by Minar Rashid 20 November 2022
( দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি, এ মুহুর্তে বৃহত্তম বললেও বেশি বলা হবে না। সেই দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্মদিন নিয়ে দেশটির গণমাধ্যম নীরব! অথচ এই দিনটিতে তাঁর সফলতা/ ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা/ সমালোচনা করে অনেক কিছু লেখা যেত যা থেকে সবাই উপকৃত হতেন ।
আমরা হয় কাউকে দারুণ ভালোবাসি নয়তোবা দারুণ ঘৃণা করি – এ দুটির মাঝামাঝি যেতে পারি না! দেশের পত্রিকাগুলো এব্যাপারে এক ধরণের হীনম্মন্যতা/ কাপুরুষতার পরিচয় দিলেও লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সুরমা এব্যাপারে একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। সাপ্তাহিক সুরমার সম্পাদক সামসুল আলম লিটন ভাইয়ের অনুরোধে অল্প সময়ের মধ্যেই এটি লিখেছি! লেখাটি পড়ে আপনারাও আপনাদের গঠণমূলক সমালোচনা এবং উক্ত নেতা এবং তাঁর দলের কাছে আপনাদের প্রত্যাশার কথা মন্তব্য কলামে তুলে ধরুন ! )
এদেশের এলিট শ্রেণীর কাগজগুলো অমিতাভ বচ্চনের নাত্নির জন্মদিন কোনদিন সেটাও জানিয়ে দেয় , তারকা দাদা-দাদীর আহ্লাদের খবর ছাপিয়ে নিজেরা পুলকিত হয় । অথচ দেশের অন্যতম বৃহৎ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্মদিন উপলক্ষে দুটি লাইন লিখতে পারে না । নিরপেক্ষতার দাবিদার এই কাগজটি গত জন্মদিনে প্রথম পাতার পুরোটাই শেখ হাসিনাকে উৎসর্গ করেছিল। একেই বলে বোধ হয় , ঠ্যালার নাম বাবাজি! এটিই এখন এই সব নির্লজ্জ ও ব্যক্তিত্বহীনদের সাংবাদিকতার এথিকস!
এমতাবস্থায় দিবসটি নিয়ে সাপ্তাহিক সুরমার বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে । বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে একটু সাহসী কাজও বটে । এক ধরণের বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাশনের নামে যে মানসিক পঙ্গুত্ব আমাদেরকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলেছে – এই উদ্যোগটি তার বিরুদ্ধে একটি প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করতে পারে।
আধিপত্যবাদের তল্পিবাহকদের কোর্ট তারেক রহমানকে ‘গন্ধম -ফল’ বানিয়ে রেখেছে। তারেক রহমানই সম্ভবতঃ পৃথিবীর একমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যার বক্তব্য প্রচারে একটি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে! তারেক রহমানকে একটি অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দেওয়ায় জাজ জনাব মোতাহার হোসেনকে দেশ ছাড়া করেছে! সরকারের মনের মত রায় না দেওয়ায় একজন প্রধান বিচারপতির প্রতি কী আচরণ করা হয়েছে, তাও আমরা দেখেছি।
একারণেই সজীব ওয়াজেদ জয় তাকে হত্যা চেষ্টার জন্যে ভয়ংকর খুনী (?) শফিক রেহমান এবং মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আদালতে গেলে স্বয়ং আদালতের মহামান্য বিচারক তাঁর পেছনে পেছনে হেটে এসে তাকে গাড়িতে তুলে দেন! এই মজাদার খবর বা ছবিটি দেশের কোনো অগ্রসর পত্রিকা ছাপানোর সাহস রাখে না!
