ড. আহসান এইচ মনসুর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) চালুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আইএমএফের ঋণ, মূল্যস্ফীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা, রেমিট্যান্স, পুঁজি পাচার, হুন্ডি, অর্থনীতিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব ও আর্থিক খাতের নানা দিক নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম
আইএমএফের কাছ থেকে যদি ঋণের পরবর্তী কিস্তিগুলো পেতে চাই, তাহলে ডিসেম্বর নাগাদ আমাদের রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে হবে। সেপ্টেম্বরে আমাদের ২ বিলিয়ন ডলার কমে ১৭ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে, তাহলে আমরা কি ডিসেম্বরে রিজার্ভটাকে আইএমএফ স্ট্যান্ডার্ডে নিয়ে যেতে পারব? যদি না পারি সেক্ষেত্রে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাব?
প্রধানত আমি বলব যে সেপ্টেম্বরের টার্গেট হচ্ছে ২৫ বিলিয়নের বেশি, যে সময়টা এরই মধ্যে পার হয়েছে। বর্তমানে আমাদের লেভেল হচ্ছে ২০ বিলিয়নের নিচে বা কাছাকাছি। এক্ষেত্রে আমাদের কিন্তু জুন, সেপ্টেম্বরেরটা হাতছাড়া হয়েছে। তাই ডিসেম্বরেরটা অর্জন করার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। কাজেই আমাদের এখন টার্গেট কমিয়ে ফেলতে হবে, এটা আলোচনা সাপেক্ষেই করতে হবে এবং পাশাপাশি কেন পর পর আমরা দুটি সেশন হাতছাড়া করেছি, এটা নিয়ে কথা বলতে হবে। পরবর্তী সময়ে আমরা এটা বাড়াব কীভাবে? এ ব্যাপারও আলোচনা করতে হবে। আমাদের এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য চেষ্টা রাখতে হবে। এভাবে মিস করে বসে থাকলে কিছু হবে না। যেহেতু এখন আমরা ২০-এ আছি, ডিসেম্বর নাগাদ এটিকে ২২-এ নিতে পারব কিনা। আমাদের টার্গেট নিতে হবে আমরা যেন এর বেশি অর্জন করতে পারি। তবে বর্তমান সময়ের চেয়ে যদি কমে ১৫ বিলিয়নে নেমে আসে, তাহলে কীভাবে হবে? এ বিষয়ে অবশ্যই আইএমএফের সিরিয়াস কনসার্ন থাকবে। একটা সিরিয়াস ডিশকাশনের মাধ্যমে এ পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারের ভূমিকা নির্ধারণ করতে হবে। সরকার হয়তোবা এখন ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চাইবে যেহেতু সামনে নির্বাচন আছে। এক্ষেত্রে আইএমএফ সরকারের কথায় সাড়া দেবে কিনা এখনই বলা যাচ্ছে না, কারণ নির্বাচনের পর সরকার অপরিবর্তনীয় থাকবে কিনা এটাও একটা প্রশ্ন। যদি নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হয় তাহলে তারা তাদের মতো অর্থনৈতিক নীতিমালা তৈরি করবে। তারা আগের সরকারের নীতিমালা অনুসরণ নাও করতে পারে। হয়তোবা এ কারণে আইএমএফ এখন কোনো চুক্তিতে নাও যেতে পারে। সুতরাং, আমার মনে হয় এখন আইএমএফ নতুন করে কোনো চুক্তিতে যাবে না। অর্থটা আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে পেতেও পারি, নাও পেতে পারি।
যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের যে রাজনৈতিক টানাপড়েন চলছে, এটি কি রফতানিতে কোনো প্রভাব ফেলবে?
এখন পর্যন্ত এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। আশা করি যে আমাদের রফতানিতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। আমাদের আশা নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়। সেটা যাদের চাপেই হোক। এটা যেন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয় এটাই হচ্ছে আমাদের কথা। আমি আশা করব এমন একটি পরিবেশ যেন সৃষ্টি হয় যেখানে জনগণের সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হতে পারে।
আপনি কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়েছিলেন। সেখানে মূল্যস্ফীতি কমানোর পরামর্শ দিলেন। মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ওপর কেন জোর দিলেন?
