১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধি
ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ছাত্রীরাও দানবের ভূমিকায় বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে। একজন ছাত্রী আরেক ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনই শুধু নয়, ভিডিও ধারণ করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে নির্যাতনের কথা প্রকাশ করলে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হবে।
বছর খানেক আগে ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ছাত্রলীগ নেত্রীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে হৈ চৈ কম হয়নি। ছাত্রলীগের ছাত্রদের সন্ত্রাস থেকে পিছিয়ে নেই ছাত্রীরাও। বুয়েটের আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। একই কায়দায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চার ছাত্রকে রাতভর পিটানোর খবর বের হয়েছে মাত্র দুই দিন আগে।
ছাত্র লীগের সন্ত্রাসীদের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে নারীবাদিরা বরাবরই নীরব থাকেন। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লীগের সন্ত্রাসী এক নেত্রীর সন্ত্রাসের ঘটনা এখন ভাইরাল। ছাত্রী হলে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে ছাত্র লীগের সন্ত্রাসী নেত্রীর নেতৃত্বে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে নির্যাতন করা হয়েছে রাতভর।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী এই সন্ত্রাসে নেতৃত্বে দেয়। সানজিদা ও তাঁর অনুসারীরা দেশরত্ন শেখ হাসিনা নামের ছাত্রী হলের গণরুমে রাতভর নির্যাতন চালায় ভুক্তভোগী এই ছাত্রীর ওপর।
নির্যাতনের সময় তাঁকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল ও এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছ জঙ্গি ছাত্রলীগের সদস্যরা।
হলটির প্রভোস্ট সামসুল হক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী মঙ্গলবার (১৪ই ফেব্রুয়ারী) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। নির্যাতনকাণ্ডে তার সঙ্গী তাবাসসুম ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। ভুক্তভোগী ছাত্রীও একই বিভাগের।
ভুক্তভোগী ছাত্রী গণমাধ্যমকে জানান, গত ৮ই ফেব্রুয়ারি প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়। এ জন্য তিনি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের এক আবাসিক ছাত্রীর কাছে অতিথি হিসেবে থাকেন। বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুম নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান, কারা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে থাকেন। এ সময় ওই ছাত্রী হাত তোলেন। হলে ওঠার বিষয়টি আগে তাবাসসুমকে না জানানোয় মারাত্মক রেগে যান তিনি। এরপর তাঁকে হলের কক্ষে (প্রজাপতি-২) দেখা করতে বলেন। তবে অসুস্থ থাকায় দেখা করেননি তিনি। ১১ই ফেব্রুয়ারি ক্লাসে গেলে তাঁকে বকাঝকা করেন তাবাসসুম।
নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী অভিযোগ করেন, এই ঘটনার জেরে ১২ই ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে হলের গণরুমে (দোয়েল) তাঁকে ডেকে নেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী। সেখানে পাঁচ থেকে ছয়জনের একটি দল তাঁকে দিবাগত রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত নানাভাবে নির্যাতন করেন।
জঙ্গি ছাত্রলীগের নেত্রীর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দিচ্ছিল আর এর ফাঁকে ফাঁকে চালাচ্ছিল শারীরিক নির্যাতন। কিল, ঘুষি, থাপ্পড় কোনোটাই বাদ রাখেনি। কাপড় আটকানোর আলপিন দিয়ে পায়ের ঊরুতে ফুটাচ্ছিল।
তিনি বলেন, নির্যাতনের সময় আরেক ছাত্রী মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিওধারণ করেন। একপর্যায়ে বিবস্ত্র করে ভিডিওধারণ করা হয়। কাঁদতে কাঁদতে তিনি পা ধরে ক্ষমা চাইলেও তাঁরা কোনো কথা শোনেননি। গণরুমে এ সময় উপস্থিত সাধারণ ছাত্রীরাও কোনো কথা বলেননি।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, বিবস্ত্র করে ভিডিওধারণের সময় হুমকি দেওয়া হয়। বলা হয় এই কথা কাউকে জানালে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এমনকি প্রভোস্টের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয় লিখে দিয়ে আমাকে বলেছে, হাসবি আর এগুলা বলবি। সব তারা ভিডিও করে রেখেছে। আপুরা মারার সময় বলছিল “মুখে মারিস না, গায়ে মার যেন কাউকে দেখাতে না পারে।”’
রাতের কথা কাউকে জানালে ওই ছাত্রীরা তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী আরও বলেন, এ কথা কাউকে বললে হল থেকে বের করে দেবে বলে শাসায়। এই কথা বাইরে গেলে ভিডিও ভাইরাল করে দেবে। তাঁরা বলে, তুই হলের প্রভোস্ট স্যারকে বলবি, সব আমার দোষ, এই হলে থাকব না। এসব বলে হল থেকে একেবারে চলে যাবি। এই কথা ১৪ তারিখ বলবি।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, অনেকবার ক্ষমা চেয়েছি, কেউ কোনো কথা শোনেনি। রাত সাড়ে তিনটার পর তাঁরা চলে যায়। আমি গণরুমেই ছিলাম। এরপর সকাল নয়টার দিকে ক্যাম্পাসের সামনে থেকে বাসে উঠে গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। আমার শরীর ব্যথা। জ্বর অনুভব করছি। ঠিকমতো খেতে পারছি না। গালের ভেতর সামান্য কেটে গেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। যাঁরা জড়িত, প্রত্যেকের শাস্তি চাই।
জঙ্গি ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসবের কোনো সত্যতা নেই। ওই মেয়ে মিথ্যা বলছে। কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
শেয়ার করুন: