দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দর চাঁদপুর। কয়েকশ বছরের পুরনো এই বন্দরে আজও নির্মাণ করা হয়নি আধুনিক নৌ-টার্মিনাল। পাঁচ বছর আগে শহরের মাদ্রাসা রোডে আধুনিক নৌ-টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও এখনও কাজ শুরু হয়নি। তবে কাজ শুরু না হলেও ২৬ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় বেড়ে গেছে।
জানা গেছে, এই বন্দর দিয়ে ঢাকাসহ কয়েক জেলার ১০ হাজারের বেশি যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করেন। ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবে লাখ ছাড়িয়ে যায় যাত্রী। কিন্তু নৌবন্দরে উন্নত যাতায়াত সুবিধা না থাকায় ভোগান্তি নিয়েই চলাচল করতে হয় যাত্রীদের।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর তৎকালীন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান চাঁদপুরে আধুনিক নৌ-টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তবে এখনও কাজ শুরু হয়নি। চলতি মাসের প্রথম দিকে নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা জানালেও এর কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া তিন নদীর মোহনার পাশে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনাল স্থাপন করা হয়। বন্দর ঘিরে আসামের সঙ্গে পূর্ব বাংলার যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ২০০০ সালে নদীভাঙনে নৌ-টার্মিনাল বিলীন হয়ে যায়। বিকল্প হিসেবে শহরের মাদ্রাসা রোডে ২ দশমিক ৪৮ একর জমির ওপর নির্মিত অস্থায়ী ঘাটটি নৌ-টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর একনেকে ‘চাঁদপুর আধুনিক নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প’ অনুমোদন পায়। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় ৬৭ কোটি টাকা ধরা হলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ কোটি টাকায়। ২ দশমিক ২ একর জমির ওপর চারতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। রাস্তা প্রশস্তকরণের পাশাপাশি পার্কিং ইয়ার্ডও নির্মাণ করা হবে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে। টার্মিনাল নির্মাণের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।
চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক ও বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘চাঁদপুর ঘাট থেকে প্রতিদিন শতাধিক লঞ্চ চলাচল করে ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌপথে। এই ঘাটে প্রতিদিন ১০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করলেও ঈদ ও উৎসবে বেড়ে যায়। বছরে এই নৌবন্দর থেকে সরকার কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব পায়। আধুনিক নৌ-টার্মিনালের কাজ শেষ হলে সেবার মান বাড়বে। পাশাপাশি রাজস্ব আয়ও বাড়বে।’
কবে নৌ-টার্মিনালের কাজ শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী আমাকে বলেছেন, ঈদের পর অর্থাৎ মে মাসে নির্মাণকাজ শুরু হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর চাঁদপুর নৌ-অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ইতিমধ্যে টার্মিনালের নকশা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসে নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে প্রকল্প পরিচালকের অফিস থেকে জানানো হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদকালের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।’
তবে স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমানে নৌবন্দরে কোনও যাত্রীছাউনি নেই। শৌচাগার নেই। যাত্রীদের জন্য নেই বিশ্রামাগার। আদৌ আধুনিক নৌ-টার্মিনালের কাজ শুরু হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ কয়েক বছর ধরে একাধিক কর্মকর্তা একই ধরনের কথাবার্তা বলে আসছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মেরিন) মো. আইয়ুব আলী বলেন, ‘নৌ-টার্মিনালের নির্মাণকাজের ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসে কাজ শুরু হবে। এখানে ভবন হবে, জেটি হবে। টার্মিনালের জন্য যা যা দরকার, সবই থাকবে। সদরঘাট টার্মিনালে যেসব সুযোগ-সুবিধা আছে, এখানেও সবই থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘ভবনের জমি অধিগ্রহণ দরকার হবে না। মূল স্থাপনা বিআইডব্লিউটিএর জমিতে হবে। তবে রাস্তা করতে কিছু জমির প্রয়োজন হবে। সেই জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া রেলওয়ে কিছু জমি আমাদের দেবে, সেগুলো নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’