পৃথিবীর সব দেশেই বলা হয় যে অর্থনীতিতে ম্যাক্রো ইকোনমিক স্ট্যাবিলিটি (সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা) হারিয়ে ফেলার মূল উপাদান হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। এটিকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে কিন্তু সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা থাকবে না। এতে স্থিতিশীলতা যদি না থাকে তাহলে নানা সমস্যা হয়। প্রথমত, মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি অভিঘাত করে দরিদ্র, মধ্যম ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের ওপর। এটা দরিদ্র শ্রেণীকে আরো দরিদ্র এবং ধনী শ্রেণীকে আরো ধনী করে। অর্থাৎ আয়বৈষম্য বাড়িয়ে তোলে। সামাজিক বৈষম্য আরো প্রকট রূপ ধারণ করে, যা কোনো দেশের জন্য ভালো নয়। দুই নম্বর বিষয় হচ্ছে এটা বিনিয়োগবান্ধবও নয়। কারণ যখন মূল্যস্ফীতি বেশি হয় এটাকে ম্যাক্রো ইকোনমিক আনস্ট্যাবিলিটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে বিনিয়োগের নিরাপত্তা থাকবে না, অর্থনীতিতে ধস নামতে পারে ইত্যাদি শঙ্কা থাকে। কেন সেই শঙ্কা? কারণ মূল্যস্ফীতি বাড়লে ডলারের দাম বাড়তে থাকে, টাকার অবমূল্যায়ন ঘটে। আমরা সেটি দেখেছি। অবমূল্যায়ন হলে বাজার স্থিতিশীল হবে না। জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকবে। মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠবে। স্থিতিশীল পরিবেশ না থাকায় বিনিয়োগ কমে যায়। এ অবস্থায় একটি দেশকে স্থিতিশীল দেশ হিসেবে মনে করতে মানুষ দ্বিধাগ্রস্ত হয়। যে কারণে মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমিয়ে আনাটা জরুরি।
কভিডের সময়ও তো মূল্যস্ফীতি এত ভয়াবহ ছিল না। এখন কেন?
কভিডকালে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি মোটামুটি খুবই কম ছিল। পরবর্তী সময়ে কিন্তু এটা বিশালভাবে বেড়ে যায়। মূল কারণ কিন্তু একটাই মুদ্রাস্ফীতি। কারণ কভিডের সময় অনেক বেশি অর্থ ছাপিয়ে বেশির ভাগ দেশে জনগণকে সহায়তা দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশেও করা হয়েছে। যখন সহায়তা দেয়া হয়েছে, তখন রাজস্ব কিন্তু বাড়েনি। টাকা ছাপিয়ে বিভিন্নভাবে এ সহায়তা দেয়া হয়েছে। তখন মানুষের হাতে টাকা চলে আসে, বেশি টাকা এলেও সম্পদ তো একই আছে। এতে যা হয় দাম বেড়ে যায়। এটি প্রতিরোধ করার জন্য যে ধরনের পলিসি সাধারণত নেয়া হয় সেটা হচ্ছে মনিটরি পলিসি। অর্থনীতিতে বলাই আছে, মূল্যস্ফীতি হয়ই মুদ্রানীতির কারণে। কাজেই মুদ্রানীতিকে আমাদের ঠিক করতে হবে। এজন্য ইন্টারেস্ট পলিসিকে কঠোরভাবে কাজে লাগাতে হবে। সেটা ভারত করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করেছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন করেছে। যেসব দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে সেসব দেশই করেছে। শ্রীলংকা করেছে, কিন্তু আমরা সেটা করিনি। শ্রীলংকার পলিসি রেট সাড়ে ১৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, পরে সেটি কমিয়ে আনা হয়েছে। আমরা সেটা করিনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এনেছে, আমরা কিন্তু এখনো ঊর্ধ্বমুখী।
দেড় বছর ধরে আমাদের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে আছে। কেন আমরা কমাতে পারলাম না?
