এ ছাড়া তার ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টের কার্যকারিতা শেষ হয়ে যাওয়ায়, সহজে বাংলাদেশেও ফিরতে পারবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি।
বাংলাদেশের মানুষের মনে অবশ্য এ নিয়ে অবশ্য আগ্রহ রয়েছে এত দাম্ভিক একজন ব্যক্তি কী করছেন দিল্লিতে। তবে বাংলাদেশের সব গণমাধ্যমে শেখ হাসিনা দিল্লিতে আছেন বলে খবর প্রকাশ করলেও আসলে তিনি মুহূর্তে রয়েছেন উত্তর প্রদেশের ছোট শহর গাজিয়াবাদে। গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমান ঘাঁটির একটি সেফ হাউজে বিশেষ নিরাপত্তায় রয়েছেন। তার জন্য দিল্লি ও সিমলায় বসবাসের জন্য বাসভবনের খোঁজ করা হলেও পরে তা বাদ দেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
মূলত হাসিনার সঙ্গে যেন দিল্লির অনুমতি ছাড়া কেউ দেখা করতে না পারে সে জন্য তাকে সামরিক নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে।
পালিয়ে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত কেমন কাটছে শেখ হাসিনার দিন, তা নিয়ে বিশদ অনুসন্ধান করদে গিয়ে দ্যা মিরর এশিয়া এসব তথ্য পেয়েছে। জানা গেছে, শেখ হাসিনার চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে র। অনেকটা হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে রাখা হয়েছে। হাসিনার গতিবিধি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তেমন অন্তত তিনটি সূত্রের সঙ্গে গত দুই দিন এই নিয়ে আলাপ করে দ্য মিরর এশিয়া।
জানা যায়, ৫ আগস্ট গাজিয়াবাদে এসে শেখ হাসিনা বেশ ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত ছিলেন। তিনি তার লোকেরা বেইমানি করেছে বলে উষ্মা প্রকাশ করেন। ৫ ও ৬ আগস্ট তার সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক আলাপ হয়নি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের। কিন্তু ৭ আগস্ট থেকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে থাকা ও ভারতে পালিয়ে আসা বহু আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে স্বেচ্ছায় যোগাযোগ করেন। তার নির্দেশে আওয়ামী লীগ নেতারা কলকাতায় ও দিল্লিতে বৈঠক করে নানা পরিকল্পনা সাজান।
বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে নানা প্রপাগান্ডা প্রচার ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ না হারানোর ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য মূল কলকাঠি নাড়েন সালমান এফ রহমান, বাহাউদ্দিন নাছিম ও যশোর এলাকার একজন সংসদ সদস্য যিনি বাংলাদেশের কয়েকটি মাধ্যমের মালিক।
সূত্র বলছে, কলকাতায় সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে প্রপাগান্ডা চালানোর মূল কারিগর তিনি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আওয়ামী লীগ পন্থী আইনজীবীদের দিয়ে ক্যু চেষ্টা চালানো হয়। সেটি ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
তখন থেকে শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ভালোভাবে নিচ্ছে না ভারতীয় গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য রয়েছে, যে ছাত্র আন্দোলনে হাসিনার পতন হয়েছে, সেখানে শেখ হাসিনার নিজ দলের লোকেরও হাত ছিল। ফলে এ মুহূর্তে শেখ হাসিনার সমস্ত যোগাযোগের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ভারতীয় বৈদিশিক গোয়েন্দা বিভাগ ‘র’।
জানা যায়, সম্প্রতি নেতাকর্মীদের প্রতি শেখ হাসিনার চিঠি বলে যে বার্তা ঢাকার দৈনিক ইত্তেফাক ও সংবাদ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশ করা হয়, সে সম্পর্কে শেখ হাসিনা কিছুই জানেন না। চিঠিটি ‘র’ নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে সরবরাহ করেছে এবং দ্রুত প্রকাশের তাগাদা দিয়েছে।
মিরর এশিয়া সূত্র আর নিশ্চিত হয়েছে, দ্য প্রিন্ট পত্রিকার কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ বা কথা হয়নি। দ্যা প্রিন্ট হাসিনার সূত্রে যে খবর প্রকাশ করেছে তা মূলত ‘র’ সরবরাহ করেছে দ্যা প্রিন্টকে এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য বলে প্রচার করতে বলেছে। মূলত বিশেষ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ‘র’ শেখ হাসিনার সমস্ত যোগাযোগকে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
এদিকে হাসিনার ভারতে অবস্থান নিয়ে আরেকটি বিতর্ক শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনা সাধারণত ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে সে পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যায়। তার কাছে এর বিপরীতে বাংলাদেশের সাধারণ পাসপোর্ট নেই। তাহলে কীসের ভিত্তিতে হাসিনা ভারতে অবস্থান করবেন!
এ ছাড়া ভারতে শরণার্থী আইনে কাউকে আশ্রয় দেওয়ার নিয়ম নেই। সূত্র বলছে, বাংলাদেশের একজন বিরোধী দলের নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন মেঘালয়ের শিলংয়ে আদালতের বিশেষ অনুমতি নিয়ে অবস্থান করেছিলেন। শেখ হাসিনাকেও ভারত সরকারের বিশেষ অনুমতি নিয়ে ভারতে অবস্থান করতে হবে। সে ক্ষেত্রে পাসপোর্ট বিহীন হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশ যেতে চাইলে হুট করে যেতে পারবেন না। তার জন্য তার লাগবে বাংলাদেশ সরকারের ‘বিশেষ ট্রাভেল পাস’। ঢাকায় বর্তমানে যে সরকার আছে তা হাসিনাকে সে পাস দেবে বলে মনে হয় না। ফলে আইনগতভাবে হাসিনার খুব দ্রুত বাংলাদেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই।
The Mirror Asia