ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে নতুন প্রসিকিউশন টিম নিয়োগ করা হয়েছে। তবে ইতিমধ্যেই অভিযোগ জমা হলেও ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন না হওয়ায় বিচারকাজ শুরু করা যায়নি।
ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শুরু করতে অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদায় চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলামকে গত সপ্তাহে নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আরও চারজন প্রসিকিউটর। এরই মধ্যে তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, সিএমএইচে গিয়ে আন্দোলনের সময় আহতদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চালানো গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অন্তত ১৯টি অভিযোগ জমা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় চালানো হত্যার ঘটনায়। একটি অভিযোগ ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে চালানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা নিয়ে।
সর্বশেষ গতকাল রোববার পাঁচটি অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে প্রসিকিউশনে। ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা অভিযোগে নাম থাকা আসামিদের গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা রয়েছে এর তদন্ত সংস্থার। এর জন্য পরোয়ানা চাইতে হবে। এ জন্য আবার প্রয়োজন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ দেওয়া।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আদালত এখনো গঠন হয়নি। তদন্ত সংস্থায় আগের ৬ জন রয়েছেন। আরও অনেক তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রয়োজন। প্রসিকিউশনে অন্তত ২০-২৫ জন প্রয়োজন। আমরা এখন মাত্র ৫ জন আছি। সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ না করে বিচার শুরুর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না। সারা দেশে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হবে।’
ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের বিষয়ে আইন উপদেষ্টার কাছে দাবি জানানোর কথা উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এর জন্য প্রয়োজনীয় কাজ আটকে আছে। আইন উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হবে।’
ছাত্র-জনতার কোটাবিরোধী ও পরের এক দফার আন্দোলনে রক্তপাতের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে ইতিমধ্যে শতাধিক মামলা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, থানা এবং আদালতে করা প্রায় সব ঘটনাতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতাকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। বাকিরা বেশির ভাগই পলাতক।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক (প্রশাসন) আতাউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা তদন্তের অংশ হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করে আহতদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং চিকিৎসার নথিপত্র সংগ্রহ করেছি। সারা দেশের ডিসি-এসপি, সিভিল সার্জন, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হতাহতের তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসব তথ্য হাতে এলে তদন্তকাজ দ্রুত শেষ করা যাবে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ৩০টি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। এ ট্রাইব্যুনালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় নৃশংসতায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে চিহ্নিত অনেকের ফাঁসিসহ সাজা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মামলাগুলোর কয়েকজন আসামির স্বজনেরা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ট্রাইব্যুনালের সামনে মানববন্ধন করেছেন। তাঁরা মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে আসামিদের মুক্তির দাবি জানান।
প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হলে আগে থেকে বিচারাধীন মামলাগুলোর আগে নিষ্পত্তি হবে। এরপরই সাম্প্রতিক সময়ে গণহত্যার অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি হবে।
তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক (প্রশাসন) আতাউর রহমান বলেন, তদন্ত সংস্থায় বর্তমানে ৬ জন সদস্য রয়েছেন। আশা করছি দ্রুত আরও কয়েকজন নিয়োগ হবে। তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন হলে কাজে গতি আসবে। সঠিকভাবে তদন্তের জন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হলেই আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারির আবেদন করা হবে।
source : ajkerpatrika