চেতনার অত্যাচার আর কত

logo

মুক্তিযুদ্ধকে এ যাবৎ শুধু অস্ত্র বা হাতিয়ার বানানো হয়েছে। একে তরবারি, ছুরি, বন্দুক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ধামা দিয়ে আপনি দা’য়ের কাজ করতে পারবেন না। তরবারি দিয়ে আপনি ফল কাটতে পারবেন না, তার জন্য ছুরি লাগবে। যখন যেই হাতিয়ার দরকার ঠিক সেই হাতিয়ার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকে সামনে আনা হচ্ছে। চেতনার এই হাতিয়ারটি থাকে কর্তার অন্তরে বায়বীয় অবস্থায়। ভিন্নমতকে দমিয়ে রাখার জন্য কর্তা এটিকে কায়দামতো অস্ত্র বানিয়ে ব্যবহার করেন। ৫৪ বছরের কার্যকলাপ তলিয়ে দেখলে প্রমাণ পাওয়া যাবে, চেতনার বীভৎস ব্যবহারকারী নিজেরাই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না এবং এর চরম শত্রু।

দেখবেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদের অবিতর্কিত তালিকা নেই, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নেই। এসব নিয়ে আছে মহাসাগর পরিমাণ মিথ্যা উদ্ভট তথ্য। ৩০ লাখ বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে নিহত হওয়ার বিশাল ফিগার দিয়ে রেখেছে। এদিকে বিহারি অবাঙালি হত্যা নিয়ে কোনো তথ্য নেই। আসল যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সামরিক অফিসারদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ নেই। এগুলো নিয়ে একটি বিশ্বাসযোগ্য ডকুমেন্টশেন, তা-ও নেই। অথচ শেখ মুজিব ও হাসিনা দুজনে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু এগুলো নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেননি সচেতনভাবে। আওয়ামী লীগ যে শুধু এ থেকে ফায়দা নিয়েছে তা নয়, একে হাসি-ঠাট্টা-মশকরার উপকরণও বানিয়েছে। এরাই দেশের স্বাধীনতা পানির দরে বিকিয়ে দিয়েছে। দেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে ভেতর থেকে দুর্বল করে প্রায় ধ্বংস করে প্রভুরাষ্ট্রের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে দিয়েছে।

অন্যদিকে, বাম ও তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চেতনার এক মিথ তৈরি করেছে। একে মহিমান্বিত করে আকাশে উঠিয়ে দিয়েছে। এটি বামদের চিত্তবিনোদন, আওয়ামী লীগের জন্য হালুয়া-রুটির ভাগাড় আর দেশবাসীর জন্য গলার ফাঁস। চেতনার আঘাত নিয়ে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তার রেহাই নেই। বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের দীর্ঘ জাঁতাকলে পড়ার মূল কারণ ছিল মুক্তিযুদ্ধের এই গলদপূর্ণ বয়ান। জুলাই-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশেও বামরা এই কার্ড খেলছে। আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার পর ভুলে ভরা মুক্তিযুদ্ধ বয়ানের সোল এজেন্সি এখন তাদের কাছে। তাদের আগের মতো জনবল আর সাহস না থাকলেও আছে বাংলাদেশের বিশাল মিডিয়া সাম্রাজ্য। আওয়ামী দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে আমজনতা যখনই কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে, এই মিডিয়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অবমাননা আর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানহানির রব তুলছে।

গত বছর ডিসেম্বরের শেষের দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কানু নামে এক ব্যক্তিকে স্থানীয় জনতা গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। বাংলাদেশের মিডিয়ার জোয়ার তোলা হয়- বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে ভীষণ অপমান করা হয়েছে। অথচ তাকে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারণে কেউ অপমান করেননি। ফ্যাসিবাদের সময়ে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে স্থানীয় মানুষের জীবন তিনি বিষিয়ে তুলেছিলেন। ক্ষমতার নিরাপদ বলয়ে থেকে বহু মানুষের ওপর এই নিপীড়ক যখন অত্যাচার চালাচ্ছিলেন, তখন এই মিডিয়া একেবারে নিশ্চুপ। কানুর সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি অত্যাচারের বিরুদ্ধে তখন মিডিয়া একটি খবরও প্রকাশ করেনি। মূল ধারার মিডিয়া এ নিয়ে খবর প্রকাশ করলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতাহীন নিরীহ মানুষদের কিছুটা হলেও তখন সুরক্ষা দিত।

