জোর যার মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি তার

জোর যার মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি তার

মেরিটাইম জগতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের মনে জিজ্ঞাসা, মেিরটাইম ইউনিভার্সিটি-টিকে কি উপঢৌকনের আইটেম হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ?

ডিজিটাল যুগে এসে ক্রেষ্টের চেয়ে ক্যাশের গুরুত্ব ইতিমধ্যেই আমরা সবাই জেনে গেছি। এনালগ যুগে পুকুরের মাছ থেকে শুরু করে গাছের আম-কাঠাল-বেল -কলা-তাল-তেল সবই তো এই উপঢৌকনের আইটেম হিসাবে মজুদ ছিল । কেউ যদি কবুতর নিয়ে আসত তাহলে তো কথাই ছিল না । কারন ঘুষের বাজারে কবুতরের মাংসের উপরে জায়গা ছিল একমাত্র নারী মাংস।

এই উপঢৌকন কত প্রকার ও কি কি, উদাহরনসহ তা নিয়ে এভাবে ভাবার কারন হচ্ছে দেশের একমাত্র মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। কারন অনুমিত হচ্ছে যে ঐতিহ্যবাহী মেরিন একাডেমিটি এই ধরনের কবুতর হয়ে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।

বিমানের ককপিট কিংবা জাহাজের ব্রিজ কোনটিই সক্রেটিসদের মত মহাজ্ঞানী বা গুণীদের চায় না। এডমিরালদেরও চায় না। চায় শুধু একটু স্মার্ট ও ভিজিলিয়েন্ট হোমোসেপিয়ান যারা মেন্টালি,ফিজিকেলি, সাইকোলোজিকেলি, এরোনটিকেলি অথবা নটিকেলি ফিট। চায় এমন একজন মানুষ যিনি হাওয়াই বা পানির জাহাজ চালানোর বিজ্ঞান বিষয়ক কলা কৌশল ও পরিভাষাগুলি রপ্ত করতে সক্ষম।

কাজেই কনভেনশনাল কলেজ বা ভার্সিটি না করে বিশেষ মেরিটাইম বা মেরিন একাডেমি করার ধারনাটি এ কারনেই উদ্ভব হয়েছিল। এখানে চব্বিশ ঘন্টা বিশেষ ট্রেনিং এর মাধ্যমে একজন ক্যাডেটের ( এ কারনেই স্টুডেন্ট ডাকা হয় না ) মেন্টাল,ফিজিকেল, সাইকোলোজিকেল ও ইন্টেলেকচুয়েল মৌল্ডিং বা পুণর্গঠনটি করা সম্ভব। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কাজটি সম্ভব নয়।

সত্য কথাটি সহজভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, মেরিটাইম শিক্ষার প্রয়োজনে একটি মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় যতটুকু দরকার ছিল , তার চেয়েও বেশি দরকার ছিল কারো কারো নামের আগে ভিসি পদবীটি বসানোর । এই খায়েশ বা শখের বেসামরিক তাড়ায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ‘ নামকরনটি সহ এই ভার্সিটি শুরুর প্রাথমিক কাজের প্রায় পুরোটাই সম্পন্ন হয়েছে । এই ধরনের বেসামরিক খায়েশ গুলি সামরিক স্ক্যানারে ধরা পড়লে দ্রুত সামরিক খায়েশ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এখানেও হুবহু তাই হয়েছে। অর্থাৎ এখন হাত ফসকে উনার গেছে ‘ইশ্।’ আর আমাদের গেছে চৌদ্দ আনা (কবুতরটি) । মেরিটাইম জগতের প্রতিটি সদস্য বা মেরিন একাডেমির প্রত্যেক এক্স ক্যাডেট আজ এমন করেই কবুতর হারানোর ব্যথাটি অনুভব করছে।

দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় প্রতিষ্ঠিত মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে সংক্ষেপে এটিই হলো মূল শানে নযুল। আর নামকরনের সেই তাড়াটি তো ছিলই।

