ডলার সংকট : বাতিল হচ্ছে তেলবাহী জাহাজ আসা, সরবরাহ বিঘ্নের শঙ্কা

ডলার সংকট কাটছে না জ্বালানি খাতে। অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার চিঠি দিয়ে, বৈঠক করেও সমস্যার সমাধান মিলছে না। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপে সম্প্রতি ডলার ছাড় শুরু হলেও তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য। পর্যাপ্ত ডলার না পাওয়ায় তেল সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না বালাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলো তাদের জাহাজ পাঠানো বাতিল করছে। প্রায় প্রতি মাসেই শিডিউলভুক্ত চার-পাঁচটি জাহাজ তেল নিয়ে দেশে আসছে না। ফলে ডিজেল, ফার্নেস অয়েল এবং জেট ফুয়েলের মজুতে টান পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন চলতে থাকলে আসন্ন সেচ মৌসুমে (ডিসেম্বর-মে) জ্বালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বিঘ্নিত হবে বলে আশঙ্কা খাত-সংশ্লিষ্টদের।
ডলার পাচ্ছে না বিপিসি

জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বিপিসির কাছে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত পাবে ২৪৬ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ইউনিপেক ৮.৪৩ মিলিয়ন, পিসিএসজি ৫.২৮ মিলিয়ন, ভিটল ৭৫.০৮ মিলিয়ন, বিএসপি ৭৫.৭০ মিলিয়ন, পিটিএলসিএল ২৯.১৭ মিলিয়ন, ইনক ১৪.৪০ মিলিয়ন ও এনআরএল ৩.২১ মিলিয়ন ডলার পাবে। সম্প্রতি এক চিঠিতে বিপিসি অর্থ বিভাগকে জানিয়েছে, পাওনাদার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত পাওনা পরিশোধ করতে হবে, না হলে তারা কার্গো পাঠাবে না বলে হুমকি দিয়েছে।

এ বিষয়ে বিপিসির একজন মহাব্যবস্থাপক সমকালকে বলেন, তাদের হাতে টাকা রয়েছে, কিন্তু ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। যতটুকু ডলার পাওয়া যাচ্ছে, চাহিদার তুলনা তা নগণ্য। গত এক মাসে ১৩৫ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে বিপিসি। ডলার না থাকায় এলসি খুলেও আমদানি করা যাচ্ছে না জ্বালানি তেল।
বাতিল হচ্ছে জাহাজ

জানা গেছে, সময়মতো পাওনা না পাওয়া কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান তাদের তেলবাহী কার্গো পাঠানো বাতিল করেছে। চলতি সপ্তাহেও দুটি জাহাজ বাতিল হয়েছে। এতে জেট ফুয়েলের মজুতে টান পড়েছে। আগামী জাহাজ ২৯ ডিসেম্বর দেশে আসার কথা। বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর দু’জন কর্মকর্তা সমকালকে জানিয়েছেন, ডলার সংকট না কাটলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সামনে সেচ মৌসুম, তখন ডিজেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময় যদি নিয়মিত জাহাজ না আসে, তবে নিরবচ্ছিন্ন ডিজেল সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে।

আগামী সেচ মৌসুমে দেশে ডিজেলের চাহিদা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৫০ হাজার টন। সরকার বিপিসিকে ডিজেলের সার্বক্ষণিক মজুত দেড় লাখ টন রাখার নির্দেশে দিয়েছে।
দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। এর মধ্যে বিপিসি আমদানি করে ৬৫-৭০ লাখ টন। এর বাইরে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিজেদের প্রয়োজনে ফার্নেস অয়েল
আমদানি করে।

সমকাল