ওই যে বললাম, মূল্যস্ফীতি কমাতে আমরা কোনো পলিসি মেজার গ্রহণ করিনি। আরো কিছু পারিপার্শ্বিক কারণ আছে। যেমন আমাদের এক্সচেঞ্জ রেট ডিভ্যালু করা হয়েছে, আমরা টাকার মান ধরে রাখতে পারিনি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধটা শুরুতে একটা ফ্যাক্টর ছিল, এখন আর সেটা ফ্যাক্টর নয়। এখন পৃথিবীব্যাপী সাধারণ পণ্যের দাম কমে আসছে, যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব আগের চেয়ে কমে আসছে। বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি গড়ে কমে এসেছে, কিন্তু আমাদের দেশে অনেক বেশি। কারণ আমরা অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সেভাবে করতে পারিনি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো রেট বাড়াল, ব্যাংকের সুদহার বাড়াল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে কি সঠিক ও সময়োচিত বলে মনে করেন?
সম্প্রতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সঠিক। তবে এটুকুই বলব, এখন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা এক-দেড় বছর আগে শুরু হলে ভালো হতো। এটি ধাপে ধাপে তিন, চার, পাঁচবার বাড়ানো যেতো এবং বাড়ানোর পর এর প্রভাব অ্যাসেস (মূল্যায়ন) করা যেতো। তাহলে বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভবপর হতো। সেন্ট্রাল ব্যাংকাররা এখন একটা নীতি অনুসরণ করেন। তাদের যদি প্রশ্ন করেন, সুদহার কতখানি বাড়াব? তাদের কোনো উত্তর নেই। তারা বলেন, যতখানি দরকার ততখানি বাড়াব। আমি জানি না আমার কতখানি লাগবে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) এখনো জানে না তাদে রসুদহার বাড়ানো কি শেষ হয়ে গেছে নাকি শেষ হয়নি। এটা কিন্তু তারা স্পষ্ট করছে না। তারা বলছে, যদি আমরা মনে করি নতুন তথ্যের ভিত্তিতে আরো বাড়াতে হবে আমরা প্রয়োজনে আরো বাড়াব। বাজারের কথা শুনে নীতি গ্রহণ নয়, বরং বাজারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কথা শুনতে হবে।
আমরা বলব না যে আমাদের সময় শেষ হয়ে গেছে। আমরা অবস্থার প্রেক্ষাপটে যতটুকু দরকার ততটুকু করব। এ পলিসি আমাদের গ্রহণ করা উচিত। অর্থাৎ তথ্যভিত্তিক, লক্ষ্যভিত্তিক পলিসি নিতে হবে। মূল্যস্ফীতিকে আমি ৪-৫ শতাংশে নামিয়ে আনব। আমি পর্যবেক্ষণ করব সুদহার বাড়িয়ে বাড়িয়ে কোথায় গিয়ে এটা নিম্নমুখী হয়। তারপরে যখন আমার টার্গেট রেঞ্জে চলে আসবে ৪-৫ শতাংশে, আমি আস্তে আস্তে কমানো শুরু করব।
আমাদের ঋণখেলাপির পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা। আইএমএফ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা মনে করে সংখ্যাটি আরো বড় হতে পারে। খেলাপি ঋণের পরিধি কতটুকু ভয়াবহ বলে মনে করেন?
