সিলেট সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ‘আমাদের সহনশীল মনোভাব দুর্বলতা নয়, আমাদের কেউ পালিয়ে যায়নি; নেতা-কর্মীরা শুধু অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।’ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ বক্তব্য তুলে ধরেন।
একই সঙ্গে আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, ড. ইউনূস সাহেব একটি চিঠি দিয়েছেন জাতিসংঘের কাছে। যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তার বিচার চেয়ে। আমি বলতে চাই, এই হত্যাযজ্ঞের বিচার হলে তো উনার বিচার প্রথম হতে হবে। উনি দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় ১০ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, পুলিশ হত্যা করা হয়েছে। এই বিচারের কাঠগড়ায় উনাকে দাঁড় করাতে হবে। আমরা জাতিসংঘসহ বিশ্বমানবতার কাছে তা তুলে ধরছি।’
প্রবাসী নেতা-কর্মীরা বিষয়টি তুলে ধরছেন দাবি করে সাবেক মেয়র বলেন, ‘যারা জোর করে ক্ষমতায় আছে, যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করেছে। আজকে পার্লামেন্টে ১০ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এটা জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং ৩২ নম্বর জ্বালিয়েছে, গণভবন জ্বালিয়েছে, আওয়ামী লীগের আমাদের ২টি অফিস জ্বালিয়েছে ঢাকা শহরে, ৩টি অফিস জ্বালিয়েছে। এ রকম শত শত বাড়িঘর জ্বালিয়েছে। আমি কত বলব। এগুলোর একটি আন্তর্জাতিক তদন্তের দরকার। এবং যারা এটার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার করতে হবে। এটা বিচারের প্রথম আসামি ড. মুহাম্মদ ইউনূস হবেন, আমি বিশ্বাস করি। এবং তাঁদের যারা সহযোগী, তাদের বিচার করতে হবে।’
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অজ্ঞাত স্থান থেকে ৩ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে আনোয়ারুজ্জামান এই বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, ‘তারা আজ যাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেতা-কর্মীদের হত্যা করছেন, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের মনে রাখতে হবে, তাঁদেরও বাড়িঘর আছে। আপনাদের যারা নেতা-কর্মী এখন বেশি লাফাচ্ছে, তাদের সবার বাড়ি আছে। আমরা কিন্তু সহনশীলতায় বিশ্বাস করি। আমরা এ রকম চাই না যে কারও বাড়িঘরে আগুন লাগুক। কিন্তু তারা যে পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে, আমাদের পিঠ কিন্তু দেয়ালে লেগে যাচ্ছে। আমাদের সব নেতা-কর্মী, কেউ আজ সুখে নাই। শুধু আমরা নই, হাসানুল হক ইনুর মতো মানুষ, রাশেদ খান মেননের মতো মানুষ, ডা. দীপু মনি, সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক সাহেব, আপনারা দেখেছেন আবদুস সোবহান গোলাপ, তারপরে দেখেছেন জাস্টিস শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।’
সাবেক মেয়র আরও বলেন, ‘কোর্টের মধ্যে আক্রমণ করছে। এটা কোন বিবেক। তারা কি দেখে না। তাদের চোখে কিছু লাগে না। তারা এই দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? এই কোর্টে যারা এটা করতেছে, তাদেরও বিচার করতে হবে। আজকে যারা বিচারপতিরা এটা করছে।
আজকে মিথ্যা মামলা দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানাসহ আমাদের দলীয় নেতৃবৃন্দের ওপর মিথ্যা মামলা। আমার ওপর প্রায় ১৩টি মামলা দিয়েছে। খুন থেকে শুরু করে চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছে। এই প্রতিটির আমরা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
মো. আনোয়ারুজ্জামান বলেন, যারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কলমের খোঁচায় বাতিল করে দিয়েছে, তাদের নিয়ে আমরা সারা দেশে জনপ্রতিনিধিদের আহ্বান জানাব। এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারী দখলদার, যাদের জোর করে এনে বসানো হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। এবং সব জনপ্রতিনিধিকে—পৌরসভার চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র সাহেবদের আমরা আহ্বান জানাব, সবাইকে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আমি জানি, সবাই কষ্টের মধ্যে আছেন, আত্মগোপনে আছেন। কেন আত্মগোপনে আছেন? তাঁদের জানের কোনো নিরাপত্তা নেই। বাংলাদেশে কোনো মানুষের নিরাপত্তা নাই। অনেকে বলে থাকেন, আপনারা কোথায়, আপনারা পালিয়েছেন। না, আমরা পালিয়ে নেই। আমরা অবস্থান পরিবর্তন করেছি। আমরা এই বাংলার মাটিতে আবার আসব। এই বাংলাদেশেই আমরা থাকব। বাংলাদেশেই আমরা রাজনীতি করব। বাংলাদেশে আজকে যে অবস্থা তারা করছে, এই বাংলাদেশের মানুষই তাদের বিচার করবে।’
ajker patrika