ডিবি হেফাজতে নির্যাতন, হাসপাতালে নেওয়ার পর এক ব্যক্তির মৃত্যু

 আমার দেশ
১৮ জুন ২০২৩

ডিবি’র হেফাজতে নির্যাতনে নিহত আলাল উদ্দিন

ডিবি’র হেফাজতে নির্যাতনে নিহত আলাল উদ্দিন

নিজস্ব প্রতিনিধি

ডিবি’র হেফাজতে নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়া এক ব্যক্তি হাসপাতালে নেওয়ার মারা গেছেন। তুলে নিয়ে যাওয়ার পর ৪ দিন তাঁর কোন খোঁজ দেয়নি ডিবি। গুম করে রাখা হয়েছিল এই চার দিন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ১০ জুন তাঁকে প্রথমে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ১৬ জুন নেওয়া হয় জাতীয হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে। ওইদিন রাতেই ফোনে স্বজনদের জানানো হয় তিনি মারা গেছেন।

রাজধানীর তুরাগে ফাতেমা আক্তার মুক্তা নামে এক নারী খুন হয়েছিলেন। খুনের ঘটনায় প্রথমেই ওই বাড়ির কেয়ারটেকার আলাল উদ্দিনকে (৫০) তাঁর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি। আলালের স্বজনদের অভিযোগ, বাসা থেকে তাকে সুস্থ অবস্থায় নিয়ে তুলে নিয়ে যায় ডিবি। তারপর নির্যাতনেই আলাল মৃত্যুশয্যায় চলে গেছে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই মারা গেছেন।

আলাল উদ্দিন তুরাগের বাউনিয়া মহিষাগার এলাকার একটি সাততলা ভবনে কেয়ারটেকারের কাজ করতেন। গত ৫ই জুন ওই ভবনের দ্বিতীয়তলায় ফাতেমা আক্তার নামে এক নারীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরের দিন আলালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ডিবি উত্তরা বিভাগের একটি টিম। এরপর থেকে তার বিষয়ে আর কিছুই জানায়নি পরিবারকে। পরে শুক্রবার (১৬ই জুন) রাতে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, তিনি মারা গেছেন।

পরিবারের অভিযোগ, ডিবির নির্যাতনে আলালের মৃত্যু হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিলেন, তাকে বিনা কারণে ফাতেমা আক্তারের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আটক করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডিবি যখন আলালকে আটক করে তখনই তার পা ভাঙা ছিল। পরে আদালতের আদেশের ভিত্তিতে তাকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

পঙ্গু হাসপাতালে ৫-৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার এক পর্যায়ে তার রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যায়। তখন পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তার মৃত্যু হয়।

চাচাতো ভাই জাহিদ বলেন, আলাল যে বাসার কেয়ারটেকার ছিলেন, সেই বাসার দ্বিতীয়তলায় এক নারী খুন হয়েছেন। ঘটনার পর থানা পুলিশ আলালকে গ্রেপ্তার করেনি। কিন্তু ৬ই জুন ডিবির একটি টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে যায়।

সে সময় আলাল সুস্থ ছিলেন দাবি করে জাহিদ বলেন, ডিবি হেফাজতে নিয়ে তাকে (আলাল) মারধর করে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তাকে যে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল সেটিও আমাদের জানানো হয়নি।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট থেকে আমাদের ফোন করে জানানো হয় আলাল মারা গেছে। পরে আমাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, আলালকে ডিবি ভর্তি করেছিল।

ডিএমপির তুরাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ফাতেমা আক্তারের হত্যার ঘটনায় তার স্বামী ইসমাইল হোসেন আজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। ফাতেমার ভাইয়ের দায়ের করা মামলায় ফাতেমার স্বামী আর অজ্ঞাত দুইজনকে আসামি করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করি।

এ ঘটনার সঙ্গে ওই বাসার কেয়ারটেকার আলাল কোনোভাবে সম্পৃক্ত কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমরা আলালের কিছু সংশ্লিষ্টতা পেয়েছিলাম। পরে মামলাটি ডিবিতে চলে যায়। ডিবি আলালকে আটক করেছিল কিনা সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

এদিকে শনিবার (১৭ই জুন) রাত ৮টার দিকে আলালের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

উল্লেখ্য, গত ৬ই জুন রাজধানীর তুরাগের বাউনিয়া মহিষাগার এলাকার একটি ভবন থেকে ফাতেমা আক্তার মুক্তা নামে এক নারীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্বামীসহ গত চার মাস ধরে ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করছিলেন তিনি।