- ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
- ১৬ আগস্ট ২০২২, ১৯:৪৬
সারা দেশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা লোডশেডিংয়ের কারণে জনগণ ভোগান্তিতে পড়েছে। আমরা সবাই জানতাম, দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি নেই। তাই স্বাভাবিকভাবে জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। জানা যায় যে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি সরবরাহের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিঘ্ন ঘটছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। অন্য দিকে অনেক তেলচালিত বিদ্যুতের প্ল্যান্ট বন্ধ রাখতে হয়েছে উৎপাদনে সরকারি ভর্তুকি বা খরচ বাড়ার কারণে।
গ্যাস ও তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। রাজধানীতে ডিপিডিসি গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে বলেছে, গ্যাসের স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চাহিদার তুলনায় ডিপিডিসিকে কম বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। ফলে ডিপিডিসির কিছু কিছু এলাকায় অনিচ্ছাকৃত লোডশেডিং করা হচ্ছে।
গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য ডিপিডিসি দুঃখও প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন এলাকায় মাইকিংও করছে তারা। রাত ৮টার পরে সব দোকানপাট ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। বিগত এক দশকে বিদ্যুৎ খাত যে সাফল্য অর্জন করেছে, জ্বালানি খাত সে তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে।
অথচ জ্বালানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যথেষ্ট সক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও প্রয়োজনীয় জ্বালানির অভাবে বড় অঙ্কের বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না। তদুপরি, উৎপাদিত বিদ্যুতের বেশির ভাগ নির্ভর করে আমদানি করা জ্বালানির ওপর, যার পরিমাণ ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। ২০১০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশীয় গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা ছিল প্রায় ৯০ শতাংশ, যা কি না ২০২২ সালে কমে প্রায় ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। এর কারণ হলো দেশে নিজস্ব গ্যাস উৎপাদনের হার কমে গেছে। আর এর ফলে দেশীয় জ্বালানি তথা গ্যাসের পরিবর্তে ব্যবহার বাড়ছে আমদানি করা অতি উচ্চমূল্যের এলএনজির ব্যবহার। প্রতি ইউনিট দেশীয় গ্যাসের মূল্য যেখানে দুই থেকে তিন ডলার, সেখানে প্রতি ইউনিট আমদানি করা গ্যাসের জন্য ব্যয় হয় ১২ ডলার থেকে ৩৫ ডলার পর্যন্ত। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের উচ্চমূল্যের ফলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে রিজার্ভে চাপ তৈরি করছে।
জ্বালানি সঙ্কট উত্তরণের উপায় কী? সম্প্রতি ঘোষিত জাতীয় বাজেটে দেশে জ্বালানি সঙ্কট মেটানোর কোনো দীর্ঘমেয়াদি বা স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থাপনার দিকনির্দেশনা নেই। কী রকম হবে দেশের গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়নের পথরেখা বা রোডম্যাপ? একটি জাতীয় বাজেট কেবল বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দের নথি নয় বরং এটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের রূপরেখা, সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার দর্শনও বটে। বিগত ২০ বছরে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে বা দেশীয় কয়লা উন্নয়নে যে ন্যূনতম কর্মধারা চলে, তাতে আর যাই হোক নিজস্ব জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানো অসম্ভব। প্রতি বছরের বাজেট ঘোষণায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়, তার একটি অল্প অংশ বরাদ্দ হয় জ্বালানি খাতে। আর এ বছরের বাজেটও তার ব্যতিক্রম নয়। গ্যাস সরবরাহে একচেটিয়া আধিপত্য মার্কিন শেভরন তেল কোম্পানির। দেশে মোট উৎপাদিত গ্যাস সরবরাহের প্রায় ৫০ শতাংশ উৎপাদন করে শেভরন। জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলায় বাপেক্স বা পেট্রোবাংলার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে নতুন নতুন গ্যাস ক‚প অনুসন্ধান করা যেতে পারে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যতটা সম্ভব সাশ্রয়ীমূল্যে এলএনজি আমদানি করে সরবরাহের ঘাটতি পূরণ এবং মজুদের উদ্যোগ নেয়া দরকার।