দেশে জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়াতে না পারায় পরিশোধিত জ্বালানি তেল, বিশেষ করে ডিজেল আমদানি করতে হচ্ছে বেশি। এক যুগ আগে পরিশোধন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটিতে অর্থায়ন নিশ্চিত করা যায়নি। অথচ এটি বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ২৪ কোটি ডলার সাশ্রয় হতো। এখন এ প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে দেশের বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ।
দেশের একমাত্র জ্বালানি পরিশোধনাগারটি চট্টগ্রামে অবস্থিত। এর বার্ষিক পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন। এটি পরিচালনা করে জ্বালানি বিভাগের অধীন থাকা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। নতুন প্রকল্পে ৩০ লাখ টন সক্ষমতার আরেকটি ইউনিট করার কথা। ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল-২’ নামের প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১২ সালে। এখন এটি এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
এস আলম গ্রুপের প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারকের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে বিপিসি। সাত সদস্যের এ কমিটিতে বিপিসির পরিচালককে (অপারেশন) আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ ছাড়া কমিটিতে বিপিসির দুজন মহাব্যবস্থাপক, পদ্মা তেল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দুজন মহাব্যবস্থাপক আছেন। কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে বিপিসির কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি বিপিসির কাছে পাঠানো চিঠিতে জ্বালানি বিভাগ বলেছে, ইআরএল-২ প্রকল্পটি ইআরএল ও এস আলম গ্রুপের যৌথ উদ্যোগী চুক্তির (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা স্মারকের আগে বিপিসি, ইআরএল ও এস আলম গ্রুপ মিলে সব বিষয়ে সমঝোতা করবে। সমঝোতা চূড়ান্ত হলে ইআরএল ও এস আলম মিলে স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল (এসভিপি) কোম্পানি গঠন করবে। প্রস্তাব অনুসারে ইআরএলের বিদ্যমান পরিশোধনাগার এলাকাতেই ৩০ থেকে ৫০ লাখ টন সক্ষমতার একটি পরিশোধনাগার নির্মাণ করবে এস আলম গ্রুপ।
যৌথভাবে ইআরএল-২ বাস্তবায়নের জন্য গত ২৯ জানুয়ারি জ্বালানি বিভাগের কাছে প্রস্তাব পাঠায় এস আলম। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে ইতিমধ্যে জ্বালানি বিভাগে নির্দেশনা এসেছে বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের একটি খসড়া পাঠানো হয়। খসড়াটি নিয়ে এখন কাজ করছে বিপিসি ও ইআরএল।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সমঝোতা স্মারকের খসড়া যাচাই-বাছাই করতে কমিটি গঠন করে দিয়েছে বিপিসি। কমিটির প্রতিবেদনের পর বিপিসি সিদ্ধান্ত দেবে।
১৫ লাখ টনের বর্তমান পরিশোধনাগারটি ১৯৬৮ সালে নির্মাণ করেছিল ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান টেকনিপ। নতুন পরিশোধনাগারও তাদের মাধ্যমে করার নীতিগত অনুমোদন দেয় সরকার। ইআরএল-২ বাস্তবায়নে প্রায় ১৯ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। যদিও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) বলা হয়, শোধনাগার চালুর পর মাত্র ৪ বছর ৯ মাসের মধ্যে এ টাকা উঠে আসবে।
prothom alo