নয়া দিগন্ত অনলাইন
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার প্রতিবাদে আজ শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো গণপরিবহন এবং পণ্য পরিবহন ধর্মঘট চলছে সারাদেশে।
পরিবহন মালিক সমিতি বলছে, তেলের দাম বাড়ালে পরিবহন ভাড়াও বাড়াতে হবে।
আগামীকাল রোববার সরকারের সাথে এ নিয়ে তাদের বৈঠক রয়েছে।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষক থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত নাগরিকরা ভোগান্তির শিকার হবেন বেশি।
তেমনি একজন মনসুরা সোনিয়া, ঢাকার উত্তরায় থাকেন। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে এখন সংসারের খরচ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন পেশায় শিক্ষক এই নারী।
মনসুরা সোনিয়া আশঙ্কা করছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়বে।
সুতরাং সংসারের মৌলিক চাহিদা মেটানো তার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
‘আমরা যারা সাধারণ মধ্যবিত্ত তাদের সমস্যা কিন্তু প্রকট। আমরা আমাদের সমস্যাগুলো মুখ ফুটে বলতে পারি না। আমাদের যেটা বেসিক নিড বা অতি জরুরি পণ্য সেটা কেনাও অনেক কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের আয় তো বাড়েনি। ক্ষেত্রবিশেষে কমেছে।’
‘প্রতি মাসে আমার একটা হিসাব আছে। আমি চাল কিনছি, আরো অন্যান্য জিনিস কিনছি। কিন্তু এখন বেসিক জিনিস কিনতে হবে, বাচ্চাদের জন্য মূল্যবান আইটেম যা কিনতাম – সেসব বাদ দিতে হবে,’ বলেন তিনি।
কৃষি ও পরিবহনের ভাড়া
বাংলাদেশের সরকার বুধবার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
এর পর দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবহন মালিক সমিতি যাত্রী ও পণ্যবাহী যান ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় – যা শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়ে শনিবার পর্যন্ত বহাল আছে। তাদের এই ধর্মঘটের ঘোষণাকে পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটিও সমর্থন দেয়।
ফলে ঢাকার প্রধান বাসস্ট্যান্ডগুলো রয়েছে বন্ধ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়বে বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানের ভাড়ায়। লঞ্চসহ নৌযানের ভাড়াও বাড়বে।
আর এর পরোক্ষ প্রভাব পড়বে অনেক খাতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলছেন, প্রথম প্রভাব পড়বে কৃষকের উপর, দ্বিতীয় পড়বে পণ্য পরিবহনের উপর।
তিনি বলেন, ‘কৃষকদের একটা বড় খরচ সেচ কাজ। সেখানে ডিজেল ব্যবহার হয়। এরপর যখন সে এই পণ্য ট্রাক কিংবা নৌযানের ভাড়া বেড়ে গেলে শাক-সবজি থেকে শুরু করে যেসব পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বাজারে আসে, তার সবেরই দাম বাড়বে। ফলে ভোক্তারা উপর অতিরিক্ত একটা চাপ তৈরি করবে।’
বিদ্যুৎ ও মূল্যস্ফীতি
এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে প্রভাব পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।
কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেল ব্যবহার করা হয়। তারা মনে করছেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সার্বিক সক্ষমতায় চাপ পড়তে পারে এই পরিস্থিতিতে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে অর্থনীতি এমনিতেই একটু সংকুচিত অবস্থায়। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বাড়াবে।
‘সার্বিকভাবে দেখা যায়, একটা বাজারে যখন সরবরাহের চাইতে চাহিদা বেশি, তখন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। তেলের মূল্য বৃদ্ধির সুযোগে অনেকে সেটা মজুদ করে রাখে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সেটাও মজুদ করে রাখে। তখন বাজারে একটা কৃত্রিম চাপ সৃষ্টি হয়। এবং যখন এই মূল্যস্ফীতির চাপ মানুষের উপর দিয়ে পড়ে, সামগ্রিকভাবে মানুষের আয়ের উপর চাপ পড়ে।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। যার ভুক্তভোগী হতে হবে সাধারণ মানুষকে।
সূত্র : বিবিসি