- সৈয়দ আবদাল আহমদ
- ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি ৪২ বছর পূর্ণ করেছে। গত ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটিতে নেতাকর্মীরা শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ১৯৭৮ সালের এ দিনে দলটির জন্ম হয়। মাজারকে ঘিরে নেতাকর্মীরা ‘আজকের এই দিনে জিয়া তোমায় মনে পড়ে’ স্লোগানে স্লোগানে মুখর ছিল। শুধু শ্রদ্ধা নিবেদনই নয়, দিনটিতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সব কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। টানানো হয় ব্যানার-ফেস্টুন। এ উপলক্ষে দলটি এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভারও আয়োজন করে।
আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে বলেন, গণতন্ত্রের জন্যই আজ তিনি গৃহবন্দী অবস্থায়ও কারাবন্দী হয়ে আছেন। দেশনেত্রীকে মুক্ত না করলে গণতন্ত্র মুক্ত হবে না, এটা অবশ্যই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সফল করতে হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ দুটি দুর্যোগের মধ্যে আছে। একটি আওয়ামী দুর্যোগ, অন্যটি করোনা দুর্যোগ। সে জন্য দেশে এখন রাজনীতি নেই, গণতন্ত্র নেই। দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। এ অবস্থার পরিবর্তনের দায়িত্ব বিএনপির। কেননা আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যা করেছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বানোয়াট মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। দুই বছর আগে তাকে কারাবন্দী করা হয়। এখন সাজা স্থগিত রেখে তাকে বাড়িতে রাখা হয়েছে। এটি অন্তরীণ থাকার মতোই। আমাদের চেষ্টা করতে হবে গণতন্ত্রের মাকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করতে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির অবস্থাও করুণ। প্রায় ১৪ বছর ধরে দলটি ক্ষমতার বাইরে। দেশের বৃহত্তম এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও বিএনপি এ সময় পার করছে চরম ও কঠিন সময়। দলের অসংখ্য নেতাকর্মী জেলে বন্দী। মামলা দেয়া হয়েছে কয়েক লাখ নেতাকর্মীর নামে। কোর্টের বারান্দায় বারান্দায় তাদের কাটাতে হয় নিত্যদিন। নানা ধরনের দমন-পীড়নের পাশাপাশি অনেকে শিকার হয়েছেন গুম-খুনের। অন্য দিকে দলের চেয়ারপারসনকে বানোয়াট মামলায় সাজা দিয়ে দু’বছর কারাগারে বন্দী রাখা হয়। এরই মধ্যে তার সাজা স্থগিতের চার মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পরিবার সরকারের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিষয়টি তারা দেখছেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা, তার বয়স এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত বলে অনেকেই মনে করেন।
সরকারের টার্গেট জিয়াউর রহমান
দেশের মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি বীর উত্তম জিয়াউর রহমান আবারো সরকারের টার্গেটে। তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি যখন ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে, তখন শহীদ জিয়া ক্ষমতাসীনদের আক্রমণের শিকার হলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রী এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা জিয়াউর রহমানকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা বলছেন, ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট জিয়াউর রহমানের নেপথ্য মদদেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার ঘটনা ঘটে। এ হত্যাকা-ের বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান। কমিশন গঠন করে এ হত্যাকা-ের নেপথ্যের ঘটনা তদন্ত করা হবে বলেও তারা উল্লেখ করেন। আমেরিকান সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজকে দিয়েও জিয়াউর রহমানের ভূমিকার তদন্ত চাওয়ানো হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে সরকারের অপপ্রচারের উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করা। এ অপচেষ্টা তারা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করবেন।
বিএনপি এ সম্পর্কে আরো বলেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছে। বিচারের ফাঁসির রায়ও কার্যকর করেছে। সেটি একটি মীমাংসিত বিষয় হতে পারত। কিন্তু তা না করে দেখা গেল হঠাৎ করে তারা জিয়াউর রহমানের নাম জড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত। বিএনপি মনে করে বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবে স্বাধীনতার ঘোষকের সংশ্লিষ্টতা নেই এবং এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই বিএনপি এর জবাব দেয়াও প্রয়োজন মনে করে না।
