চট্টগ্রাম বে টার্মিনাল নির্মাণ ত্বরান্বিত করতে ১৪,৯০৮ কোটি টাকার সমন্বিত প্রকল্পের পরিকল্পনা সরকারের

01 March, 2025, 09:15 am
Last modified: 01 March, 2025, 09:16 am

চট্টগ্রাম বন্দরে বে টার্মিনাল নির্মাণ ত্বরান্বিত করার জন্য ১৪ হাজার ৯০৮ কোটি টাকার একটি সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা করছে সরকার। এ সমন্বিত প্রকল্পের মধ্যে থাকবে একটি ব্রেকওয়াটার, নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল, রেল ও সড়ক সংযোগসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, এর আগে এসব কাজ আলাদা তিনটি প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নের কথা ছিল, যার ফলে অনুমোদন প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লাগত।

এখন বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি) শীর্ষক একক প্রকল্পের মাধ্যমে এগুলো দ্রুত অনুমোদন শেষ করা যাবে বলে জানান তারা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা প্রধান মো. মাহবুব মোর্শেদ চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, ‘বে টার্মিনালে যাওয়ার আগে সব ধরনের সহায়ক কার্যক্রম একই প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের মধ্যেই প্রকল্পটির অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০৩১ সালের মধ্যে এর বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ব্রেকওয়াটার ও নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেলের নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২৮ সালে।

এর আগে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে বে টার্মিনালের ব্রেকওয়াটার ও নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল নির্মাণের জন্য ১১ হাজার ১৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব চট্টগ্রাম বন্দন কর্তৃপক্ষ থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। কিন্তু রেল  ও সড়ক সংযোগের প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করতে বিলম্ব হচ্ছিল।

কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল একটি যুগান্তকারী প্রকল্প, যা দেশের প্রধান বাণিজ্য প্রবেশপথের সক্ষমতা ছয়গুণ পর্যন্ত বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গত বছরের ১২ ডিসেম্বর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে টার্মিনাল নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত সহায়ক প্রকল্প সমন্বিত পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হবে।

কর্মকর্তারা বলছেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ শুরু না করলে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা কমে যাবে। এ কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বর্তমান সরকার।

বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১০ হাজার ২৭২.৪০ কোটি টাকা আদায়ের প্রস্তাব

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, বিটিএমআইডিপি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১০ হাজার ২৭২.৪০ কোটি টাকা এবং বন্দরের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪ হাজার ৬৩৬.৪৩ কোটি টাকা আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ব্রেকওয়াটার ও নেভিগেশন চ্যানেল নির্মাণে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ ব্যবহার করা হবে, যা গত জুনে বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় অনুমোদন পায়। তবে নতুন করে রেল ও সড়ক সংযোগ যোগ হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আরও ১৯২ মিলিয়ন ডলার বাড়তি ঋণ প্রস্তাব জমা দেওয়া হবে বিশ্বব্যাংকে। অতিরিক্ত ঋণ পাওয়া না গেলে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে এই অর্থের জোগান দেবে।

প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রস্তাবিত বিটিএমআইডিপি প্রকল্পে ব্রেকওয়াটার নির্মাণে ৮ হাজার ২৬৯.৮৫ কোটি টাকা, নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল নির্মাণে ১ হাজার ৯৭৯.৪৫ কোটি টাকা, নেভিগেশনে সহায়ক যন্ত্র স্থাপনে ৫৭.৭০ কোটি টাকা এবং সাধারণ স্থাপনা ও হিন্টারল্যান্ড সংযোগে ৩ হাজার ৪৩৪.৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

২.৮ বিলিয়ন ডলারের বে টার্মিনাল পিপিপি প্রকল্প

চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণে ২০১৩ সালে সরকার বে টার্মিনাল নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। জার্মান প্রতিষ্ঠান হামবুর্গ পোর্ট কনসালট্যান্টকে দিয়ে ২০১৩ সালে দিয়ে প্রাক্‌-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। ২০১৭ সালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও মাস্টারপ্ল্যান করার সিদ্ধান্ত হয়।

এরপর ২০২১ সালে কোরিয়ান কোম্পানি কুন হুয়াকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও মাস্টারপ্ল্যান করার ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছে।

সম্ভাব্য সমীক্ষার ভিত্তিতে, বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনটি টার্মিনাল, একটি অ্যাকসেস চ্যানেল ও ব্রেকওয়াটারসহ পুরো বে টার্মিনাল নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ২.৮ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২-এর প্রতিটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৬০৯.৪৪ মিলিয়ন ডলার করে। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হবে ৭৫৫.১১ মিলিয়ন ডলার।

বে টার্মিনাল প্রকল্পটি পিপিপি প্রকল্প হিসেবে ২০০৯ সালে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিইএ) কর্তৃক অনুমোদিত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here