- ড. আবদুল লতিফ মাসুম
- ২৩ জুন ২০২১
‘রাজা-বাদি উত্তর না-দি’। কথাটি রাজা-বাদশাহদের আমলের। রাজা যখন বাদি বা বিবাদি হন, তখন প্রজার উত্তর দেয়ার ক্ষমতা থাকে না। সে যুগে রাজা-বাদশাহরা সব মানুষের দণ্ড ও মুণ্ড অর্থাৎ আইন ও মাথা নেয়ার একক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। দিনে দিনে সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের উত্তর দেয়ার ক্ষমতা বেড়েছে। মানুষ বিদ্রোহ করেছে। নিরন্তর সংগ্রামের পর বিজয়ী হয়েছে। তখন তারাই দণ্ড মুণ্ডের কর্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনসাধারণ তাদের নিজেদের ভাগ্যবিধাতা হয়েছে। এই ব্যবস্থাটির নাম গণতন্ত্র। গণতন্ত্র মানুষকে বাঁচার অধিকার দিয়েছে। গণতন্ত্র মানুষকে মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে। সে ব্যবস্থাধীনে মানুষ কথা বলতে পারে। মানুষ তার ইচ্ছা এবং আশা-আকাক্ঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে পারে। মানুষ তার রাগ-দুঃখ-ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারে।
আব্রাহাম লিংকনের সেই চিরায়ত ভাষায় ‘মানুষের জন্য, মানুষের দ্বারা ও মানুষের মাধ্যমে যে তন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, পৃথিবী থেকে তা আর কখনো বিলীন হয়ে যাবে না’। মানুষের অধিকারের এই শক্ত উচ্চারণ থেকে বোঝা যায়, মানবিকতার দাবি কত গভীর, ব্যাপক ও সর্বাত্মক। এটিও নির্মম সত্য যে, জন্মগতভাবেই হবসের ভাষ্য মোতাবেক ‘মানুষ স্বার্থপর, হীনম্মন্য, পাশবিক, নোংরা এবং সঙ্কীর্ণ’। সেই সাথে ক্ষমতার লোভ তার রক্তের মতোই বাস্তব। দেশে দেশে, যুগে যুগে তাই আবির্ভাব ঘটেছে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বৈরতন্ত্রের। যেহেতু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পৃথিবীর সর্বত্র এবং গণতন্ত্র সমর্থিত হয়েছে পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দ্বারা এবং যেহেতু গণতন্ত্র হয়ে উঠেছে সভ্যতা, মানবিকতা ও অধিকারের প্রতীক, তাই গণতন্ত্রের মৌলিক দাবিকে অস্বীকার করা সহজসাধ্য নয়। তাই স্বৈরশাসকরা গণতন্ত্র নামের আড়ালে ও আবডালে নকল গণতন্ত্র কায়েম করতে চায়। গণতন্ত্রের খোলস বজায় রেখে অন্যকিছু ধারণ করতে চায়। এভাবে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা গণতন্ত্রকে নিঃশেষ করতে চেয়েছে, তারা কায়েম করতে চেয়েছে ‘শোষিতের গণতন্ত্র’।
নাসেরের মতো সামরিক শাসকরা দিয়েছে ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’, সুকর্ন দিয়েছেন ‘নির্দেশিত গণতন্ত্র’ এবং আমাদের দেশেও বাকশালের নামে কায়েম হয়েছিল ‘শোষিতের গণতন্ত্র’। সামরিক শাসক এরশাদ এবং লেবাসধারী সামরিক শাসক মইন ইউ আহমেদ ‘নয়া গণতন্ত্র’ উপহার দিতে চেয়েছিলেন। সব স্বৈরশাসককেই অবশেষে জনগণের তন্ত্রের কাছে আত্মসমর্পণ করে অবশেষে বিদায় নিতে হয়েছে। পৃথিবীর এই সময়ে গণতন্ত্রের বিকৃতি ও বিকার দেখে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা গণতন্ত্রের নানা ধরনের বিশেষণ দিয়েছেন। আমরা শুনছি ‘কপট গণতন্ত্র’, ‘অনুদার গণতন্ত্র’, এবং ‘এক দিনের গণতন্ত্র’ ইত্যাদি অভিধা। বিগত এক যুগ ধরে বাংলাদেশে ‘এক দিনের গণতন্ত্র’ও মৃত্যুবরণ করেছে। এখন আমরা সবাই প্রজা, তাদের রাজত্বে। সুতরাং সেই রাজা-বাদশাহরা বাংলাদেশে আবার ফিরে এসেছেন। সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীরা হয়তো বলবেন, পুনর্জন্ম হয়েছে তাদের। সুতরাং পুরনো প্রবাদটি ফিরে এসেছে বাংলাদেশে- ‘রাজা-বাদি উত্তর না-দি’। কথাটি মনে এলেও সাম্প্রতিক এক গুমের কাহিনী শুনে।
