ছবিটির জন্যই কি বিপাকে আশিক?

logo

মরিয়ম চম্পা

১৬ অক্টোবর ২০২২, রবিবার

রাত সোয়া তিনটা। মিরপুর পল্লবী থানা এলাকার ৬ নম্বর সেকশনের সড়কে একটি অভিযান পরিচালনা করছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ওই অভিযানের ছবি  পরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযান নিয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন ধরনের তথ্য। গভীর রাতের অভিযানের এই ছবি নিয়ে আলোচনার মধ্যে ওই এলাকা থেকে নিখোঁজ হন সাবেক ছাত্রদল নেতা মফিজুর রহমান আশিক। তার পরিবারের দাবি ওইদিনের অভিযানের ছবির সূত্র ধরে আশিককে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাকে আটক বা গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেনি কেউ। এ কারণে দুশ্চিন্তায় পরিবার। এর আগেও একবার আশিককে তুলে নেয়া হয়েছিল। তিন মাসের বেশি সময় পর তিনি ফিরে আসেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে পল্লবী এলাকায় অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তবে আশিককে আটক বা গ্রেপ্তারের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কিছু বলছেন না। সূত্রের দাবি ছবির ঘটনা তদন্তে আশিককে আটক করা হয়ে থাকতে পারে।  অভিযানের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানে ককটেল বিস্ফোরণের তথ্য পেয়ে তা নিস্ক্রীয় করতে যায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও পল্লবী থানা পুলিশ। কে বা কারা ওই ছবি তুলে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে।

কারা এটি করছে তা তদন্ত করতে এখন সিটিটিসি কাজ করছে।  আশিকের পরিবারের দাবি, গত শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টার পরে কোনো একটি সময়ে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে মিরপুর সি-ব্লকের সেকশন-৬, বাড়ি-৫/১ এর বাসা থেকে তুলে নেয়া হয় আশিককে। সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার এই ভবনটির ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন আশিক। সম্প্রতি তিনি দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।  স্থানীয়রা জানান, আশিক নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ওই এলাকার সড়কে অবস্থান নেন। তারা সেখানে বিস্ফোরক সদৃশ কিছু পরীক্ষা করছিলেন। তাদের সেই কার্যক্রমের ছবি পাশের ভবন থেকে তোলা হয়েছিল। পরে তা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ হয়। ঘটনাস্থলের পাশে একটি মাদ্রাসাও রয়েছে। পরের দিন শুক্রবার সকাল থেকে মিরপুরের সংশ্লিষ্ট এলাকার একাধিক বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালান।  ঢাবি’র ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মফিজুর রহমান আশিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আশিকের পারিবারিক সূত্র জানায়, ঘটনার দিন শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় আশিকের ভাইয়ের সঙ্গে তার মায়ের অসুস্থতার বিষয়ে কথা হয়।

পরে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর আশিকের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা পাওয়া যায়। এ সময় একাধিকবার ফোন এবং  মেসেজ দিলেও তিনি রিসিভ করেনি। সন্ধ্যা ৬টার পর অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বলা হয় ‘আই অ্যাম এরেস্ট, (বাই) কাউন্টার টেরোরিজম’। এরপর আর কোনো কথা বা খোঁজ মিলেনি তার।  আশিকের ছোট ভাই হিরু রহমান মানবজমিনকে বলেন, আশিক নিখোঁজ হওয়ার পর গতকাল তিনি ঢাকায় আসেন। পল্লবী থানায় নিখোঁজ উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি। নিখোঁজ আশিকের বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জসীম উদ্দীন মোল্লা বলেন, মিরপুর বিভাগের অধীনে সাতটি থানার কোনো পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি। এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনার (স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ বিভাগ) মিশুক চাকমা মানবজমিনকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১টা ২০ মিনিটের পরে আমরা একটি রেগুলার বোমকল পাই।

কল পাওয়ার পর আমাদের টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে এটি ডিফিউজ করে। এ সময় আমাদের কর্মকর্তাদের ছবি গোপনে কেউ তুলে সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এবং বলা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে জঙ্গির নাটক সাজিয়ে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এটা গুজব ছিল। তিনি বলেন, ছবিগুলো আসলে কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তোলেনি। এগুলো সাধারণ কেউ তুলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে খারাপ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। আমরা সাধারণত এসব ঘটনার ছবি তুলে অনেক সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেখে থাকি। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতের ছবিগুলো সংশ্লিষ্ট স্থানের অভিজ্ঞ কেউ তুলেছেন। কে বা কারা ছবিগুলো তুলে গুজব ছড়াচ্ছে এ বিষয়ে আমাদের লোকাল থানা পুলিশ এবং কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তদন্ত করে দেখছে কেন এবং কারা এই গুজব ছড়িয়েছে।  নিরাপত্তা বাহিনীর ছবি তুলে কেন এটা করা হলো তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ছবি তোলার অভিযোগে সাবেক ছাত্রদল নেতা আশিককে মিরপুরের বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু এটা একটি তদন্তাধীন বিষয়। এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।