জুলাই অভ্যুত্থান: শেখ হাসিনার ‘সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা’ ছিল, মন্তব্য ট্রাইব্যুনালের

24 Live Newspaper

গণ-অভ্যুত্থানের সময় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ‘সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা’ (মেটিকুলাস প্ল্যান) ছিল এবং সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার যুক্তিতর্ক চলাকালে সোমবার আসামিপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল এই মন্তব্য করেন।

শেখ হাসিনা

এদিন মামলার পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ‘ভুল প্রক্রিয়ায় করা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, শেখ হাসিনা কোটা বাতিল করলেও আদালতের রিটের কারণে তা পুনর্বহাল হয় এবং এখানে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেই। এর জবাবেই ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘…আপনি যদি সক্রিয়ভাবে অংশ না নেন…আদালতকে সহযোগিতা না করেন, সেটাই তো প্রভাব। …আপনার একটি মেটিকুলাস প্ল্যান ছিল এবং সবকিছুই আপনার নিয়ন্ত্রণে ছিল।’

যুক্তিতর্কে আইনজীবী আমির হোসেন আরও বলেন, আন্দোলনে লক্ষ্যভিত্তিক নিপীড়ন হলে ছাত্রনেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম বা নাহিদ ইসলামকে হত্যা করা হতো। কিন্তু সংগঠক আবু সাঈদ ছাড়া আর কেউ মারা যাননি। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘টার্গেট করা মানেই সবাইকে মেরে ফেলা নয়। শীর্ষ নেতা (শেখ মুজিবুর রহমান) তো পাকিস্তানিদের পকেটে ছিলেন। তাকে মেরেছে? …যারা টার্গেট করে, তাদের কৌশল থাকে। কাকে, কখন, কোথায় এবং কতটুকু মারবে।’

একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল জানতে চান, রাষ্ট্র চাইলে বিচারপ্রক্রিয়া প্রভাবিত করার মতো ‘সুইচ’ হাতে রাখে কি না। আইনজীবী পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘তাহলে কি তিনি ধরে নেবেন, এই বিচার রাষ্ট্র যা চাবে তা-ই হবে?’ জবাবে ট্রাইব্যুনাল জানায়, রাষ্ট্র যা চাইবে তা করতে হবে না, তবে রাষ্ট্রের হাতে অনেক ব্যবস্থা থাকে। যেমন, রাষ্ট্র নিরাপত্তা বা বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিলে আইনজীবীর পক্ষে কাজ করা সম্ভব হবে না।

তবে বিচার প্রক্রিয়া শেষে রায় ঘোষণার সময় সরকারের কোনো প্রভাবকে পরোয়া করা হবে না বলেও ট্রাইব্যুনাল স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়। ট্রাইব্যুনাল বলে, ‘সব ব্যবস্থা করে দেওয়ার পরে রায়ের প্রশ্ন যখন আসবে, দ্যান উই উইল নট কেয়ার গভর্নমেন্ট’। উল্লেখ্য, বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার চলছে। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।