এটাও সত্যি যে পৃথিবীর অনেক জায়গায় মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু সেখানে তার এই মেরিটাইম পরিবেশ কিংবা এর বেসামরিক বৈশিষ্ট্যটুকু নষ্ট করা হয় নি।

নামটি মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি হলেও অর্গানোগ্রাম দেখে মনে হবে এটি একটি নেভাল ইউনিভার্সিটি। বর্তমান আইন অনুযায়ী এর ভিসিকে ন্যূনতম রিয়াল এডমিরাল পদবীর চলতি বা অবঃ অফিসার হতে হবে। ডিন,ডিপার্টমেন্টাল হেড এবং অন্যান্য পদবীর ক্ষেত্রেও নেিভকে প্রথম চয়েজে রাখা হয়েছে। সহজ কথায়, জোর যার মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি তার।

মূল কারনঃ
পায়ের নিচ থেকে ক্রমাগত মাটি সরে যাচ্ছে এই সরকারের। অন্য কথায় বলা যায় যে, এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি মোটেও ছিলই না। কাজেই পায়ের নীচে কিছু মাটি ভরার নিয়তেই সামরিক এবং বেসামরিক প্রশাসনে উপঢৌকন বিতরনের যে পরিকল্পনাটি নেয়া হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কবুতরটি হলো এই মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি।

অগনতান্ত্রিক সরকারকে নিয়ে বিপদটি এখানেই। হাদিসে আছে ‘ ইন্যামাল আ’মালু বিন্যায়ত।’ কাজেই খারাপ নিয়্যাতে দেয়া এই উপঢৌকনটি বাংলাদেশ নেভি, মেরিটাইম জগত কিংবা দেশের কারো জন্যে মঙ্গল বয়ে অানবে না। বরং কয়েক জন উর্ধতন অফিসারের রিটায়ার্ড লাইফকে আরেকটু অর্থবহ ও আরামদায়ক করার জন্যে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর একটি সংস্থাকে
জনরোষের সম্মুখে ঠেলে দেয়ার ঝুকি সৃষ্টি হয়েছে।

এর পরিবর্তে যা ছিল তাকেই ঠিকভাবে নার্সিং করতে পারলে বিশ্বব্যাপি যে জব সৃষ্টি হবে তাতে নেভির নিচু র্যাংকের অনেকেই মার্চেন্ট নেভিতে ঢুকে লাভবান হতে পারবেন। ইন্ডিয়ান নেভির নিচু বা মাঝারি র্যাংকের অনেকেই আজ মার্চেন্ট নেভিতে কাজ করছেন। কিন্তু সেজন্যে ওদের মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এই ভাবে নেভি গিয়ে দখল করে ফেলে নাই। দয়া করে ইন্ডিয়ার মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির গঠন কাঠামোটি একটু দেখে আসুন। কাজেই কোন সংস্থাকে এই ভাবে উপঢৌকন দেয়া আর সেই সংস্থার সদস্যদের জন্যে প্রকৃত সুযোগ সুিবধা সৃষ্টির মধ্যে পার্থক্যটি স্পষ্ট।

দেশরক্ষা বাহিনীকে এভাবে বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ করার এই ভাবনা গুলি জানিনা কোথা থেকে আসছে ? দেশরক্ষা বাহিনীকে বিভিন্নভাবে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। কখনও প্রজেক্ট ডাল-ভাত( বিডিআরের জন্যে) আবার কখনও প্রজেক্ট মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি (নেভির জন্যে) । এগুলি এমন স্পর্শকাতর ও লোভনীয় হিসাবে প্রতিভাত হয় যে কোন সিভিলিয়ান ঠোট সেগুলি নিয়ে কথা বলতে সাহস পায় না।

