জমিয়তে উলেমা-ই-ইসলামের (জেইউআই–এফ) আমির মাওলানা ফজলুর রেহমান বৃহস্পতিবার বলেছেন, পার্লামেন্টে যে অনাস্থা ভোটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল, সেটি উত্থাপন করা হয়েছিল সাবেক সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার নির্দেশনায়।
পাকিস্তানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ফজলুর রেহমান। ২০২২ সালের এপ্রিলে ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করার ওই তৎপরতা হয়েছিল পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) নামের একটি জোটের মাধ্যমে। নওয়াজ শরিফ নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ (পিএমএল–এন) ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ (পিপিপি) বেশ কয়েকটি দল ওই জোট গঠন করেছিল। সে সময় জোটের প্রধান ছিলেন এই ফজলুর রেহমান।
ওই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ফজলুর রেহমান বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে ছিলাম। কিন্তু অন্য দলগুলোর চাপাচাপির মুখে আমি যদি না বলতাম, তাহলে আমি পিটিআই প্রতিষ্ঠাতাকে রক্ষা করছি বলে আমার ওপর একটি তকমা লাগানো হতো।’
ইমরান খান নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহেরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) সরকার উৎখাতের পর পিএমএল–এনের প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠন হয়। ওই সরকারই ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগে ১৬ মাস পাকিস্তান শাসন করে।
ইমরান খান প্রথমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেন। তাঁর ওই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে জো বাইডেন প্রশাসন। পরে অবশ্য ইমরান এ জন্য সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার ওপর দোষ চাপান।
ইমরান খান গত বছর ফেব্রুয়ারিতে এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল বাজওয়ার সঙ্গে একজন সাংবাদিকের কথোপকথন উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, পিটিআই সরকার উৎখাতের পেছনে যে তাঁর হাত ছিল, তা স্বীকার করে নিয়েছেন জেনারেল বাজওয়া।
পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে ইমরান খান ধারাবাহিকভাবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলে গেছেন। অবশ্য পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের অনেকে পিটিআই সরকার উৎখাতে সাবেক সেনাপ্রধানের সম্পৃক্ততার কথা বলেছেন।
সাক্ষাৎকারে ফজলুর রেহমান বলেন, ‘পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছিল। তখন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইজ হামিদ (তৎকালীন আইএসআই প্রধান) আমাকে বলেছিলেন যে আমি যা চাই তা করতে পারি। কিন্তু তা এই ব্যবস্থার মধ্যে থেকে করতে হবে।’
ফজলুর রেহমান বলেন, জেনারেল হামিদ তাঁকে বলেছিলেন, ‘তিনি এই ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারবেন না।’ অর্থাৎ যা কিছু করার তা পার্লামেন্টের ভেতরেই করতে হবে। রাজপথে কিছু করা যাবে না।
‘আমি তাঁর নির্দেশনাগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিলাম’, বলেন ফজলুর। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে পরে বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি), মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট–পাকিস্তান (এমকিউএম–পি) এবং অন্যরা পিটিআই সরকার থেকে সরে গিয়েছিল।
৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করা জেইউআই–এফ প্রধান ফজলুর বলেন, ‘যখন তারা বলল যে পিটিআইবিরোধীরা এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ, তখন আমার তাঁদের সঙ্গে একমত হতে হয়েছিল। না হলে আমাকে বলা হতো যে আমি ইমরান খানকে রক্ষায় সহযোগিতা করেছি।’
সরকার গঠন
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ইমরান খানের পিটিআই–সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি—৯২টি আসন পেয়েছে। এরপর পিএমএল–এন ৭৯টি এবং পিপিপি ৫৪টি আসনে জয় পেয়েছে।
এই নির্বাচনের ফল নিয়ে কোনো দলই সন্তুষ্ট নয়। এমনকি পিপিপিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে জোট করে নতুন সরকার গঠন করতে যাওয়া পিএমএল–এনও অসন্তুষ্ট।
ফজলুর রেহমান তাঁর দলের নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে সংসদে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তাঁরা সরকারে যোগ দেবেন না। তিনি বলেন, ‘পার্লামেন্টে আর কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। সিদ্ধান্ত হবে রাজপথে।’ নির্বাচনে জালিয়াতি করে পিএমএল–এনকে সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ফজলুর বলেন, পিএমএল–এনের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী শাহবাজ শরিফ সরকার গঠন নিয়ে কথা বলতে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাতে সাড়া না দিয়ে তাঁদের দলকে (পিএমএল–এন) তাঁর সঙ্গে বিরোধী দলে বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
‘কিন্তু শাহবাজ আমার প্রস্তাবে কোনো উত্তর না দিয়ে চলে এসেছেন। আমার কাছে পার্লামেন্ট তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে,’ বলেন ফজলুর রেহমান।
প্রথম আলো