চৌদ্দগ্রামের আবদুল হাই কানুর মুক্তিযোদ্ধার সনদ রয়েছে। ২০০৯ সালে হাসিনা ক্ষমতায় এলে এই পরিচিতির অপব্যবহার শুরু করেন। এ জন্য তিনি স্থানীয় এমপি পরে মন্ত্রী মুজিবুল হকের দলে ভিড়েন। এই চক্রের হয়ে সন্ত্রাসী-চাঁদবাজি-দখলবাজিসহ হেন কোনো অন্যায় নেই যা করেননি। শুধু বিরোধী বিএনপি জামায়াতের লোকেরা তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এমন নয়। এলাকার সাধারণ মানুষ, ক্ষমতাসীন দলের লোক, এমনকি মুক্তিযোদ্ধারাও তার হাত থেকে রেহাই পাননি।

স্থানীয় নির্বাচনে নিজ দলের এক প্রতিযোগী প্রার্থীকে এলাকাছাড়া করেন। পরে মামলা দিয়ে জেলে পাঠান। জেলেই ওই প্রার্থীর মৃত্যু হয়। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম একটি বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। কানু ও তার ছেলে নির্যাতন করে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পানিতে ফেলে দেন। শেষ পর্যন্ত তার কাছে থেকে ২৬ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন তিনি। বিরোধী দলের এক নেতাকে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে তাড়িয়ে দেন। তিনি তখন খাদ্য গ্রহণরত অবস্থায় ছিলেন। জোর করে জমি দখল, বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়া, পানিতে চোবানোসহ কানুর বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষদের ওপর সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, অপমান-লাঞ্ছনা করার অসংখ্য অভিযোগ। হাসিনার দুঃশাসনের দীর্ঘ ১৫ বছর চৌদ্দগ্রামের ওই এলাকার মানুষ শুধু তার অত্যাচার সয়ে গেছে। হাসিনা পালানোর পর কানুকে যখন অত্যাচারের শিকার মানুষেরা পেলো তখন সবাই মিলে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা কিভাবে এসব কুকীর্তি করতে পারেন প্রশ্ন না তোলা মিডিয়া এখন ঝাঁপিয়ে পড়েছে তার মানসম্মান নিয়ে। প্রথম আলোসহ প্রথম সারির মিডিয়া দুর্বৃত্ত কানুর অপকর্মের উল্লেখ না করে অত্যাচারের শিকার স্থানীয় জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশকে মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতন হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত প্রচারণা চালিয়েছে। বরাবরের মতো সুশীল সমাজের আড়ালে বামদের এই নিয়ে হা-হুতাশের অন্ত নেই।

পরাজিত ফ্যাসিবাদ দেশে অস্থিরতা তৈরির নীলনকশা আটছে। বাইরে থেকে ইন্ধনে দেশে অস্থিরতা তৈরির এ আলামত স্পষ্ট। ‘মঞ্চ ৭১’ হাসিনার দোসরদের এ ধরনের একটি প্রকল্প। ১৫ আগস্ট উপলক্ষে তারা নামতে ব্যর্থ হলেও একের পর এক ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। সম্প্রতি ডিআরইউতে মুক্তিযুদ্ধের শানে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর লক্ষ্য আওয়ামী বুদ্ধিজীবী গুন্ডাদের সমাজে নরমালাইজ করে নেয়া। সবগুলো ফোরামে তাদের অবাধে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া। যেভাবে তারা ফ্যাসিবাদের বয়ান আগেও নির্মাণ করেছিল। সেই আয়োজন থেকে আটক করা হয় অবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে। এখানেও দেখা গেল, এই আটককে বিনা অপরাধে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তার পর আটক হিসেবে ফ্রেমিং করল মিডিয়া। অথচ এই লোক সরকারি জমি পানির দরে বিক্রি করে জেল খেটেছেন। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী থাকাকালে তিনি এ কাজ করেন।

