আল-আমিন
৯ আগস্ট ২০২৩, বুধবার
হযরত শাহ্জালাল (রহ.) বিমানবন্দরের জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য নেয়া নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জ ডিপো প্রকল্পের কাজে দেখা দিয়েছে ধীরগতি। এতে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনাল পুরোদমে সচল করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঢাকা বিমানবন্দরের আগত-বহির্গত সকল প্রকারের বিমানের জ্বালানি বর্তমানে পিওসিএল কর্তৃক ট্রাকে এবং ভাউজারে করে ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটর দূরের নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপো থেকে প্রতিদিন সড়ক পথে বিমানবন্দরে নেয়া হয়ে থাকে। এতে বছরে ২০ কোটি টাকার জ্বালানির ক্ষতি হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এই ক্ষতি কমানো এবং জ্বালানি সরবরাহ আরও নির্বিঘœ করতে পিতলগঞ্জ ডিপো নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। প্রকল্পের প্রথম চুক্তিতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। দ্বিতীয় চুক্তিতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৬৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী ইতিমধ্যে প্রায় ১১৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিবেদনে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি শেষ না হলে থার্ড টার্মিনাল পুরো সচল করা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয় প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী মানবজমিনকে বলেন, ‘প্রকল্প চলমান আছে। যেহেতু এটি তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত সেহেতু কাজ অব্যাহত আছে।’
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৮ ইঞ্চি পাইপ স্থাপন করা হবে। পিতলগঞ্জের ৬.৩৩ একর এলাকায় ৩ টি বড় ট্যাংক নির্মাণ করা হচ্ছে। এর প্রত্যেকটিতে ৫০০০ টন জ্বালানি রাখা যাবে। দুর্ঘটনা এড়াতে নির্মাণ করা হবে ২ টি ওয়াটার ট্যাংক।
পাশের শীতলক্ষা নদীর তীরে ১৬ মিটার বাই ৭০ মিটার নদী শাসনসহ জেটি নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও সেখানে দ্বিতল ভবন, সাব-স্টেশন, ওয়্যার হাউজ, গার্ডরুম, ওয়াচ টাওয়ার নানাবিধ যন্ত্রপাতি রাস্তা ও নির্মাণ করা হবে। ১৬ কিলোমিটারব্যাপী রোডে ৩ টি সেকশনালাইজিং ভাল্ব স্টেশন নির্মাণ, জেটিতে অত্যন্ত আধুনিক এবং উচ্চমূল্যে মেরিন লোডিং আর্ম স্থাপন করা হবে। এছাড়াও আধুনিক অটোমেটিক ফায়ার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছাড়াও সংযোগ করা হবে সুপারভাইজরি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডাটা অ্যাক্যুইজিশন। প্রকল্পে সাব-স্টেশনের সঙ্গে ব্যবহৃত ট্যাংকের সমন্বয় সাধন করা হবে। তবে প্রকল্পের কাজে ধীরগতি হওয়ার কারণে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ওই সমস্যাগুলো হচ্ছে- ওই প্রকল্পের আওতাধীন এলাইমেন্ট বরাবর মাটি, খাল ও নদীর তলদেশ দিয়ে পাইপ লাইন স্থাপনসহ পিতলগঞ্জ ডিপোতে ৫০০০ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি ফুয়েল স্টোরেজ ট্যাংক ও অগ্নিনির্বাপণ ও পানি ও সরবরাহের জন্য আরও দু’টি পানির ট্যাংক স্থাপন সম্পন্ন করা হয়েছে যা যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কার্যকারিতা হারাচ্ছে। এই সকল ধাতব স্থাপনা সমূহের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু করা না হলে সরকারের শতাধিক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা এড়ানো সম্ভব নয় বলে অগ্রগতি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রকল্পের সরঞ্জামাদি সব বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু, সেগুলোর যথাযথ সংরক্ষণ না হওয়ার কারণে ওয়ারেন্টির সময়কাল অতিবাহিত হচ্ছে। এই যন্ত্রপাতি অচল হয়ে গেলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো আর এইসব পণ্যের দায়ভার নিবে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রকল্প চালুতে দেশীয় প্রায় ১৪ টি সংস্থার অনুমতি নেয়াতে দীর্ঘসূত্রিতায় এই প্রকল্পে ধীরগতি হয়েছে। এছাড়াও কোভিডের প্রভাব, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এই প্রকল্পের ধীরগতির অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইতিমধ্যে পরিধি বাড়ছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে অনেক বেশি বিমান ওঠানামা করবে। এতে জ্বালানির চাহিদাও বাড়বে। এই বাড়তি জ্বালানি নিশ্চিতে নেয়া প্রকল্পটি সময়মতো শেষ না হলে নতুন টার্মিনাল এর পুরো সুফল মিলবে না।