today-is-a-good-day
Saturday, April 20, 2024

গুম নেত্রী শেখ হাসিনা

31 August 2021

মাহমুদুর রহমান

আজ (৩০ আগষ্ট) গুমের শিকারদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস। গত এক দশকে পৃথিবীর যে সকল দেশে ভিন্ন মত দমনের উদ্দেশ্যে ফাসিস্ত সরকার গুমের মত ঘৃণ্য ও আন্তর্জাতিক আইনে বিচারযোগ্য অপরাধ চালাচ্ছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। শেখ হাসিনার ২০০৯ সালে ভারতের সহায়তায় রাষ্ট্রক্ষমতা প্রাপ্তির পর থেকে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ছয়শ নাগরিককে গুম করা হয়েছে। অবশ্য গুমের শিকার পরিবারবর্গের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এর পক্ষ থেকে দাবী করা হয়ে থাকে যে, গুম হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে কয়েক হাজার। গুম হওয়া মানুষদের এক ক্ষুদ্র অংশকে দীর্ঘ দিন আটকে রেখে শেখ হাসিনার সরকার নির্জন জায়গায় জীবিত ফেলে দিলেও, অধিকাংশ পরিবার পরিজন নিদারুণ বেদনায় ও অনিশ্চয়তায় বছরের পর বছর কাল অতিবাহিত করছেন।স্ত্রী জানেন না তার প্রিয়তম স্বামী জীবিত আছেন কিনা, সন্তান জানে না তার স্নেহময় পিতা আর কখনও ফিরে আসবেন কিনা, মাতা=পিতা জানেন না তারা মৃত্যুর পূর্বে অন্তত নিখোঁজ পুত্রের পরম আদরের মুখখানা দেখে যেতে পারবেন কিনা।

২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ এমন ভয়ংকর, নিপীড়ক রাষ্ট্র ছিল না। বরঞ্চ, ইসলামিক বিশ্বে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সফল উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা হতো। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশটিতে জনগণের ভোটাধিকার ছিল, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল এবং গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারত। স্বাধীন এবং সাহসী বিচার বিভাগ থাকায় প্রশাসন দলীয় প্রভাবমুক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য হতো। কিন্তু, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মদদপুষ্ট সেনা অভ্যুত্থান বাংলাদেশের জনগণের মানবাধিকার সম্পূর্ণভাবে হরণ করেছে। আন্তর্জাতিক ইসলামবিদ্বেষী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে বংশ পরম্পরায় ভারতের দালাল শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী মহল দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে পাহারাদার নিযুক্ত করার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে নিজ দেশে বন্দী করেছে দিল্লির হিন্দুত্ববাদী শাসকশ্রেণি। তাদেরকে গুম করা হচ্ছে, বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হচ্ছে, নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন চালিয়ে হয় হত্যা অথবা পঙ্গু করা হচ্ছে, বানোয়াট মামলায় বছরের পর বছর কারাগারে আটক রাখা হচ্ছে।

বছরে একটি দিন এই জাতীয় আন্তর্জাতিক দিবস পালন করে হাসিনা এবং দিল্লির জিঞ্জির থেকে বাংলাদেশের জনগণের মুক্তি মিলবে না। তবে দিবসটি পালনের মাধ্যমে আমরা অন্তত দুনিয়ার মানুষকে বাংলাদেশের ভয়াবহ পরিস্থিতির বিষয়টি অবহিত রাখতে সক্ষম হব। আগামীকাল মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশের গুম নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করি প্যানেলভুক্ত বক্তারা খুনি হাসিনার কর্মকাণ্ডের সঠিক বর্ণনা সাহসের সংগে দিতে সক্ষম হবেন। আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে মার্কিনীদের উপলব্ধি করা উচিত যে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ হিন্দুত্ববাদী ভারতের খবরদারি দীর্ঘ সময় মেনে নেবে না। ওয়াশিংটন কেবল মুখে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের ফাঁকা বুলি আওড়ালে পৃথিবীতে শান্তি ফিরবে না। ইসলামিক বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাইডেন প্রশাসনকে আন্তরিকতার সাথে সহায়তা প্রদান করতে হবে। হাসিনা এবং সিসির মত একবিংশ শতাব্দীর ফাসিস্ত শাসকদের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করলেই কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার সম্ভব। অন্যথায় মুসলিম জনগোষ্ঠী তাদেরকে শত্রুরূপেই বিবেচনা করবে। আশরাফ গানিদের মত দালাল সৃষ্টি করার ভ্রান্ত নীতি পরিবর্তন করলে আখেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাভবানই হবে। আমরা আশা করবো হাজার হাজার মানুষকে গুম করার কারণে একদিন আন্তর্জাতিক আদালতে শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে। ঠিক যেমন করে সেব্রেনিতসার খুনি কারাদজিক এবং ম্লাদিচের বিচার হয়েছে।