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে জ্বালানি সঙ্কটের পাশাপাশি দেশে ডলার ও রিজার্ভ সঙ্কটের কথা শোনা যাচ্ছে। কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ভারসাম্য সঙ্কটসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বা মেগা প্রকল্পে নেয়া বৈদেশিক ঋণের কিস্তি ডলারে পরিশোধের কারণে রিজার্ভে চাপ তৈরি হচ্ছে। গত অর্থবছরে দেশে মোট ৯০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি হয়েছে। ওদিকে রফতানি ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালেও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঘাটতির পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন। এ পার্থক্য সামনে আরো বড় হবে বৈদেশিক ঋণের সুদ এবং কিস্তি পরিশোধের কারণে। বলা বাহুল্য, দেশের অর্থনীতি কিছুটা সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। ধারণা করা যায়, খুব শিগগিরই এ সঙ্কট কাটবে না। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির নানা প্রতিকূলতার মধ্যে রিজার্ভ সঙ্কট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রিজার্ভ সঙ্কটের কারণে দেশে ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রতিনিয়ত কমছে। এ মুহূর্তে দেশের রিজার্ভ আসলে কত, তা নিয়ে সরকারের সাথে আইএমএফের মতপার্থক্য আছে। আইএমএফের বক্তব্য গ্রহণ করলে রফতানি উন্নয়ন তহবিল নাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের প্রভাবশালী রফতানিকারকদের যে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দিয়েছে, সেটি বাদ দিলে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ এখন ৩১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। যা দিয়ে আমাদের সর্বোচ্চ চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের আড়ালে দেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়।
সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২০, পাঁচ বছরে পাচারকারীরা তিন লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। যার মধ্যে শুধু ২০১৫ সালে এক বছরেই দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে ৯৮ হাজার কোটি টাকা। এটি আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং এবং রফতানিতে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে করা ব্যাংকিং চ্যানেলে পাচারকৃত অর্থের হিসাব। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস। সংস্থাটি বলছে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ধস নামার কোনো আশঙ্কা নেই। বিশ্বের বাণিজ্যবিষয়ক খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- যদিও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেকটাই কমে এসেছে; কিন্তু তার পরেও এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির সূচকগুলো সঙ্কটের ঝুঁকির বাইরে। তবে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এবং রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আসার পাশাপাশি বাংলাদেশে হয়ে যাওয়া সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের চলতি হিসাব ঘাটতি চাপ সৃষ্টি করছে। বর্তমান টালামাটাল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার আশু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
জনপ্রশাসনে কৃচ্ছ্রতাসাধন নীতি অনুসরণ এবং জনসাধারণকে মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য আহ্বান করেছে সরকার। ডলারের খরচ কমাতে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় কাটছাঁট করা হয়েছে ও বিদেশ যাওয়ার ওপর কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির খরচ সাশ্রয়ে সপ্তাহে এক দিন পেট্রলপাম্প বন্ধ রাখা, এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংসহ বিভিন্ন দিকনির্দেশনা রয়েছে। আমদানি ব্যয় কমাতে গাড়ি, টিভি, ফ্রিজসহ ২৭ পণ্যে শতভাগ এলসি মার্জিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়। একই সাথে বাজারে ডলার সরবরাহ বাড়াতে ব্যাংক ও রফতানিকারকের ডলার ধারণের ক্ষমতা কমানো হয়েছে। রফতানি আয় আসার এক দিনের মধ্যে ডলার নগদায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আবার অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে নেয়া ঋণ স্থানীয় মুদ্রায় স্থানান্তরের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
ইডিএফ থেকে নেয়া ঋণ কেবল রফতানিকারকের নিজস্ব আয় বা জমা বৈদেশিক মুদ্রা থেকে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। ইডিএফের সুদহার ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে করোনার সময়ে দেয়া শিথিলতার মেয়াদ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকার আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দু’টি সঙ্কট দৃশ্যমান। প্রথম, বৈদেশিক মুদ্রা এবং দ্বিতীয় মূল্যস্ফীতি। মুদ্রার বিনিময় হারের আচরণ দেখলে বোঝা যায় চাহিদার তুলনায় জোগানের ঘাটতি আছে। বাণিজ্য ঘাটতি ২৩ বিলিয়নে ঠেকেছে। মোট ডলারের আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যে যেখানে উদ্ধৃত্ত থাকত এখন আর নেই। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১২ মাসের গড় এবং মাসিক মূল্যস্ফীতির হার যেটিই বলা হোক বাস্তবতা হচ্ছে, মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। অতীতের তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