পাটকেন্দ্রের জমি বিক্রির অপরাধটি যখন করেছিলেন, তখন আওয়ামী সরকার তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। হাসিনার চারপাশে শত শত দুর্নীতিবাজ সর্বদা ঘোরাফেরা করত। এরাই ছিল তার সবচেয়ে প্রিয়। তাদের দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতা করে তিনি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছেন। হাসিনার দুর্নীতিবাজ চক্র দেশকে ফতুর করে দিয়েছে। তাদের কারো বিরুদ্ধে হাসিনা কখনো দুর্নীতির অভিযোগ আনেননি, কোনো ব্যবস্থাও নেননি। লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, যখন তিনি মুখ ফসকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সরকার থেকে অবৈধ সুবিধা নেয়ার কথা ফাঁস করে দিলেন তখন। তিনি মন্ত্রিত্ব হারানোর পাশাপাশি বিচারের মুখোমুখিও হলেন। তখনো কিন্তু তার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় কেউ সামনে আনেনি। তার মন্ত্রীর পদ কেড়ে নেওয়া কিংবা বিচারের মুখোমুখি করার জন্য কেউ একজন মুক্তিযোদ্ধার অপমান হিসেবে সামনে আনেননি। লতিফ সিদ্দিকী ১৯৭৩ সালের বিতর্কিত নির্বাচন এবং ২০১৪ সালের বিনা ভোটের নির্বাচনে এমপি হয়েছেন। তিনি আর তার পরিবারের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। হাসিনার আমলে তিনটি ভুয়া নির্বাচনে কমবেশি শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা বিনা ভোটের এমপি হয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ এমন অসংখ্য অনৈতিক কাজে হাসিনার সাথে জড়িত হয়েছেন। মুজিবের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ চুরি-ডাকাতি, প্রতিপক্ষ হত্যা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল করেছে। হাসিনার ফ্যাসিবাদে গুম-খুন ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথী হয়েছে তাদের আরেকটি অংশ। দেশবিরোধী ঘৃণ্য অপরাধ সংঘটনের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কখনো অভিযোগ আনা হয় না; কিন্তু যখনই তারা সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ষড়যন্ত্রে করে ধরা খান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয় তখনই মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হচ্ছে বলে রব উঠানো হচ্ছে।

ডিআরইউর গোলটেবিল থেকে আটক ব্যক্তি যাদের জন্য হা-হুতাশ করা হচ্ছে তারা প্রায় সবাই ফ্যাসিবাদের সহযোগী। তাদের মধ্যে কথিত সাংবাদিক মন্জুরুল ইসলাম পান্না রয়েছেন। তিনি মানচিত্র নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালান। সেখানে গুজব-অপতথ্য, বানোয়াট গল্প ছাড়া কিছু পাবেন না। এগুলো যদি তিনি পাঠকদের আনন্দ দিয়ে নিজের ব্যবসায় বাড়ানোর জন্য করতেন, তাতে হয়তো খুব বেশি আপত্তি থাকত না। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর একনাগাড়ে ভিডিও বানিয়ে ক্রমাগত তিনি ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ ফাসিবাদী শাসনের পর সরকার যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় হিমশিম খাচ্ছে, এসব ভিডিও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের উসকানি দিচ্ছে। সেখানে তিনি ড. ইউনূস ও তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন মিথ্যা আপত্তিকর কথা বলে যাচ্ছেন, তাদের অপবাদ দিচ্ছেন। অবলীলায় বলে ফেলছেন নামধামসহ উপদেষ্টাদের ঘুষ নেয়ার কথা, অথচ তার পক্ষে কোনো প্রমাণ তার কাছে নেই। পাকিস্তানের একটি অখ্যাত পত্রিকা দীর্ঘ গুমের শিকার ব্রিগেডিয়ার আমান আল আযমিকে সেনাপ্রধান বানানোর দাবি জানিয়েছে। এই বাড়াবাড়িমূলক উদ্ভট খবর নিয়ে এবার ভারত থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। অথচ এ ধরনের চিন্তাভাবনা বাংলাদেশের কোথাও নেই। বর্তমান সরকার, সেনাবাহিনী ও আযমি- সবার জন্য এই খবর মানহানিকর, অস্বস্তিকর। এদের রেফারেন্স দিয়ে ওই গুজবের ডালপালা বিস্তারে পান্না ভিডিও বানিয়েছেন। তার অসংখ্য ভিডিওতে তিনি গণহত্যাকারী হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিরুদ্ধে সাফাই গেয়েছেন। দেশের ভেতরে বসে এমন অন্তর্ঘাতমূলক কাজের জন্য পান্নাকে আরো আগে জবাবদিহির আওতায় আনার দরকার ছিল। যখন দেশের ভেতরে চারদিকে অস্থিরতার আলামত তখন পান্নারা ডিআরইউতে বসে ফ্যাসিবাদীদের পক্ষে বয়ান দেবেন, সেটি সহ্য করা সরকারের নিজের পায়ে কুড়াল মারার শামিল। আটক অন্য সাংবাদিক মাহবুব কামালের বিরুদ্ধে স¤প্রতি মারা যাওয়া সাংবাদিক বিভুরঞ্জন আওয়ামী লীগ থেকে সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নেয়ার তালিকা দেন।

