ডলারের দর দ্রুত বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় দর নির্ধারণ না করে বাজার চাহিদার ভিত্তিতে ডলার বেচাকেনার প্রয়োজন অনুভব করছে সংস্থাটি। এটা করলে বৈদেশিক মুদ্রার বিদ্যমান চাপ কমবে। গতকাল রোববার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ অভিমত জানিয়েছে সংস্থাটি।
ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আরএফ হোসেন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিনসহ বেশ কয়েকজন এমডি উপস্থিত ছিলেন। আইএমএফ প্রতিনিধি দল ডলার ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়াও দেশের সুদহার ব্যবস্থা, তারল্য ব্যবস্থাপনা এবং খেলাপি ঋণ বিষয়ে আলোচনা করেছে। আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিতে বিভিন্ন শর্ত পরিপালনের বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করছে।
জানা গেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রির বিষয়টি জানতে চায় আইএমএফ। জবাবে এবিবি নেতারা জানান, রিজার্ভ কমলেও বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের আমদানির জন্য নিরুপায় হয়ে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বাজার ব্যবস্থাপনায় আরও সংস্কার আনবে বলে তারা শুনেছেন। তখন হয়তো রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হবে না। আবার ডলারের দরও পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। আইএমএফের প্রতিনিধি দল বলেছে, ডলারের দর দ্রুত বাজারভিত্তিক হলে রেমিট্যান্স বাড়বে। আবার রপ্তানি আয়ও দ্রুত ফেরত আসবে।
বৈঠক বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম হোসেন সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় এবিবি ও বাফেদা শুরুতে ডলারের তিনটি দর ঘোষণা করত। ইতোমধ্যে ডলার কেনা ও বিক্রির সিঙ্গেল বিনিময় হার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। প্রতি মাসে একটু করে দর বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে বাজারভিত্তিক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সুদহারের নতুন ব্যবস্থা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। তাদের বলা হয়েছে, সুদহারের নতুন একটি মান চালু হয়েছে। হঠাৎ পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হবে না। ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক সুদহারের দিকে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, ডলার, সুদহার ছাড়াও খেলাপি ঋণ ও তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে তারা জানতে চেয়েছিল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে বাজারে তারল্য কমানোর বিষয়ে তাদের অবহিত করা হয়। বৈঠকে আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক ভালো। তবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সুদহার ও ডলারের দর বাজারভিত্তিক করতে হবে। এমডিরা জানান, সরকারের ঋণ চাহিদা এখন আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বাজার থেকেই টাকা তোলা হচ্ছে। এর ফলে এরই মধ্যে ৬ মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার (স্মার্ট) বাড়তে শুরু করেছে। আবার স্মার্টের সঙ্গে যে ৩ শতাংশ সুদের করিডোর দেওয়া হয়েছে, তা বাড়িয়ে সাড়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে সুদহার বাড়ছে। আগের মতো এখন নির্দিষ্ট সীমা নেই।
সমকাল