অনেকটা আকষ্মিকভাবেই বিরত্ব/সাহসিকতার জন্য ছয়টি ক্যাটাগরিতে সেনাবাহিনীর ১১৬ জন সদস্যকে পদক দেয়া হচ্ছে। এই পদক প্রাপ্তদের মাঝে রয়েছেন সেনা প্রধান থেকে শুরু করে সাধারণ সৈনিক পর্যন্ত। ছয় ক্যাটাগরির প্রথম পদকটির নাম-‘সেনাবাহিনী পদক’। এর জন্য মনোনীত হয়েছে চার জন। এই মনোনীতদের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ-এর নাম। দ্বিতীয় নামটি হচ্ছে, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভুত হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান। সেনাপ্রধান নিজেই কেন সেনা পদক নিচ্ছেন এই প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র। সম্প্রতি প্রকাশিত সেনা প্রধান ও তাঁর বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল শহিদ উদ্দিনের খানের টেলিকথোপকথনে উঠে এসেছে গুম-খুন ও বিচারবহির্ভুত হত্যায় জিয়াউল আহসানের সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি। সেনাপ্রধান আজিজ আহমদ স্পষ্ট করেই বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক আহমদ সিদ্দিকীর নিয়ন্ত্রণে ব্রিগেডিয়ার জিয়াউল আহসান এবং জেনারেল জোবায়ের গুম-খুনের প্রধান দুই হোতা।
র্যাবের উপ-প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে জিয়াউল আহসান কর্তৃত ভিন্নমতের নেতাকর্মীদের গুম, খুনের বিষয়টি সেই টেলি আলাপে উঠে আসে। ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যার পুরস্কার হিসাবে তাঁকে ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রীয় পুলিশ পদক দেয়া হয়েছে। এবার তিনি সেনাবাহিনী পদকের জন্যও মনোনীত হয়েছেন। যে সেনাপ্রধান বন্ধুর কাছে জিয়াউল আহসনাকে গুম-খুনের হোতা বলেছেন, সেই সেনাপ্রধান আজিজ এখন তাঁকেই সেনাবাহিনী পদক দিচ্ছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য এরচেয়ে লজ্জাকর আর কিছু বোধ হয় হতে পারে না। হাসিনা-তারেক সিদ্দিকী-আজিজ-জিয়াউল আহসানরা এক সময়ের দেশপ্রেমিক বাহিনীকে কত নিচে নামাবেন সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।
গত ৪ নভেম্বর সেনাবাহিনীর ইস্যু করা পদকের জন্য মনোনীতদের একটি তালিকা আমার দেশ ইউ’কের কাছে এসেছে। এই তালিকায় দেখা যায়, ৬টি ক্যাটাগরিতে পদক দেয়া হচ্ছে। এই ক্যাটাগরির মধ্যে প্রথমে রয়েছে-সেনাবাহিনী পদক। এই পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমদ, ব্রিগেডিয়ার জিয়াউল আহসান, ব্রিগেডিয়ার তৌফিকুল হাসান সিদ্দিকী ও লে, কর্ণেল এ কে এম ফয়জুল হক। এই পদকের সম্মানী হিসাবে তারা এককালীন পাবেন দেড় লাখ টাকা। এর পাশাপাশি প্রতিমাসে তারা ভাতা পাবেন আড়াই হাজার টাকা।
দ্বিতীয় ক্যাটাগরি ‘অসামান্য সেবা পদক’-এর জন্য মনোনীত হয়েছেন, ৭ জন। তারা হলেন, লে. জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ, মো: এনায়েত উল্লাহ, মেজর জেনারেল আলমগীর হোসেন, মেজর জেনারেল মো: সোহায়েল হোসেন খান, মেজর জেনারেল গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরী। মেজর আ ন ম শাকিল নেওয়াজ।
এই পদকের জন্য তারা পাবেন, এককালীন ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। মাসিক ভাতা পাবেন দুই হাজার টাকা।
তৃতীয় ক্যাটাগরির পদকটি নাম হচ্ছে, ‘বিশিষ্ট সেবা পদক।’ এই পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন ২০ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন, একজন লে. জেনারেল, ১১ জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, একজন কর্ণেল, ৩ জন লে. কর্ণেল, একজন মেজর, একজন অনারারি ক্যাপ্টেন, একজন কর্পোরাল এবং একজন ল্যান্স কর্পোরাল।
তৃতীয় ক্যাটাগরিতে মনোনীতরা পাবেন এককালীন ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। মাসিক ভাতা পাবেন ১ হাজার ৮ শত টাকা।
চতুর্থ ক্যাটাগরির পদকের নাম হচ্ছে, ‘সেনা গৌরব পদক’। এই পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন ৩০ জন। এই পদে মনোনীতরা পাবেন এককালীন এক লাখ টাকা এবং প্রতিমাসে ভাতা পাবেন এক হাজার সাত শত টাকা।
পঞ্চম ক্যাটাগরি পদকের নাম ‘সেনা উৎকর্ষ পদক’। এই পদের জন্যও মনোনীত হয়েছেন ৩০ জন। তারা পাবেন এককালীন ৮৫ হাজার টাকা এবং প্রতিমাসে পাবেন এক হাজার ছয় শত টাকা।
ষষ্ঠ ক্যাটাগরি পদকের নাম ‘সেনা পারদর্শীতা পদক’। এই পদের জন্য মনোনীত হয়েছেন ৩০ জন। তারা পাবেন এককালীন ৭৫ হাজার এবং প্রতি মাসে পাবেস এক হাজার পাঁচ শত টাকা।
গত ৪ নভেম্বর সেনাবাহিনীর এ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মো: এনায়েত উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই পদকের চুড়ান্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়।
ফ্যাসিষ্ট সরকারের সুবিধাভোগীদের কাজ কারবার দেখে মনে হচ্ছে রাষ্ট্রের সকল সম্পদ নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়াই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
পদক প্রাপ্তদের তালিকা