এ সম্পর্কে বিবিসির প্রশ্নের জবাবে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে যে বিতর্ক তোলা হচ্ছে, সেটা রাজনৈতিক বক্তৃতা। তবে আওয়ামী লীগ ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘটনা নিয়ে বিএনপিকে বিব্রত করতে পারে। তিনি বলেন, একাত্তরের ইস্যুতে বিএনপি কনসার্ন না। কারণ ’৭১-এ জিয়াউর রহমানের ভূমিকা সবাই জানেন। কনসার্ন হচ্ছে ১৫ আগস্ট। এটা এখন বিএনপির জন্য অস্বস্তিকর।
জিয়াউর রহমান বারবার কেন আওয়ামী লীগের টার্গেট হচ্ছেন, এ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল সুন্দরভাবে বলেছেন। এ সম্পর্কে তিনি নিজের ফেসবুক পেজে গত ১৬ আগস্ট ২০২০ লেখেন, ‘এত সমালোচনা ও অপপ্রচার আওয়ামী লীগ কেন করে জিয়াউর রহমানের নামে? কারণ তারা জানে প্রতিদ্বন্দ্বী তাদের শুধু একজনই। সেটি জিয়া। জিয়াউর রহমান মারা গেছেন প্রায় ৪০ বছর আগে। মূলত তার জনপ্রিয়তার ভয়েই আজো একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার সাহস রাখে না তারা।’
২৮ আগস্ট ২০২০, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও জিয়া শিরোনামে নিজের ফেসবুকে ড. আসিফ নজরুল লিখেন, ‘আমেরিকান সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের ভূমিকার তদন্ত চেয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতারাও ২০০৯ সালের পর থেকে এসব কথা বলে আসছেন। তারা বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য শুধু জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন, অন্য কারো কথা তাদের মুখে আসে না। অথচ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর যে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়, তাতে ২৩ জনের মধ্যে ২২ জন ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। হত্যাকাণ্ডের পর নতুন সরকারের প্রতি আনুগত্য জানিয়েছিলেন তিন বাহিনী প্রধান (এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিবাহিনী প্রধান)। এদের একজন পরে শেখ হাসিনার আমলে মন্ত্রী হয়েছেন। আরেকজন সংসদ সদস্য হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের সময় বা পরে কোনো প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি অত্যাধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত রক্ষীবাহিনী। হত্যাকাণ্ডের পর ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের পাল্টা অভ্যুত্থানে বন্দী ছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি বন্দী থাকা অবস্থায় জেলখানায় চার জাতীয় নেতার হত্যার ঘটনা ঘটে এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিরাপদে দেশ থেকে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ৭ নভেম্বর জিয়া মুক্ত হন, তাকে মুক্ত করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন কর্নেল তাহের। তখন তিনি মারা গেলেন তার তো এ হত্যার বেনিফিশিয়ারি হওয়ারও কথা নয়। জিয়া যদি হত্যাকাণ্ডে কোনোভাবে জড়িত থাকতেন তাহলে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে তার রেজিমেন্টের কেউ অংশ নেয়নি কেন? সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান হিসেবে হত্যাকাণ্ডের জন্য ব্যবহৃত ট্যাংকের গোলাবারুদ সরবরাহ করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি তা করেননি কেন? কর্নেল ফারুক খালি ট্যাংক নিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে রওয়ানা হওয়ার সময় পথিমধ্যে রক্ষীবাহিনীর মুখোমুখি হন। তাকে তখন সামান্য বাধা দিলে ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞ কোনোভাবেই করা যেত না। চৌকস সেনা অফিসার জিয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকলে এভাবে খালি ট্যাংক পাঠাবেন অস্ত্রসজ্জিত রক্ষীবাহিনীর নাকের ডগা দিয়ে?
তার পরও জিয়াউর রহমানের ভূমিকার তদন্ত চাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তাহলে তখনকার আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ, বিভিন্ন বাহিনী প্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থা এদের ভূমিকার তদন্ত চান না কেন লরেন্স লিফশুলজ এবং অন্যরা? কেন তারা বলেন না জাসদের তখনকার ভূমিকার কথা?
যেকোনো দেশে সেনাবাহিনী চলে সেনাপ্রধানের কথায়। সেনাপ্রধান কি বঙ্গবন্ধুর ফোন পাওয়ার পর কোনো ভূমিকা নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করার? অন্তত তার কথাও মুখে আসে না কেন কারো?
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ও চুলচেরা বিচার হয়েছে আওয়ামী লীগ আমলে। সেখানে জিয়াউর রহমানের কোনো ভূমিকা খুঁজে পাওয়া যায়নি। সবার নাম আড়াল করে, এত বছর ধরে তাহলে একতরফাভাবে শুধু তার ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে কেন?’