আইএমএফ কিন্তু তিন-চার বছর আগেই বলেছিল যে বাংলাদেশের ঋণখেলাপির পরিমাণ হচ্ছে সম্পূর্ণ জিডিপির প্রায় ২৪-২৫ শতাংশ। অর্থাৎ ১৪-১৫ লাখ কোটি টাকার এক-চতুর্থাংশ (প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা)। সরকার বারবার ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ করছে, কিন্তু টাকা আসছে না। আমি বারবার ২ শতাংশ করে নিচ্ছি আর ৯৮ শতাংশ রোলওভার করে দিচ্ছি। কিন্তু ওই ৯৮ শতাংশ আর আসছে না। দুই বছর পর আবার তারা আসছে যে আবার পুনঃতফসিল করতে হবে। কেন সেটা করতে হবে। আবার বড় একটা কোর্টে আটকে আছে। মামলা দিয়ে ১০-১৫ বছর হয়ে গেছে। ওই মামলা ছোটে না, জটও ছাড়ে না। এবং সেটা পারবে বলে তারা মনে করে না। ব্যাংকও মনে করে না তারা পাবে। তো সব মিলিয়ে এ প্রকৃত ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা হতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃতফসিলের সিদ্ধান্ত হয়তো কভিডকালে সঠিক ছিল। পরবর্তীকালে এটি তো ফলও দিতে পারেনি।
কভিড শুধু না, কভিডের আগেই সমস্যা ছিল। তখনো রাজনৈতিক চাপে এটা করা হয়েছে। পুনঃতফসিলীকরণ বহুবার করা হয়েছে তার আগে। কভিডের সময় বুঝলাম সেটা একটা সাময়িক সময়ের জন্য করা হয়েছে। তারপর আবার শুরু হয়েছে চাপ। আমি মনে করি এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুটা কঠোর হচ্ছে। যে কারণে এটা কিন্তু দ্রুত বাড়েনি। হঠাৎ”করে ২৫ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেল, মূল কারণ হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জিনিসটাকে কঠোরভাবে দেখছে। তারা তো আইএমএফের একটা প্রোগ্রামের মধ্যে আছে। তাদের কিছু নীতি দেয়া হয় যে এটার বাইরে যেতে পারবে না। করা উচিত হবে না। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হবে না। আমাদের যে মেজারমেন্টগুলো সেগুলোকে কিন্তু চেক করতে হবে। যেমন আমাদের রিজার্ভের মেজারমেন্টটা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ছিল না। এখন আইএমএফের যে সংজ্ঞা সে অনুযায়ী করা হয়েছে। হ্যাঁ, এতে রিজার্ভ কমে গেছে কিন্তু এটিই তো প্রকৃত রিজার্ভ। ঠিক একইভাবে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করতে হবে। কঠোরভাবে অনুসরণ করলে পরে যেটাই আসুক না কেন সেটাই হবে আমাদের প্রকৃত পরিমাণ। আর যে জিনিসটা উৎসাহিত করতে হবে তা হচ্ছে, যে ঋণটা পুরোপুরি প্রভিশন হয়ে গেছে শতভাগ সেটা রাইট অফ করে দিয়ে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে দেয়া। খেলাপি ঋণ আদায়ে যেসব পলিসি আছে আইনগতভাবে সবই নেয়া হোক। কিন্তু বুকস থেকে ওটা সরিয়ে ফেলা হোক। কারণ এ টাকাটা আসবে না। যদি মামলা করে কিছু টাকা আসে সেটা আবার প্রফিটে চলে যাবে। কোনো অসুবিধা তো নেই। এভাবে প্রভিশনিং করলে যেটা হয়, সেটা হলো যে আর্টিফিশিয়ালি ইনফ্লেটেড (কৃত্রিমভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলা) লাভ দেখানো যাবে না। ডিভিডেন্ড নিতে পারবে না। এসব কারণে ব্যাংকের মালিকরা অনেক সময় করতে চান না। কিন্তু আসলে সেটাই করা দরকার, তাহলে ডিপোজিটরদের স্বার্থ রক্ষা হবে।
আমাদের ৬১টি তফসিলভুক্ত ব্যাংক আছে। অর্থনীতির আকার বিবেচনা করে এতগুলো ব্যাংক কি জরুরি ছিল? এ ব্যাংকগুলো আর্থিক খাতে অস্থিরতা তৈরি করছে কিনা?
এতগুলো ব্যাংক আমাদের দরকার ছিল না। বাংলাদেশের মতো ছোট একটি দেশে ১০-১৫টি ব্যাংক হলেই যথেষ্ট বলে আমি মনে করি। সিঙ্গাপুরের একটি তফসিলি ব্যাংক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব সিঙ্গাপুরের (ডিবিএস) সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৭০ বিলিয়ন ডলার। আমাদের সব ব্যাংকের সম্পদ যোগ করলেও এ ডিবিএস ব্যাংকের সমান হবে না। তাহলে আমরা ব্যাংক বৃদ্ধির পথে এগোচ্ছি কেন?