অথচ তারেক রহমানরা ক্ষমতায় থাকতে দেশের সবচেয়ে অগ্রসর ভাবনার নিরপেক্ষ পত্রিকাটি তারেক রহমান কিংবা হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে কিছু না লিখলে কিংবা তারেক রহমানের গাল ফোলা কার্টুনটা না ছাপালে ভালো করে ঘুমাতে পারতো না। ‘অনগ্রসর’ তারেক রহমান তাতে মাইন্ড করতেন না, কিছুই বলতেন না। ক্লাইমেক্সটি হলো, আলো-স্টার চক্র তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যেভাবে মিথ্যা বলতেন আজ সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে জাজ্বল্যমান সত্য কথাটিও তেমনভাবে বলতে পারেন না ! এরপরেও পত্রিকাটির কিংবা একই ঘরানার সুশীলদের দৃষ্টিতে সজীব ওয়াজেদ জয় অগ্রসর ভাবনার মানুষ, জয়দের দল অগ্রসর ভাবনার দল !
ট্রাবলিং ট্রুথটি হলো,এমন একটি বিচার ব্যবস্থার অধীনেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত কল্পিত অভিযোগের একটারও ন্যূনতম বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে পারে নাই! ছাত্র লীগের এক জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে যত টাকা দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে- পুরো হাওয়া ভবনের উপরে তা নেই (ন্যূনতম সাপোর্টিং ডকুমেন্ট সহ ) । এই হাওয়াভবন ক্লাইমেক্স নিয়ে একাডেমিক গবেষণা করলে এদেশের দালাল মিডিয়ার অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে ।
আশা করব, সুরমার এই শুভ উদ্যোগটি কিংবা আমার এই লেখাটি তারেক রহমান সম্পর্কে একটি সঠিক ও নির্মোহ মূল্যায়ন তুলে ধরবে। এই উদ্যোগটি শুধুমাত্র ভক্তদের মনে অন্ধ আবেগ সঞ্চারিত করবে না বরং একাডেমিশিয়ান বা গবেষকদের জন্যে চিন্তা বা গবেষণার খোরাক হবে , তাদেরকে আরও চিন্তা – গবেষণা করতে উৎসাহ জোগাবে। আবেদন একটাই – সাহস করে সত্য বলা শুরু করুন, সেটা যার পক্ষেই যাক না কেন!
দুই.
গত ষাট সত্তর বছর সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ নামের এই দেশটি বা এই ভূ- খন্ডটি চারটি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশের হাত থেকে স্বাধীনতা পেলেও জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি জুটে নাই। বরং নতুন অবয়বে ঔপনিবেশিক নিপীড়ন শুরু হয়েছিল। এদেশের মানুষের মুক্তির আকাঙখার সাথে পাকিস্তানকে ভাঙার ইন্ডিয়ান স্বপ্ন একই ফ্রিকোয়েন্সিতে পড়ে যায়! ফলে স্বাধিকার অর্জনের রাজনৈতিক সংগ্রামে এবং ১৯৭১ সালের সামরিক কনফ্রন্টে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের জন্যে কাজটি অনেকটা সহজ হয়ে যায়!
এরপরের রাজনৈতিক জটিলতাটি হলো বাকশালের সৃষ্টি এবং পতন। গণতন্ত্রের এক মানসপুত্র দেশের গণতন্ত্রকে বাকশাল নামক খাদে ফেলে দেয়! তারপর খোন্দকার মোশতাক, ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ সেটিকে আরো ঘোলা করে। তখন গণতন্ত্রের জম হিসাবে বিবেচিত এক জেনারেল বাকশালের সেই খাদ থেকে দেশ ও দেশের গণতন্ত্রকে রেসকিউ করেন। পুরো ঘটনাটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের আশ্চর্যান্বিত করেছে।
তৃতীয় রাজনৈতিক জটিলতাটি স্বৈরাচার এরশাদের উথ্থান I সেই স্বৈরাচার আবার আগের বাকশালের রেখে যাওয়া কলকব্জাদের সমর্থন ও আশীর্বাদ পুরোটাই পেয়েছিল। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্টকে অপসারন করে এরশাদ ক্ষমতা দখল করলে বর্তমান স্বৈরাচার তার আগমণকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, “আই এম নট আনহ্যাপি! ” স্বৈরাচারী এই যুগলের সেই হ্যাপিনেস বা হ্যাপি লিভিংএর যবনিকাপাত ঘটান গৃহিনী থেকে রাজনীতিতে আসা এবং পরবর্তিতে আপসহীন নেত্রী হিসাবে চিহ্নিত বেগম খালেদা জিয়া।
সর্বশেষ এবং চতুর্থ সংকটটি হয়েছে বর্তমান ফ্যাসিবাদের উথ্থান!