মানুষ কেন জিয়াকে স্মরণ করে
১৯৮১ সালের ১৫ জুন আমেরিকার নিউজউইক পত্রিকায় জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। তার শাহাদাতের ১৫ দিনের মাথায় এ নিবন্ধ লেখেন সাংবাদিক Fred Brunning এবং James Pringle. নিবন্ধের কিছু অংশ বাংলা করলে দাঁড়ায়, “রিকশাগুলোর পেছনে কালো বর্ডারে নিহত প্রেসিডেন্টের ছবি আটকানো ছিল। কৃষকেরা তাদের দুঃখ প্রকাশের জন্য রোজা রেখেছিলেন এবং প্রায় বিশ লাখ মানুষ ঢাকার রাজপথে সমবেত হয়েছিল, তাদের প্রিয় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যার শোক প্রকাশের জন্য, যিনি দেশটির সাধারণ মানুষের কাছে ছিলেন আত্মমর্যাদার প্রতীক। অনেকে মনে করেন কিছু বিদ্রোহী সেনার দ্বারা জিয়াউর রহমানের হত্যা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের স্বপ্নকে চুরমার করে দিয়েছিল। ‘এখন উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে, দেশ অধঃপাতে যাবে’, বললেন ৫০ বছরের রেল কর্মচারী তাজুল ইসলাম।”
তার জানাজার পর ঢাকার একটি জনপ্রিয় দৈনিকের শিরোনাম ছিল, … ‘একটি লাশের পাশে সমগ্র বাংলাদেশ।’
জিয়ার শাহাদাতের পর এ রকমই ছিল বাংলাদেশের বাস্তবতা। দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে তিনি ছিলেন এক ক্ষণজন্মা স্বপ্নচারী মানুষ ও আস্থাভাজন নেতা। একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি ‘উই রিভোল্ট’ বলে বিদ্রোহই করেননি, তাৎক্ষণিক পথনির্দেশনা দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। এই ঘোষণা দিকনির্দেশনাহীন জাতির মনে আশা জাগিয়ে তুলেছিল। সেদিন থেকেই জিয়াউর রহমানের নাম মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেয়। আবার ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে জাতিকে পথ দেখিয়েছিলেন, সাহস জুগিয়েছিলেন। এভাবে তিনি দেশের একজন ত্রাতা হিসেবে একাত্তরে, পঁচাত্তরে এবং পরবর্তীতে দেশ পরিচালনায় আবির্ভূত হন।
বিবিসি বাংলার ২০ জন শ্রেষ্ঠ বাঙালি জরিপে ১৯তম স্থানে আসেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। এ প্রসঙ্গে বিবিসির ভাষ্যে বলা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব হয়েছিল হঠাৎ করেই ১৯৭১ সালে। তার কণ্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সেই সময় দেশটির একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তের মানুষের মনে সাহস জুগিয়েছিল, সৃষ্টি করেছিল প্রেরণা।
বিবিসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের কাছে জিয়ার ক্ষমতায় আসার বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। ড. এমাজউদ্দীন বলেছিলেন, ‘পঁচাত্তরে যেসব পটপরিবর্তন হচ্ছিল, সেই পটভূমিতে বাধ্যতামূলকভাবে পদত্যাগ করা এবং আটক অবস্থায় থাকা জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে এনে ক্ষমতায় বসানো হয়। আর এভাবেই একজন সামরিক কর্মকর্তা পরবর্তী সময় জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলেন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে। তবে এই বিপ্লব অবশ্য তার উদ্যোগে হয়নি, এর অন্য কারণ ছিল। কিন্তু এটি বলতে পারি যে, এই বিপ্লবের ফলেই বরং তাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুখ্য ভূমিকা পালনের জন্য ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে যেদিক থেকেই বিবেচনা করা হোক না কেন, তিনি যে বাঙালি জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান সে বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই।’
১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল জিয়া বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দেশে বহুদলীয় রাজনীতি চালু করে, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্রে তিনি দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেন। নিজের দল বিএনপির মাধ্যমে তিনি দেশব্যাপী শুরু করেন উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি। বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত, সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়ার ফলে দেশে ইতিবাচক স্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যা উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার ফলে দেশের তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচে যায়। বিদেশেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। বাংলাদেশের ৭০ হাজার গ্রামকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে জিয়া উদ্যোগ নেন। এ লক্ষ্যে শুরু করেন ‘গ্রাম মার্চ’। তিনি হেঁটে হেঁটে প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জে এবং কৃষকের পর্ণ কুটিরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে জিয়াউর রহমান খাদ্য উৎপাদন, কল-কারখানায় উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হন। শিল্প কারখানায় চালু করেন তিন শিফটে কাজ। জন্মনিয়ন্ত্রণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, খালখনন করে সেচ সুবিধা দেয়া, বৃক্ষরোপণ, কৃষির বিপ্লব সাধনে সক্ষম হন। ধান উৎপাদনে দেশে বাম্পার ফলন হয়।
আজ বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি নেই। এর কারণ প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো টাকা। এর ভিত্তি জিয়াউর রহমান করে যান বাংলাদেশীদের বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত গার্মেন্টস শিল্পও জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে জাপানকে হারিয়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী সদস্য হওয়ার গৌরব তার সময়েই অর্জিত হয়। এভাবে বাংলাদেশকে তিনি আধুনিক বাংলাদেশে পরিণত করেছিলেন। ফলে বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিনি এত জনপ্রিয়। মানুষ তাকে অকৃত্রিমভাবে ভালোবাসে। জিয়াউর রহমানের ডাক নাম কমল। আসলেই তিনি বাংলাদেশের হৃদয় কমল।
লেখক : সাংবাদিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক,
জাতীয় প্রেস ক্লাব।