প্রথমত আমার মনে হয় আমাদের এখানে রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত এর জন্য দায়ী। দলীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য এমনটি হতে পারে বলে আমার ধারণা। যার ফলে আমাদের আর্থিক খাত এমন দুর্বল। এখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার ফলে বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে খুশি রাখতে এমন সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে হয়তো।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যালান্স অব পেমেন্টের (বিওপি) ঘাটতি ইতিহাসের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। বিষয়টি অনেকটা পুঁজি পাচারের সঙ্গে জড়িত। আমাদের পুঁজি পাচারের অবস্থা কেমন?
বিশ্বের অনেক দেশ থেকেই পুঁজি পাচার হয়, আমাদের দেশ থেকেও হয়। তবে এ বছর পুঁজি পাচার একটু বড় আকার ধারণ করেছে। এর কারণ সামনে নির্বাচন। আর এ নির্বাচনে অনিশ্চয়তাটা অনেক বেশি। অনিশ্চয়তা যত বাড়বে পুঁজি পাচারও তত বাড়বে। এছাড়া আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক কাঠামো অনেক দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ায় এ সমস্যা বেড়েছে। বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা দুর্নীতি করে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন, যা দেশে ভোগ করার সুযোগ নেই। তাই তারা এগুলো বিদেশে পাচার করেছেন। রাজনীতিবিদরাও অনেক চিন্তিত আছে যদি কোনো কারণে পট পরিবর্তন হয়, তাহলে তাদের দেশ থেকে চলে যেতে হতে পারে। মূলত এসব বিষয়কে সামনে রেখেই এ অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে আমাদের রেমিট্যান্স খাতটাও ঝুঁকিতে পড়েছে। অনেক বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানও ওভার ইনভয়েসিং করে টাকা বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।
পুঁজি পাচারের সঙ্গে হুন্ডির সম্পর্ক কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
পুঁজি পাচারের সঙ্গে হুন্ডি মুখ্য ভূমিকা রাখে, তবে আন্তর্জাতিক ব্যবসাও জড়িত। যেমন ১০০ টাকার পণ্য রফতানি করে ৭০ টাকা দেখানো হলো। আবার আমদানি করার সময় কোনো পণ্যের দাম ১০০ টাকার বদলে ১৫০ টাকা দেখানো হলো। আন্তর্জাতিক ব্যবসার ক্ষেত্রে এভাবে টাকা পাচার হয়। এর বাইরে হুন্ডির মাধ্যমে সহজ উপায়ে যে কেউ টাকা পাঠাতে পারে। তাদের আমদানি-রফতানিকারক হওয়ার প্রয়োজন নেই। হুন্ডিকারীদের বাংলাদেশে এজেন্ট রয়েছে। তাদের কাছে যদি কেউ ৫০ কোটি টাকা দিয়ে বলে তা সিঙ্গাপুর, দুবাই বা নিউইয়র্কে পাঠাও। তারা এ কাজটা সহজেই সম্পাদন করতে পারবে। এক্সচেঞ্জ রেট বা বিনিময় হার কত হতে পারে? হুন্ডিকারী হয়তো বলবে ১২০ টাকা বা তারও বেশি। যেহেতু পাচারকারী যেকোনো মূল্যে তা পাচার করতে চাইবে। সে এক্সচেঞ্জ রেটকে (বিনিময় হার) পরোয়া করবে না। লোকাল এজেন্টের পার্টনার আছে দুবাই, সিঙ্গাপুর বা সৌদি আরবে। সেখান থেকে তারা ডলার, রিয়াল বা অন্য বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে দেবে। অন্যদিকে যে এজেন্টের কাছে ৫০ কোটি টাকা দেয়া হলো সে শ্রমিকদের গ্রামের বাড়িতে হস্তান্তর করবে। এ ট্রান্সফারটা বিকাশ, নগদ বা হাতে হাতে হতে পারে। লক্ষণীয়, এতে ডলার, ইউরো বা রিয়াল কোনোটাই বাংলাদেশে আসছে না। সরাসরি সেখান থেকে ডাইভার্ট হয়ে যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়াই হুন্ডি, যেটি ধরাটা একরকম অসম্ভব ব্যাপার। তাদের ধরা যায় না তার আরেকটা কারণ হচ্ছে, যারা এর সঙ্গে জড়িত তারা অনেক ক্ষমতাশীল।
আমাদের রেমিট্যান্স ৪১ মাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে। এটি তো আমাদের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি খাত। আমরা কীভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে পারব?