ওই অনুষ্ঠান থেকে অন্য যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে সবাইকে নিয়ে মিডিয়া ও সুশীলরা হা-হুতাশ করেছে। তাদের কারো পরিচিত একেবারে নিরীহ রাজনীতিক, সুবোধ আইনজীবী কিংবা মেধাবী শিক্ষক। তারা লতিফ সিদ্দিকীর মতো মিথিক্যাল মুক্তিযোদ্ধা না হলেও দেশের সবচেয়ে নম্রভদ্র মানুষ মিডিয়া ও সুশীলদের বিবেচনায়। বাস্তবে এরা সবাই আওয়ামী সুবিধাবাদী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে গুম-খুন করা হয়েছে, দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করা হয়েছে, তখন এরা মুখে কুলুপ এঁটেছিল। মানুষের বেঁচে থাকার ও মানবাধিকারের চেয়েও এদের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের ভুয়া সম্মান রক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এদের প্রবণতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান জানান দিলে তার পেছনের সব অপরাধ মাফ। মিডিয়া বাম ও সুশীলরা যখন কোনো কাজে মুক্তিযুদ্ধকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না, তখন তাদের সমাজের সবচেয়ে সুবোধ বালক হিসেবে উপস্থিত করে। আটক ব্যক্তিদের পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে সেই নিরীহ ভাবমর্যাদা গড়ে তোলা হয়েছে। এ কাজ করে ইউনূস সরকারও হয়ে গেছে নিপীড়ক।

ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরেও চেতনার অত্যাচার
হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশেও ক্ষুদ্র স্বার্থে একাত্তর মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্তানকে টেনে আনা হচ্ছে। ছাত্র সংসদের কর্মসূচি কি হবে, কিভাবে তার বাস্তবায়ন করা হবে- সে ব্যাপারে মাথাব্যথা নেই। ডাকসুতে বামরা জবরদস্তি করে সবাইকে পেছনের বিভেদে জড়িয়ে ফেলার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য ক্যাম্পাসেও ছাত্রসংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরকে প্রশ্ন করা হচ্ছে- তারা স্বাধীনতা মানে কিনা। এ নিয়ে তারা যতই প্রশ্নের উত্তর দিক, আমরা স্বাধীনতা শতভাগ মানি। তাতেও হচ্ছে না, তাদের মনের ভেতর স্বাধীনতা বিরোধিতা, এই অভিযোগ জবরদস্তি করে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মব তৈরি করা হচ্ছে। ডাকসুর জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটিকে পরাস্ত করুন। বাংলাদেশকে রক্ষা করুন।’ ছাত্র ইউনয়নের এই নেতা এর আগেও ডাকসুর এক প্রার্থীকে পাকিস্তানি বলেছেন।

পাকিস্তান আমাদের দখল করতে আসার কোনো আশঙ্কা নেই। অন্তত বিগত ৫৪ বছরে ন্যূনতম প্রচেষ্টা পাকিস্তান চালিয়েছে, এমন দেখা যায়নি। আমাদের দিকে যে তারা তাকাবে সেই ফুরসত তাদের নেই। দুই দেশের মধ্যে বিশাল দেশ ভারত। মোট কথা, বাংলাদেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে পাকিস্তান কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক নয়। তারপরও কেন তারা ক্রমাগত একই অভিযোগ চাপিয়ে দিচ্ছে। একটি সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করাই এ ধরনের অভিযোগ তোলার মূল কারণ। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী পাকিস্তানপন্থী বলে এই সম্প্রদায়কে হত্যাযোগ্য করতে মেঘমল্লার ও তার পৈতৃক সংগঠন হাসিনাকে সহযোগিতা করেছে।

বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি তৈরি করে চলেছে ভারত। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বিডিআর হত্যাকান্ড চালিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পঙ্গু করে দিয়েছে। দেশের সবগুলো নিরাপত্তা বাহিনীতে হাসিনার সময়ে তারা নিয়ন্ত্রকের আসনে বসে যায়। দেশের গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ভোট ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে ভারতের তত্ত্বাবধানে। পানি আগ্রাসন চালাচ্ছে তারা, দেশ দখল করে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে তারা, প্রতিনিয়ত সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যাসহ নানা উসকানিমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে তারা। মেঘমল্লাররা বাংলাদেশের মানুষকে ঠিক তার উল্টো দিকে আঙুল তুলে দেশের মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন। মেঘমল্লার বসু দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতি করেন। তিনি ভারতের শত্রুতা নিয়ে একবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার জন্য হাসিনার বিরুদ্ধে তার কোনো বিবৃতি নেই। অথচ তিনি পাকিস্তানপন্থী বলে যাদের বিরুদ্ধে কামান দাগাচ্ছেন, তারা প্রতিনিয়ত ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন।

jjshim146@yahoo.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here