কারণ প্রথম তিনটি রাজনৈতিক সংকটের চেয়ে শেষেরটি ভিন্ন ও জটিল! আধিপত্যবাদ তার Bags of Cash and advice ব্যবহার করে দেশের মিডিয়াকে কব্জা করেছে। তাদের সেই প্রচেষ্টা বা সেই ইনভেস্টমেন্ট এর আশি ভাগ খরচ করেছে শুধু তারেক রহমানের পেছনে। এব্যাপারে একাডেমিক গবেষণা হলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে।
বর্তমান সমস্যার গভীরতা আমাদেরকে সম্যক উপলব্ধিতে টানতে হবে । আগেকার স্বৈরাচারকে জনতা যত সহজে ও যত স্পষ্টভাবে চিনতে পেরেছিল বর্তমান বাকশালি ফ্যাসিবাদকে তত স্পষ্টভাবে বুঝতে বা চিনতে পারে নাই । ফ্যাসিবাদ প্রয়োজনে গণতন্ত্রের মুখোশ পড়ে , সমর্থক গোষ্ঠির মাঝে অন্ধ এবং ক্রুদ্ধ আবেগ প্রবিষ্ট করিয়ে বিশাল কর্মীবাহিনী তৈরি করে । ফলে ফ্যাসিবাদের মোকাবিলা স্বৈরাচারের মোকাবেলার চেয়ে অনেক কঠিন কাজ । আর সেই কাজটির নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে তারেক রহমানকে !
তারেক রহমানের রাজনীতির সবচেয়ে বড় কারিশমাটি হলো, দলের আভ্যন্তরীন ঐক্য ধরে রেখে তিনি ভেতরের সম্ভাব্য দালালদের নিস্ক্রিয় বা অকেজো করে ফেলেছেন। এদেরকে কাজে লাগিয়েই তিনি বোধ হয় তৃণমূলের সাথে যোগাযোগ আরো নিবিড় করে ফেলেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন এদেশের সাধারণ জনগণের ভাগ্য এবং জিয়া পরিবারের ভাগ্য এক লাইনে চলে এসেছে। এখন সরকার ইচ্ছে করলেও দল থেকে কিছু দালাল বের করে (বাতাসে যা ছড়িয়েছে ) নিজের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে পারবে না। কারণ দল বা জিয়া পরিবারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে সরকারের দালালি করলে এর সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে অবহিত হয়ে গেছেন। যে কোনো পর্যায়ের যে কোনো নেতা এই কাজ করলে মুহূর্তেই হিরু থেকে জিরো হয়ে পড়বেন !
জাতীয়তাবাদ এবং আধিপত্যবাদের দ্বন্দ্ব সংগ্রামে এভাবে প্রতিবারই একজন নতুন নেতার সৃষ্টি হয়।উপরে উল্লেখিত প্রথম সংকটটি যেমন একজন শেখ মুজিব সৃষ্টি করেছে ( যদিও তিনি নিজেই আবার দ্বিতীয় সংকটের কারণ হয়েছিলেন ! ), দ্বিতীয় রাজনৈতিক সংকটটি যেমন একজন জিয়াউর রহমান সৃষ্টি করেছে, তৃতীয় সংকটটি যেমন একজন খালেদা জিয়া সৃষ্টি করেছে তেমনি বর্তমান এবং সর্বশেষ সংকটটি এক তারেক রহমান সৃষ্টি করবে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে! চারপাশের সকল আলামত দেখে মনে হচ্ছে এটা সম্ভবতঃ নিয়তির লেখা হয়ে পড়েছে।
তিন.