সপ্তাহখানেক আগে রংপুরের ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা আদনান তার দুই সফরসঙ্গী ও গাড়িচালকসহ নিখোঁজ হন। তার পরিবার থানায় নিখোঁজের মামলা করে। অভিযোগ করা হয় যে, সরকারের আইন ও শৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে গ্রেফতার করেছে এবং আটক করেছে। সরকারের তরফ থেকে শক্তভাবে তা অস্বীকার করা হয়। সামাজিক মাধ্যমে খবর রটে যায় যে, ত্ব-হা গং একটি গোয়েন্দা সদর দফতরে আটক রয়েছেন। যেহেতু তিনি ইসলামী বক্তা এবং সারা দেশে এখনো যখন হেফাজতে ইসলামের আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চলছে তখন ত্ব-হার গ্রেফতার বা আটক অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু সবাইকে অবাক করে ইসলামী বক্তা ত্ব-হা নিখোঁজের আট দিন পর সদলবলে ফিরে আসেন।
এরপর দেখা গেল, ত্ব-হাসহ চারজনের পরিবারের কেউই মুখ খুলছেন না। ভুক্তভোগীরা বলেন, এ অবস্থা থেকে বের হয়ে কেউ আর মুখ খোলেন না। যেমন- বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মাজহার। উল্লেখ্য, ত্ব-হা নিখোঁজ হন ১০ জুন রাত থেকে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ ত্ব-হা ঢাকার একটি মসজিদে খুতবা দেয়ার উদ্দেশে রংপুর থেকে বিকেল ৪টার দিকে ভাড়া করা একটি গাড়িতে রওনা হন। ওই দিন রাত আড়াইটা অবধি আদনানের সাথে পারিবারিক যোগাযোগ ছিল। পুলিশের ভাষ্য মোতাবেক, আদনান ওই রাতেই আশুলিয়া হয়ে আবার রংপুরের উদ্দেশে রওনা হন। তবে তারা রংপুর না গিয়ে গাইবান্ধার ত্রিমোহনী এলাকায় ত্ব-হার বন্ধু সিয়ামের বাসায় আট দিন আত্মগোপন করে থাকেন। এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, ১৮ জুন জুমার নামাজের পর প্রত্যেক পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে জানানো হয়- তারা সবাই বাড়ি ফিরে এসেছেন।
আবু ত্ব-হা শ্বশুরবাড়ির প্রতিবেশী একজনের ভাষ্য এরকম- ‘বেলা ১২টায় আমি আমার বাড়ির সামনের মোড়ে কাজ করছিলাম। এ সময় ত্ব-হাকে আমি একটি ব্লু রঙের গেঞ্জি, পায়জামা, মুখে মাস্ক ও মাথায় টুপি পরিহিত অবস্থায় দেখতে পাই। তিনি শ্বশুরবাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় আমি তাকে খুব ক্লান্ত অবস্থায় দেখেছি। আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, তোমার জন্য সারা দেশ পাগল। তুমি কোথায় ছিলে? তখন ত্ব-হা আমাকে মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ থাকার ইঙ্গিত করে বলে- বাসায় আসেন, পরে বলব’।
এরপর বিভিন্নভাবে ত্ব-হা আদনান ও তার সঙ্গী-সাথীদের সাথে কোনোক্রমেই গণমাধ্যমের লোকেরা যোগাযোগ করতে পারেননি। ত্ব-হা নিখোঁজ হওয়ার সংবাদটি জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। জাতীয় সংসদে তার উদ্ধারের দাবিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় প্রতিদিনই মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশ হয়। তার সন্ধান চেয়ে বিবৃতি দেয় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
ত্ব-হা আদনানের গুম বা নিখোঁজ হওয়া এবং এমনি এমনি ফিরে আসা নিঃসন্দেহে একটি রহস্যপূর্ণ ঘটনা। কিন্তু মজার ব্যাপার- কেউই এ রহস্যের উন্মোচন করতে পারেননি। তার গ্রেফতারের কয়েক দিনের মাথায় সংবাদপত্রে একটি খবর ছাপা হয় যে, তার মুক্তিপণ দাবি করে তার স্ত্রীর কাছে ফোন এসেছিল। ফোন দেয়া ব্যক্তির কোনো অস্তিত্ব পায়নি পুলিশ। একটি নির্দিষ্ট ফোন নাম্বারও উল্লেখ করা হয়। প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ফোনের অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি বলেন, আদনানসহ অন্যরা তাদের কাছে আছে। টাকা পয়সা দিলে ছেড়ে দেয়া হবে। টাকা চাওয়ার ব্যাপারটি গোপন রাখতে বলা হয়। ইমোর চ্যাটিংয়ের স্ক্রিনে কয়েকটি পর্যায়ে আরো খবর আসে। ত্ব-হা আদনানের পরিবারের পক্ষে ওই মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলেও অপরপ্রান্ত থেকে আর কোনো খবর আসেনি। অপর একটি প্রতিবেদনে পারিবারিক কলহের ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে তা ভিত্তি পায়নি। গোটা বিষয়টি এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে অসাধারণ ঔৎসুক্যের সৃষ্টি করেছে।
কেউ কেউ সাহস করে সরকারের আইন ও শৃঙ্খলা বিধায়ক এজেন্সিগুলোকে গুমের জন্য দায়ী করেছে। সাম্প্রতিককালে অন্তত ১০ জন গুম থেকে ফিরে এসেছেন। সরকারি এজেন্সির বিরুদ্ধে সাহস করে এদের কেউ মুখ খুলতে পারেননি। সাবেক মানবাধিকার কমিশন প্রধান প্রফেসর মিজানুর রহমান স্বীকার করেন, তারাও চেষ্টা করে কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারেননি। তিনি বলেন, প্রতিটি প্রত্যাবর্তনকারী তার জীবন সম্পর্কে শঙ্কিত ছিলেন। মিজানুর রহমান এ জন্য সরকারের বিচারব্যবস্থাকে দায়ী করেন। ফিরে আসার পর যারা আর মুখ খুলতে সাহস করেননি তাদের মধ্যে বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহারও রয়েছেন। তিনি অবশ্য একটি শব্দ দিয়ে সমগ্র বিষয়কে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। ‘তুলে নেয়া হয়েছিল’ বলে তিনি সব কথা বোঝাতে চেয়েছেন। আর একজন ফিরে আসা মানুষ হচ্ছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান। ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট তাকে ‘গোয়েন্দা শাখা’ পরিচয়ে লোকেরা তুলে নেয়। ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি ফিরে আসেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, গুম হওয়া লোকদের যাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে তাদেরকে সম্ভবত এই শর্তেই মুক্তি দেয়া হয়েছে যে, তারা মুখ খুলবেন না। মুখ খুললেই বিপদে পড়বেন। এমনকি তার জীবনহানির আশঙ্কাও থাকবে। অনুরূপ আরেকটি ঘটনা ঘটে রাষ্ট্রদূত মারুফ জামানের ক্ষেত্রে। ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর তাকে বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে গুম করা হয়। তিনি ফিরে আসেন ৪৬৭ দিন পর। তিনিও চুপ থাকেন। আরেকটি ঘটনা একজন শিক্ষক গবেষকের। ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বের হাসান কায়সারকে গুম করা হয়। দেড় মাস আটক থাকার পর তিনি ফিরে আসেন। ফিরে আসার কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি দেশ ত্যাগ করেন অথবা ত্যাগ করতে বাধ্য হন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তার কাছে ঘটনার বিবরণ চেয়ে চিঠি পাঠায়। তিনি কোনো উত্তর দেননি। যুব ইসলামী ওয়ায়েজিন মীর মোয়াজ্জেম হোসাইন সাইফিকে এ বছরের ১৪ মার্চ গুম করা হয়। তিন দিন পর মুক্তাগাছা থানায় এসে তারা হাজির হন। মীর মোয়াজ্জেম জানান, র্যাব তাদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগেও তাকে একই স্টাইলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার সাফাই গাওয়া হয় যে, এসব বিষয় সম্পর্কে গণমাধ্যমের মাধ্যমে তারা অবহিত। কিন্তু কেউ অভিযোগ না করা পর্যন্ত তারা তো কিছু করতে পারে না। সরকারের তরফ থেকে গুম সম্পর্কে আরো সাফাই গাওয়া হয় যে, এরা ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক অথবা কলহ-কোন্দলের কারণে আত্মগোপন করে। আর দোষ দেয় পুলিশের। রাজনৈতিক স্বার্থে পরিকল্পিতভাবে চ্যালেঞ্জিং ব্যক্তিদের গুম করা হয়- এ ধরনের অভিযোগ বিরোধী দলের। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, ইলিয়াছ আলীসহ অনেক নেতাকর্মীকে বর্তমান সরকার গুম করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক ভিন্নমতালম্বীদের গুম করার একটি অপ্রিয় ধারার সৃষ্টি হয়েছে।
যেকোনো দেশের সরকার তিনটি পবিত্র কর্তব্য সম্পাদনে নাগরিকদের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ তিনটি হলো- জীবন রক্ষার অধিকার, সম্পত্তি রক্ষার অধিকার ও নিজ সম্মান-মর্যাদার অধিকার। বেড়ায় যদি ক্ষেত খায়- রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তবে আর উপায় আছে কি? দুঃখজনক হলেও সত্য, এ ক্ষেত্রে বিগত ১২ বছরের ইতিহাস ও পরিসংখ্যান দুর্ভাগ্যজনক। সমাজতাত্তি¡করা এ গুম ও খুনের ঘটনাকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করেন। প্রথমত, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্মূলকরণ। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর রাজনৈতিক ও আদর্শিক স্বার্থসিদ্ধি। তৃতীয়ত, সম্প্রসারণবাদী শক্তির শত্রু নিধন। চতুর্থত, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সমীকরণ অনুযায়ী অপারেশন পরিচালনা। পঞ্চমত, আইন ও শৃঙ্খলা বাহিনীর গোচরে অথবা অগোচরে অপরাধী চক্রের দ্বারা অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়। বাংলাদেশের বিগত ৫০ বছরের ইতিহাস বিশেষ করে বিগত ১২ বছরের হিসাব-নিকাশ নিলে ওই নির্মম বাস্তবতাই প্রমাণিত হবে। প্রায়ই গণমাধ্যমে বিদেশী গোপন সংস্থাগুলোর তৎপরতার খবরাখবর প্রকাশিত হচ্ছে।
গত সোমবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করছেন, সরকার দিন দিন দানবীয় রূপ ধারণ করছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুলিশ দিয়ে হামলা করে বিরোধী নেতাকর্মীদের গুলি করে পঙ্গু করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এই মাফিয়া সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার সব অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, পুলিশ গত ১৭ জুন ছাত্রদল নেতা চট্টগ্রাম মহানগরীর সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে তার পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। পরবর্তী সময়ে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এ ঘটনা নিঃসন্দেহে নির্মম, নৃশংস, বীভৎস ও পৈশাচিক। ‘রাজা-বাদি উত্তর না-দি’ মধ্যযুগীয় এ চিন্তায় নাগরিক সাধারণ যদি নীরব, নিষ্পৃহ ও নিবৃত থাকে তাহলে ব্যক্তির জীবন, সম্পত্তি ও সম্মান যত দিন যাবে ততই নাজুক হয়ে পড়বে। নাগরিক হৃদয়ে আমাদের জিজ্ঞাসা- ‘আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডব দাহন? আর কতবার ভাসতে হবে রক্ত গঙ্গায়?’ কবে হবে এর অবসান?
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]