জনসম্পৃক্ত কর্মসূচিতে গুরুত্ব দিচ্ছে বিরোধীরা

জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর অনেকটা ধীরে-সুস্থে এগুচ্ছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। র‌্যালি-মানববন্ধন ও কালো পতাকা মিছিলের মতো অহিংস কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। একদফা দাবির পাশাপাশি এবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদসহ ইস্যুভিত্তিক জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা করছে বিরোধীরা। একইসঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের মুক্তির জন্য আইনি লড়াইয়ের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিএনপি মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের মুক্তির পর বড় কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা রয়েছে তাদের। তবে সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের কারণে শিগগিরই দলের কাউন্সিল কিংবা সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কোনো সুযোগ দেখছেন না বিএনপি নেতারা।

বিএনপি’র নীতি-নির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানান, বিএনপি’র আহ্বানে দেশের বেশির ভাগ মানুষ ৭ই জানুয়ারির একতরফা জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছে। ডামি প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনের পর সরকার গঠন করলেও স্বস্তিতে নেই তারা। পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন না পাওয়ায় সরকারের ভেতরে একধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। তার ওপর প্রতিনিয়ত কমছে রিজার্ভ। নিত্যপণ্য দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ও ডলার সংকটের কারণে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।

গ্যাস সংকটও রয়েছে চরম। আসন্ন রমজানকে টার্গেট করে দ্রব্যমূল্য, গ্যাস সংকটসহ ইস্যুভিত্তিক জনসম্পৃক্ততামূলক নানা কর্মসূচি দেয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। এ ছাড়া আড়াই মাসব্যাপী আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে না পারায় নির্বাচনের পর বিএনপি’র তৃণমূল নেতাদের মধ্যে একধরনের হতাশা বিরাজ করছে। দলের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে নিয়মিত কর্মসূচি থাকবে। সেক্ষেত্রে মানববন্ধন, পদযাত্রা, প্রতিবাদ সমাবেশ দেয়া হতে পারে।দলীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহে ভার্চ্যুয়ালি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈঠকে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। দলটির স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, জাতীয় নির্বাচনের পর সরকার অনেকটা নমনীয়। বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার ও মামলা-হামলার পরিমাণ কমে এসেছে। কারাবন্দি নেতাকর্মীদেরও মুক্তি দেয়া হচ্ছে। তবে কারাবন্দি দলের সিনিয়র নেতাদের ব্যাপারে সরকারের মনোভাব এখনো কঠোর। ২৮শে অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনার মামলায় দলের মধ্যমসারির নেতারা জামিন পেলেও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমীগর, স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য, তিনজন যুগ্ম মহাসচিবসহ সিনিয়র একডজন নেতা জামিন পাননি। তাই সিনিয়র নেতাদের জামিনের প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। সিনিয়র নেতাদের মুক্তির পর বড় কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা করবে তারা।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের জন্য বিএনপির সঙ্গে এখনো লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়নি। বুধবার গণতন্ত্র মঞ্চের মিটিং হয়েছে। আমরা আগামী ৯ই ফেব্রুয়ারি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবো। এরমধ্যে কিছু কিছু ছোট কর্মসূচি পালন করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি’র কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে হয়তো তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করবে। আলোচনা হচ্ছে- পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছি। বিএনপি’র সঙ্গে আলোচনা করেই যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করা হবে।

এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রজমান মঞ্জু মানবজমিনকে বলেন, বর্তমান সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জোর করে ক্ষমতায় থাকলেও জনগণের সমর্থন তাদের ক্রমাগত কমেছে। এর কারণ ব্যাপক দুর্নীতি, লুটপাট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটসহ নানা বিষয়ে সরকারের চরম ব্যর্থতা। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে কর্মসূচি দেয়ার মাধ্যমে বিরোধী দলগুলো ও বঞ্চিত জনগণের মধ্যে একটা পরোক্ষ ঐক্য তৈরি হয়ে যাবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক মানবজমিনকে বলেন, ইতিমধ্যে সংসদ বাতিলসহ একদফা দাবিতে কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছি। জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আগামীতে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিসহ জনসম্পৃক্ততামূলক নানা ইস্যু নিয়ে কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা করছে আমাদের দলের হাইকমান্ড। শিগগিরই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে আছি, রাজপথে থাকবো।

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন, অবৈধ সংসদ বাতিল ও একদফা দাবিসহ নানা ইস্যুতে আমরা কর্মসূচির মধ্যেই আছি। গত মঙ্গলবারও ডামি সংসদ বাতিল ও দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কালো পতাকা মিছিল পালন করেছি। আগামীতেও আমাদের জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি থাকবে। সরকার পরিকল্পিতভাবে বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের কারাগারে আটকে রেখেছে অভিযোগ করে রিজভী আহমেদ বলেন, একই মামলায় ডামি নির্বাচনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের সরকার মুক্তি দিয়েছে। অথচ বিএনপি নেতাদের মুক্তি দিচ্ছে না। এতেই প্রমাণিত মামলাগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট।

manabzamin