গতকাল আয়ুব বাচ্চুর আহাজারি নিয়ে আমার পোষ্টিংটি amadershomoy.com তাদের অন লাইনে দিয়েছে। তা পড়ে একজন লিখেছে , তুই আগে দেশে আয়…। আজকের লেখাটি পড়ে এই ধরনের আমন্ত্রণ যে বেড়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নাই।
এক নেতার গল্প । চতুর্দিকে গোলাগুলি হচ্ছে। ভক্তরা বলছেন, ‘আপনি বসে পড়ুন। ‘ সেই নেতা জবাব দিচ্ছেন, ‘ আমি যদি বসে পড়ি, তাহলে আর দাঁড়িয়ে থাকবে কে ? ‘
আমি তেমন মাপের নেতা নই। বুকে এত সাহসও নেই। শুধু আছে দেশের জন্যে অত্যন্ত মূল্যবান এই কইতরটির জন্যে এক ধরনের টান।
কাজেই এই আমন্ত্রণের ভয়ে আমি যদি আমাদের অতি আদরের এই কইতরের বাচ্চাটি (মেরিন একােডমি) নিয়ে আসল কথাটি খুলে না বলি, তবে আর কে বলবে ?

মনে হচ্ছে , আমাদেরকে নিয়ে কে বা কারা যেন ক্যারাম বা মার্বেল খেলছে। আমরা গুটি বা মার্বেলের মতো ঠোকাঠুকি করে সেই আলটিমেট ধ্বংসের পানে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা যাদেরকে পরামর্শদাতা হিসাবে জোর সন্দেহ করছি, তাদের দেশে কিন্তু এই ধরনের তুঘলকি কান্ড কখনই হয় না। কারন ওরা স্মার্ট ও প্রজ্ঞাবান।

নিজেদের সাময়িক লাভ দেখে আমরা এসবের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিটি টের পাচ্ছি না। সামরিক এবং বেসামরিক প্রশাসনে দলবাজ,তেলবাজ,অদক্ষ,অযোগ্যরা এগিয়ে যাচ্ছে। এমন কাউকে এমন সব পদে বসানো হচ্ছে যা তারা স্বাভাবিক সময়ে কল্পনাও করতে পারতেন না। ফলে নিয়োগদাতার প্রতি চির কৃতজ্ঞ না থেকে পারেন না।

সবকিছু পেছন থেকে কাউন্টিং শুরু হয়ে গেছে। ক্লাসে বা কোর্সে পেছনের সারিদের আজ মহা মৌসুম শুরু হয়েছে । আকাশে বাতাসে তাদের কতই না আনন্দ ! দেশটি যে ধীরে ধীরে ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে ছুটে চলেছে সেই হুঁশটি যেন কারো নেই।

কোনটিতে দেশের লাভ আর কোনটিতে দেশের ক্ষতি, এটি বোঝার মতো শক্তি এই ধরনের লিফট পাওয়া ব্যক্তিদের থাকে না। এরা কখনই এসেট হয় না। এরা হয় লায়াবিলিটিজ। কাজেই ‘ আকাশে বাতাসে এই আনন্দের ফাঁকে’ এমন কুমির এসে যেতে পারে যে দেশের পুরো মেরিটাইম ভাগ্যটি বিলকুল সাবাড় করে ফেলতে পারে।

তাছাড়া যতই বিশেষজ্ঞ হোক, কানের ডাক্তার দিয়ে কখনই হার্টের চিকিৎসা সম্ভব হয় না। প্রশাসনিক দক্ষতাই যদি এখানে বিবেচনা করতে হয়, তবে তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমস্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসাবে নিয়োগ দেয়া দরকার একেক জন জেনারেলকে।

কাজেই সুশীল সমাজ সহ বিভিন্ন জায়গার বিবেক হিসাবে এখনো যে প্রজ্ঞাবানরা অবশিষ্ট আছেন তাদের প্রতি অনুরোধ, সময় থাকতে সবাই সোচ্চার হোন।
কারন নেভি হোক কিংবা মার্চেন্ট নেভি হোক – সবগুলি বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের। এদের মাঝে যারা অহেতুক ঠোকাঠুকি সৃষ্টি করতে চায়, তারা আর যাই হোক – এদেশের বন্ধু নয়। এরা মেরিটাইম শিক্ষারতো নয়ই -এমনকি নেভিরও বন্ধু নয়।