ভৌগোলিকভাবে ভূতাত্ত্বিক গঠনে বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ অঞ্চল। বদ্বীপ অঞ্চল গ্যাসসম্পদে বিপুলভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার কথা, অন্তত বিশ্বের অন্যান্য বদ্বীপ অঞ্চলকে বিবেচনায় নিলে। আন্তর্জাতিক গ্যাস জরিপ প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্যায়নেও একই মত প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে যথেষ্ট মাত্রায় গ্যাস অনুসন্ধান না হওয়ার কারণে গ্যাসসঙ্কট তৈরি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে গ্যাস সম্পদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বাপেক্ষা কম অনুসন্ধানকৃত দেশগুলোর একটি। যথেষ্ট অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভূগর্ভে লুক্কায়িত গ্যাস উত্তোলন করলে সঙ্কট থাকবে না। বাংলাদেশের দিনাজপুর-রংপুর অঞ্চলে বড় আকারের কয়লা মজুদ রয়েছে। এর একটি বড়পুকুরিয়ায় ২০০৫ সাল থেকে অল্প আকারে ভূগর্ভস্থ খননপদ্ধতির মাধ্যমে কয়লা উঠিয়ে একটি কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র চালু রয়েছে। বর্তমানে উত্তোলিত কয়লার পরিমাণ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদার তুলনায় কম বলে সক্ষমতার তুলনায় কম বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। সর্বোপরি এটি গণ্য করা হয় যে আগামী পাঁচ বছরে অর্থাৎ ২০২৭ সালে বর্তমান খনি থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তারপর কী হবে? বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার জোগান দেবে কে? বড়পুকুরিয়ায় কি অধিগ্রহণকৃত জমিতে উন্মুক্ত খনন করে বাড়তি কয়লা তোলা হতে পারে, নাকি অন্য কোনো কয়লা মজুদে ভূগর্ভস্থ খনি স্থাপন করে কয়লা জোগান দেবে। বর্তমানে বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক বড় আকারের বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। এসব চলবে সম্পূর্ণরূপে আমদানি করা কয়লার ওপর ভিত্তি করে। দেশের কয়লা মাটির নিচে রেখে বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার নীতি চললে প্রশ্ন ওঠে এ নীতির যৌক্তিকতা কোথায়? ঘোষিত বাজেটে এর কোনো উল্লেখ নেই। ইতোমধ্যে জাপান সরকার কার্বন নিঃসরণ কমাতে মহেশখালীর মাতারবাড়ি দ্বিতীয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
সমগ্র বিশ্বে জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোও সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎসেবা দেয়ার জন্য রেশনিং করছে। জাপানের মতো দেশ এখন পরিকল্পিতভাবে দিনে দুই ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যান্য দেশগুলোও জ্বালানি সাশ্রয়ের দিকে নজর দিয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের অবস্থাও খারাপ। কারণ আমাদের যে নিজস্ব গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, তা চাহিদার অর্ধেকের চেয়ে কম। বাকিটা বেশির ভাগ উৎপাদন হয় জ্বালানি তেল ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের মাধ্যমে। এখন যদি বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে এলএনজি ও জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়, তাহলে উৎপাদন খরচ তিন-চার গুণ বেড়ে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট বন্ধ রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটি বাস্তবায়নসহ আরো বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। পরিশেষে এ কথা বলতে পারি যে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতিকে আমাদের গ্রহণযোগ্য হিসাবের খাতায় আনতে হবে। কেন রিজার্ভে টান? আর কেনই বা লোডশেডিং? এর পেছনে কোন মাফিয়াচক্র দেশপ্রেমের মুখোশ নিয়ে বা বৈদেশিক অস্থিরতার নাম করে বা নিজেদের ব্যর্থটাকে আড়াল করার নাম করে আমাদের অর্থনীতিকে অচল করার কোনো দুরভিসন্ধি খেলছে কি না? অথবা এটা কি আমাদের কোনো অদূরদর্শিতার ফল। মেগা প্রজেক্ট কি আমাদের অর্থনীতির জন্য বড় ঋণের ফাঁদ না সহায়ক এবং সর্বোপরি আমাদের বাজেট ও পরিকল্পনা কতটা সঙ্গতিপূর্ণ এ জাতীয় বিষয়গুলোকে বিবেচনায় এনে সঙ্কট নিরসনে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক, সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি