- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাহ জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে আরো ২৩ জন। হতাহতের স্বজনদের আহাজারিতে পুরো তল্লা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তল্লা জেমস ক্লাব এলাকা দিয়ে হাঁটলেই বাড়ি ঘর থেকে ভেসে আসে কান্নার রোল। কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন। এলাকার প্রায় সব বাসায়ই একই পরিস্থিতি।
একদিকে স্বজন হারানো বা স্বজনের গুরুতর আহত হওয়ার বেদনা। অন্যদিকে আহত ও নিহতদের পরিবারের প্রায় সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। নিহতদের অনেকেই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ফলে এই দূর্ঘটনার শোক ছাড়াও পরিবার কিভাবে চলবে এ নিয়েও আতঙ্কে স্বজনরা। দু’একটি পরিবারের অবস্থা এতটাই খারাপ যে সকালে নাস্তা খাওয়ার কিংবা ঢাকা মেডিকেল কলেজে হতাহত স্বজনদের দেখতে যাওয়ার মতো ভাড়াও তাদের কাছে নেই।
মসজিদে পড়ে ছিলো ছোট্ট এক জোড়া স্যান্ডেল। স্যান্ডেল জোড়া আর কারো না, ৭ বছরের শিশু জুবায়েরের। বাবা জুলহাসের হাত ধরে মসজিদে গিয়েছিলো নামাজ পড়তে। শুক্রবার রাতে এশার নামাজ পরতে যাওয়ার সময় মা গার্মেন্টস কর্মী রহিমা বেগম জোর করেই ছেলেকে বাবার সাথে মসজিদে পাঠান। বিস্ফোরণে শিশু জুবায়েরের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু সাথে পাঞ্জা লড়ছে তার বাবা গার্মেন্টস কর্মী জুলহাস। কাঁদতে কাঁদতে রহিমা বলছিলো, ‘আমি জোর করে না পাঠালে আমার ছেলেটা মরতো না।’
জুবায়েরের খালা তানজিলা বেগম জানান, জুবায়ের শহরের তল্লা জেমস ক্লাব এলাকায় সবুজবাগ মডেল একাডেমির নার্সারীর ছাত্র। মা ও বাবা দুইজনেই গার্মেন্টসে কাজ করায় সে গ্রামের বাড়ি বরিশাল সদর থানার রাঙ্গাবালিতে নানা-নানীর কাছে ছিলো। কিছুদিন আগে এসে স্কুলে ভর্তি হয়।
বিস্ফোরণে দুই ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের কর্মচারি নুরুদ্দিন। বড় ছেলে সাব্বির তোলারাম কলেজে অনার্স এবং ছোট ছেলে জুবায়ের একই কলেজের এইচএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলো। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলে মেয়েদের মানুষ করতে প্রেসক্লাবের চাকরির পাশাপাশি কখনো ফুটপাথে দোকানদারি কখনো রিকশা চালিয়েছে নুরুদ্দিন। ছেলেরা সংসারের হাল ধরলে পরিশ্রম থেকে কিছুটা রেহাই পাবেন এমন আশায় ছিলেন নুরুদ্দিন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বললেন, ‘ছেলেরা আমাকে চিরতরে রেহাই দিয়ে চলে গেলো।’
একই এলাকার ইমাম হোসেন ও আমজাদ হোসেন বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে রয়েছে। দু’জনই আপন ভায়রা ভাই। শ্বশুরবাড়িতে থেকে কাজ করেন দু’টি পৃথক গার্মেন্টেসে। উপর্জক্ষম দু’জন দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে থাকার কারণে চিন্তায় পড়েছেন তাদের শ্বশুর মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, দুই মেয়ের জামাইয়ের চিকিৎসা ব্যয়ভার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের লালন-পালন করার ক্ষমতা তার নেই। তিনি একটি কমিউনিটি সেন্টারে ডেকোরেটর শ্রমিকের কাজ করেন। করোনার কারণে গত চার মাস ধরে কোনো কাজ নেই। অনেক টানাপোড়েনের মধ্যে সংসার চলছে। তার মধ্যেই এই দুর্ঘটনায় তার মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে।
সূত্র : বাসস