ব আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়বে । স্বত:স্ফুর্ত ভাবে সৃষ্টি হওয়া নেতৃত্ব আপোষ করা মাত্রই নেতৃত্বের সারি থেকে ছিটকে পড়বে । নতুন নেতৃত্ব দ্রুত সেই স্থান দখল করে নিবে ।
সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে , ‘ আসিতেছে শুভ দিন, দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ। ‘