তবে চূড়ান্ত বিজয়ের আগে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত আত্মতৃপ্তি বা আত্মতুষ্টি সবচেয়ে বড় শত্রু হিসাবে দাঁড়িয়ে পড়তে পারে । ছোট হোক বা বড় হোক ,বর্তমান ফ্যাসিবাদ বিরোধী কোনো গোষ্ঠি বা ব্যক্তিকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না, কাউকেই অবজ্ঞা করা যাবে না। বর্তমান গ্লোবাল বাস্তবতায় কুশলী হতে দোষ নাই । তবে যা করতে হবে তা সকল রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের সন্তুষ্টি ও আস্থায় রেখেই করতে হবে । প্রজ্ঞা ও ধৈর্য্যের মাধ্যমে জটিল সম্পর্কেও সহজ ও সাবলীল গতি টানা যায় ।
এ পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মকান্ড দেখে অনুমিত হয়, জটিল রাজনৈতিক ম্যানুভারিং এর নিমিত্তে প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক কৌশল তারেক রহমান যথেষ্ঠ পরিমাণে অর্জন করেছেন। কাজেই সামনের জটিল রাজনৈতিক ম্যানুভারিংগুলো সঠিকভাবে করবেন বলেই দৃঢ় আশা পোষণ করছি। দোয়া করছি, পরম করুণাময় যেন তাঁকে দেশ ও জাতির স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে সহায়তা করেন।
বিবেক বিক্রি করা আমাদের মিডিয়া হাওয়া ভবনের অনেক তিলকে শুধু তাল নয় – আরও বড় করে তুলে ধরেছে। মতলববাজ দালাল মিডিয়ার এই সব বুদ্ধি বৃত্তিক অসততার প্রতিবাদ করলেও আমরা সব সময় বলে এসেছি যে দুর্নীতির এই তিলগুলি থাকাও সমীচীন বা কাঙ্ক্ষিত ছিল না।
এই ফ্যাসিবাদকে সরানো তারেক রহমানের জন্যে যতটা কঠিন না হবে তার চেয়েও বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে ফ্যাসিবাদের রেখে যাওয়া দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলি- যেখানে শুধু খেলোয়াড়ের পরিবর্তন হবে, সেগুলোকে কন্ট্রোলে রাখা। এদেরকে শক্তভাবে সামাল দিতে না পারলে লাভের গুড় সব পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলবে। তজ্জন্যে নৈতিকভাবে উন্নত , যোগ্য এবং দক্ষ একটা গ্রুপকে তৈরি করতে হবে। এদেরকে আবার অন্য এক বা একাধিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট গ্রুপ দিয়ে মনিটরিং করতে হবে। কারও ব্যাপারে সামান্য নৈতিক শৈথিল্য দেখলে সাথে সাথেই সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে! এই লোভী ও অনৈতিক মানুষগুলো দেশ ও দলের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে এবং সুযোগ দিলে সামনে আরও ক্ষতি করবে।
সর্বশেষ এক লাইনে শুধু একটি কথাই বলতে চাই। আমরা তারেক রহমানকে জিয়ার সন্তান হিসাবে দেখতে চাই – কারও বন্ধু হিসাবে দেখতে চাই না।
কখনও এরূপ মনে হলে সেই কথাটি যেন নির্ভয়ে বলতে পারি, সেই সুযোগ ও এই নিশ্চয়তাটুকু চাই।
বিশেষণের ভারে ভারাক্রান্ত তারেক রহমানকে নয় – মেদহীন, বিশেষণহীন, চামচাবিহীন তারেক রহমানকেই দেখতে চাই।
এরকম কিছু কামনা ও আশা নিয়ে জানাচ্ছি , শুভ জন্মদিন ।