
দেশ ও জাতি পুনর্গঠনে সহযোগিতা এবং সক্রিয় অবদান রাখার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশ গঠনে সবার ভূমিকা থাকবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দূরে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখব, এমনটা হবে না। গ্যালারিতে বসে দেখার দিন শেষ। আমরা এখন নিজে খেলব।
নিউ ইয়র্কের হোটেল মেরিয়টে স্থানীয় সময় শনিবার আয়োজিত ‘এনআরবি কানেক্ট ডে : এমপাওয়ারিং গ্লোবাল বাংলাদেশিজ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষনেতাদের অভিন্ন বক্তব্য ছিলÑআমাদের মাঝে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকবে কিন্তু দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও উন্নয়ন- অগ্রগতির স্বার্থে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। জুলাই বিপ্লবে দেশের সব মানুষ অংশ নিয়েছিলেন একটি কাঙ্ক্ষিত মানের পরিবর্তনের বুকভরা আশা নিয়ে। তাদের সে আশার মূল্য দিতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন এগিয়ে নিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজ নিজ সক্ষমতা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, জুলাইযোদ্ধারা দেশ গঠনে আমাদের যে সুযোগ করে দিয়েছেন, তা কাজে লাগাতে হবে। আমরা যাতে দেশকে কারো কাছে বন্ধক না দেই, যেটা পতিত স্বৈরাচার সরকার করেছিল। আমরা সব সময়ই দেশের উন্নয়নে আপনাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার উপায় খুঁজে বের করার পরিকল্পনা নিয়েছি।
এই সফরে রাজনৈতিক নেতারা যোগ দেওয়ায় সরকারের আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমাদের অর্থনীতি একেবারে নিচে নেমে গিয়েছিল। আপনাদের রেমিট্যান্সই তা বাঁচিয়েছে। অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পেছনে আপনাদের রেমিট্যান্সই মূল চালিকাশক্তি।
তিনি আশ্বাস দেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে।
আঞ্চলিক অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নেপাল, ভুটান ও ভারতের সাত রাজ্য সমুদ্রবন্দরের অভাবে স্থলবেষ্টিত। যদি আমরা তাদের জন্য সমুদ্র উন্মুক্ত করি, সবাই উপকৃত হবে। সুযোগ নিশ্চিত হলে সবাই বাংলাদেশমুখী হবে।
ড. ইউনূস জানান, ইতোমধ্যে সামুদ্রিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বহু অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কক্সবাজার-মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য প্রস্তুত। এ সময় তিনি বঙ্গোপসাগরের গ্যাসসম্পদ অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তরুণদের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত তরুণ জনশক্তি রয়েছে। বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তর করে এ মানবসম্পদ কাজে লাগাতে এবং বাংলাদেশকে উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। তিনি জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে গত ১৫ মাসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলসহ তিনজন প্যানেলিস্টের একটি প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রবাসীরা বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের কাছে জানতে চান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বক্তব্য দেন।
পরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ‘শেপিং টুমরো : দ্য ফিউচার অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক আরেকটি প্যানেল আলোচনার সঞ্চালনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা শুভেচ্ছা নামে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনও চালু করেন, যা প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় পরিষেবা, নির্দেশনা এবং বিনিয়োগের সুযোগ প্রদানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানটি নানা আয়োজনমুখর ছিল। এতে ছিল প্লেনারি সেশন, নতুন ডিজিটাল অ্যাপ উদ্বোধন এবং প্রবাসী সম্পৃক্ততা। এতে প্রবাসীরা তাদের অভিজ্ঞতা, মতামত ও উদ্বেগ ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি নীতিনির্ধারক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরাসরি সংলাপের সুযোগ পান।
‘এনআরবি কানেক্ট ডে’ ছিল এক বিশেষ সমাবেশ; যেখানে ব্যবসা, একাডেমিয়া, স্বাস্থ্যসেবা, প্রযুক্তি ও সামাজিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি একত্রিত হন। এতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনুসন্ধান, নাগরিক সেবা গ্রহণ এবং টেকসই সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব সৃষ্টির মাধ্যমে প্রবাসীদের সম্পৃক্ততা জোরদারের সুযোগ তৈরি হয়।