ডলার কারবার ব্যাংক-মানি এক্সচেঞ্জের যোগসাজশে

ডলার কারবার ব্যাংক-মানি এক্সচেঞ্জের যোগসাজশে.

 দেশে ডলার সংকটের নেপথ্যে রয়েছে কিছু ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের একটি সংঘবদ্ধ চক্র। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা প্রতিদিন যে শতকোটি টাকার বেশি মূল্যের ডলার ও বিদেশি মুদ্রা আনেন, তা জালিয়াতির মাধ্যমে কুক্ষিগত করছে চক্রটি। জাল ভাউচারে যাত্রীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে পরে তা খোলাবাজারে (কার্বমার্কেট) ছাড়া হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

দুদক সচিব বলেন, ‘গত সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি বিশেষ এনফোর্সমেন্ট টিম হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ চক্রটির বিদেশি মুদ্রা গ্রাস করার প্রমাণ পেয়েছে।’

ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘হযরত শাহজালালে প্রতিদিন বিদেশ থেকে আসা শতকোটি টাকার বেশি মূল্যের ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রার হিসাব বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় এন্ট্রি হচ্ছে না। ফলে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে আসছে না। একই কারণে রিজার্ভেও অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের একটি চক্র যোগসাজশ করে এ জালিয়াতি করছে।’ দুদক টিমের সদস্যরা ব্যাংকের শাখাগুলো থেকে মুদ্রা বিনিময়ের জাল ভাউচার ও অন্যান্য নথি সংগ্রহ করেছেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করে কমিশনে প্রতিবেদন দেওয়া হবে এবং কমিশন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলে উল্লেখ করেন দুদক সচিব।
মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বিমানবন্দরের ভেতরে জনতা, সোনালী, অগ্রণী, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, প্রবাসীকল্যাণ ও যমুনা ব্যাংকের শাখা এবং কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান দেশে ডলার সংকটের নেপথ্যে কাজ করছে। মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে এভিয়া মানি এক্সচেঞ্জার ও ইমপেরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জার।’ নথিপত্র অনুসন্ধান করে এই জালিয়াতির পেছনের হোতাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এক প্রশ্নের উত্তরে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ আসে। তার ভিত্তিতে কমিশনের গোয়েন্দা ইউনিট কাজ করে। শাহজালাল বিমানবন্দরে অভিযান চালানো হয়। এতে দেখা যায়, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দরের ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তাদের আনা ডলার ভাঙিয়ে টাকা নেন। কিন্তু ব্যাংকের শাখাগুলো মুদ্রা বিনিময় করলেও তা নথিভুক্ত করে না। যাত্রীদের জাল ভাউচার দেওয়া হয়। মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানও একই জালিয়াতি করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর রেকর্ডপত্র পরীক্ষা করে দেখা যায়, এই বিমানবন্দরে প্রতিদিন শতকোটি টাকার বেশি মূল্যের বিদেশি মুদ্রা লেনদেন হয়।’

পুরো বিষয়টি দুদকের নজরদারিতে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী বিদেশ থেকে আনা মুদ্রা বিনিময়ের সময় এন্ট্রি করার কথা থাকলেও কিছু ব্যাংকের শাখা তা করছে না। ব্যাংকিং আইন লঙ্ঘন করে তারা জাল ভাউচার দিচ্ছে।’

দুদক বলছে, শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে যে রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রা আসে, তা ব্যাংকিং চ্যানেলে রিজার্ভে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু অসাধু কর্মকর্তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে তা না দেখিয়ে ডলার কিনে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। পরে অনেক সময় তা বিদেশে পাচার হয়ে যায়।
দুদকের অভিযানে দেখা যায়, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা শাহজালাল বিমানবন্দরে বেশি বিনিময় করেন ডলার, ইউরো, রিয়াল, রিঙ্গিত, পাউন্ড ও দিনার।

সমকাল