আমাদের কিন্তু বিগত দুই বছরে ২৩ লাখ লোক দেশের বাইরে গেছে। তারা তো কিছু না কিছু করছে। খাচ্ছে-দাচ্ছে, পয়সাকড়ি পাঠাচ্ছে। তারা অর্থ পাঠাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ডলার চলে যাচ্ছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা বা লন্ডনে। ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে ডলার আসাটা কমে যাচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তন সহজে সম্ভব নয়। বিশেষ করে, এখন যেহেতু রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ ঘোলাটে।
খাদ্য, জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যের জন্য আমরা মোটাদাগে আমদানিনির্ভর। রফতানিতে কোনো বৈচিত্র্য আসছে না। রফতানি খাত কীভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে?
রফতানির ক্ষেত্রে আমরা একটি পণ্যের ওপর নির্ভর করি। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ আমাদের মতো কনসেন্ট্রেটেড এক্সপোর্টে (এক খাতে পুঞ্জীভূত রফতানি) নেই। এটা আমাদের জন্য একটি দুর্বল পয়েন্ট। আমরা রফতানিকে ডাইভার্সিফাই (রফতানিতে বৈচিত্র্য আনা) করা, টেকনোলজিক্যাল আপডেট করা কোনোটাই করতে পারিনি। আমরা চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ওপর আরো জোর দিতে পারতাম। যেমন জুতা, স্নিকার্স, হ্যান্ডব্যাগ। সব কিন্তু সেলাইয়ের মধ্যেই পড়ে। আর ইলেকট্রনিকসটা টেকনোলজিক্যালি এক ধাপ ওপরে। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংটা হচ্ছে আরেক ধাপ ওপরে। এভাবেই প্রতিটি দেশ এগোয়, আমরা কিন্তু ওপরের ধাপে আর যেতে পারিনি। ভিয়েতনাম এখন লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং সব করছে। তারা ইলেকট্রনিকস পণ্য রফতানি করে ১১৪ বিলিয়ন ডলারের। আমাদের সর্বমোট রফতানির প্রায় আড়াই গুণ বেশি শুধু ইলেকট্রনিকস পণ্য রফতানি করে।
আমাদের গৃহস্থালি পণ্যের বাজার রয়েছে, ভালো গৃহস্থালি পণ্য তৈরিও হচ্ছে। হেভি ইন্ডাস্ট্রিতে কোন কোন খাতে রফতানি করতে পারি?
আমরা রফতানি তো অনেক খাতেই করতে পারি। সম্ভাবনা আছে। যেমন আছে লেদার (চামড়া শিল্প)। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে আগে আমরা কিছুদিন সাইকেল রফতানি করেছি। এখন এটা থমকে দাঁড়িয়েছে, বাড়ছে না। হোম টেক্সটাইলে আমাদের ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল। মিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল, কিন্তু এখন আমরা থেমে গেছি। জাহাজে আমরা পিছিয়ে গেছি। ২০ বছর ধরেই কিন্তু ৩০০-৪০০ মিলিয়ন ডলারে আছে। এটা আর বাড়ছে না। আমরা আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারিনি। আমাদের আরেকটি রফতানিমুখী খাত-ফার্মাসিউটিক্যাল। যত কথাই বলি, রফতানি কিন্তু খুবই কম। ১০০, ১৫০ বা ২০০ মিলিয়ন ডলার। ইন্ডাস্ট্রি বড় হচ্ছে, স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করছে। কিন্তু রফতানি বাজারে বড় আকারে প্রবেশ করতে পারেনি। আইটি খাতের কথা বলি। ভারতে যেখানে কয়েকশ বিলিয়ন ডলার আয় করছে, আমরা তো কয়েক বিলিয়ন ডলার পারি, তাও তো পারছি না। এগুলোই তো সম্ভাব্য খাত। তারপর ইলেকট্রনিকস। ওয়ালটন যদিও বাইরে রফতানি করছে। এখন তাদের উচিত রফতানি করা, সেটা কিন্তু হচ্ছে না। আরেকটা জিনিস আমাদের খেয়াল করতে হবে। ভিয়েতনাম কীভাবে এত পণ্য রফতানি করছে? স্যামসাংয়ের মতো কোম্পানি ভিয়েতনাম থেকে একাই ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে। এ কোম্পানিকে আমরা বাংলাদেশে আসতে দিইনি। তারা ভিয়েতনামে চলে গেছে। তারা একটু বেশি জমি চেয়েছে যা আমরা দিতে পারিনি। কোনো কোম্পানি যদি ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করতে পারে কেন তাকে বেশি জায়গা দেয়া হবে না? ভিয়েতনামের রফতানি খাতে তৈরি পোশাকের অবদান মাত্র ২২ শতাংশ, আমাদের যেখানে ৮৫ শতাংশ। আমরা কিছু কৌশলগত ভুল করেছি। আমরা এখন পর্যন্ত একটা বড় কোম্পানিকে বাংলাদেশে আনতে পারিনি। যেমন টয়োটা, স্যামসাং, হুন্দাইয়ের মতো প্রতিষ্ঠান। শিপ বিল্ডিং একটা সম্ভাবনাময় খাত। আমাদের সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু হয়নি।
ভিয়েতনাম কিন্তু এখন শিপ বিল্ডিংয়ে চলে গেছে। কেন যাচ্ছে? তারা কিন্তু বিদেশী বিনিয়োগ এখানে নিয়ে আসছে। কোরিয়ানদেরও আমরা আনতে পারতাম। আমাদের এখানকার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারও করতে পারত। তারা যদি তা করত, তাহলে আজকে আমাদের কোম্পানিগুলো টিকে থাকত। আজ আমাদের ওয়েস্টার্ন মেরিন নেই, তারা ব্যাংকরাপ্ট (দেওলিয়া)। একই অবস্থা আনন্দ শিপিংয়েরও। তারা বিশাল জায়গা-জমি কিনে টাকা বিনিয়োগ করে পথে বসে গেছে।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম মূল্যায়ন করলে তাদের কতটুকু সফল বলে মনে করেন?
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমি অনেকদিন ধরে জড়িত। ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সঙ্গে কাজ করছি। তাদের অনেক সমালোচনা করলেও আমার আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি আছে। আমি মনে করি বাংলাদেশের দুটো সরকারি ইনস্টিটিউশন গুণগতভাবে এখনো ভালো আছে। একটা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, আরেকটা হচ্ছে মিনিস্ট্রি অব ফাইন্যান্স (অর্থ মন্ত্রণালয়)। দুটোর কর্মীদেরই গুণগত মান ভালো। তারা আরো ভালো করতে পারে। তবে সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক। যে কারণে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নীতিনির্ধারক যারা আছেন তারা যে তথ্যগুলো অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিয়ে আসেন, সে তথ্যগুলোর আলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে না সরকার। আমরা যদি হল-মার্কের কথা বলি বা বিসমিল্লাহ গ্রুপ; প্রত্যেকটার রহস্য উদঘাটন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মিডিয়া কিন্তু করেনি। মিডিয়ার তথ্যের মূল বাংলাদেশ ব্যাংক। মিডিয়ার আলাদা কোনো সোর্স নেই। বাংলাদশ ব্যাংক থেকে ফাঁস হওয়া তথ্য তারা প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই ক্যাপাসিটি আছে। তারা ইনভেস্টিগেশন করার সক্ষমতা রাখে। সেটাকে ব্যবহার করতে হবে। পলিসিতে ট্রান্সলেট করে অ্যাকশনে যেতে হবে। আমি যদি অ্যাকশনে না যাই এবং অনুসন্ধানী রিপোর্টগুলো ড্রয়ারে তালা-চাবি দিয়ে আটকে রাখি, যাতে মিডিয়া জানতে না পারে, তাহলে তো কোনো প্রতিকার হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ‘ডি’ গ্রেড পেয়েছেন। প্রতিবেশী ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পেয়েছেন ‘এ প্লাস’, শ্রীলংকার গভর্নর পেয়েছেন ‘এ মাইনাস’। এ মূল্যায়নকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
তাদের যে মূল্যায়নের ভিত্তি, তাতে কী ধরনের ক্রাইটেরিয়া ব্যবহার করা হয়েছে? যেমন বিভিন্ন দেশের মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ, এক্সচেঞ্জ রেট, ব্যালান্স অব পেমেন্ট, মনিটারি বা মুদ্রানীতির ম্যানেজমেন্ট কীভাবে হচ্ছে? এগুলো যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো করেনি। ইনস্টিটিউশন হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্যই ভালো করেনি। আমি যদি আরেকটু গভীরে যাই। ব্যাংক ব্যবস্থাপনার কথা বলি বা ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা—সবকিছু মিলিয়ে এটার দায় কি সরকার নাকি গভর্নরের? আমি মনে করি ‘ডি’ পাওয়ার যোগ্য সরকার, কোনো ব্যক্তি (গভর্নর) নয়। কারণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সরকারের ওপর পড়ে। সরকারকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুই করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এতখানি ক্ষমতায়ন করা হয়নি, অন্যান্য উন্নত দেশের মতো। এত স্বাধীন নয় আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কাজেই গভর্নরের পাস বা ফেলের ব্যাপারটা অযৌক্তিক। এ রেটিং হওয়া উচিত সরকারের। সেক্ষেত্রে সরকারের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ‘ডি’ লেভেল পাওয়ার যোগ্য।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়ছে। এখন আগামী এক-দুই মাস বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্রান্তিকাল? অর্থনীতিতে এর কেমন প্রভাব পড়বে?
অবশ্যই বড় রকমের প্রভাব এরই মধ্যে পড়ছে এবং পড়বে। একটু আগে যেটা বললাম যে টাকা পাচার বেড়ে গেছে এবং প্রত্যেক নির্বাচন চক্রেই দেখি পাঁচ বছর পরপর এটা ঊর্ধ্বমুখী হয়। এ বছর আরো বেশি করছে আমার ধারণা, কারণ অনিশ্চয়তা আরো বেশি। কারণ বর্তমান সরকারের ১৫ বছর হয়ে গেছে। বিভিন্ন কারণে আরো বেশি আলোচনায় চলে আসছে। সুতরাং এ অস্থিরতাটা আছে। সব পক্ষই একটা কমিটমেন্টের কথা বলছে যে তারা নির্বাচন সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল ও অবাধ দেখতে চায়। এটা তো একটা কমিটমেন্ট, এ কমিটমেন্টে জনগণের কতখানি আস্থা আছে, তা ভাবার বিষয়। কোনো পক্ষের কি আস্থা আছে নাকি শুধু মুখের কথা? সাধারণ মানুষ বা রাজনৈতিক দলেরও ধারণা এটা মুখের কথা। কাজের ক্ষেত্রে যা হওয়ার তাই হবে। সেক্ষেত্রে যে পরিবেশটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিদেশীদের চাপের কারণেই হোক বা অন্য যে কারণেই হোক, সংঘাতটা এখনো হয়নি। কিন্তু আগামীতে কি আমরা সেটা এভাবে রাখতে পারব, এটি নিয়ে সবার মনেই দুশ্চিন্তা আছে। সেটা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিচ্ছে। কাজেই সামনের মাসগুলোয় অর্থনৈতিকভাবে আশাপ্রদ কিছু হওয়ার নয়। এটিকে সরকারের পক্ষ থেকে যতদূর সম্ভব ম্যানেজ করতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়েও সব পরিবারকে যার যার অর্থনৈতিক অবস্থান থেকে ম্যানেজ করতে হবে, কোনোভাবে টিকে থাকতে হবে। আশা করতে হবে, যেন ভালো একটি নির্বাচন হয়। জনগণ সেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং তার মাধ্যমে যেন একটি স্থিতিশীল সরকার আমরা পাই।
বনিক বার্তা