গরুর গোশত ৫০০ টাকায় নিয়ে আসা সম্ভব : বিডিএফএ সভাপতি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  •  ৩০ জুলাই ২০২৩, ২০:৪১
গরুর গোশত ৫০০ টাকায় নিয়ে আসা সম্ভব : বিডিএফএ সভাপতি। – ছবি : নয়া দিগন্ত

অল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সাতটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে গরুর গোশতের দাম ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন গো-খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মো: ইমরান হোসেন।

রোববার (৩০ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে বিডিএফএয়ের সহযোগিতায় জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর আয়োজিত এক কর্মশালায় মূল বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। এ সময় তিনি গরুর গোশত দাম কমানো পদক্ষেপ-সংক্রান্ত সুপারিশ তুলে ধরেন।

সুপারিশে তিনি তুলে ধরেন, প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জাত উন্নয়নের মাধ্যমেই গরুর গোশতের দাম ২০ থেকে ২৫ ভাগ কমিয়ে সম্ভব। ঢাকার বাজারে এখন যে দামে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে তা থেকে কেজি প্রতি ৫০ টাকা কম দামে গরুর গোশত বিক্রির ঘোষণা দেন তিনি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, বর্তমানে ঢাকায় গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি দরে।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দুই বছর বয়সী একটা দেশী গরু আরসিসি, নর্থ বেঙ্গল, গ্রে, শাহীওয়াল থেকে সর্বোচ্চ ১২০-১৫০ কেজি পর্যন্ত গোশত পাওয়া যায়। যেখানে গোশতের জাত হিসেবে পরিচিত ব্রাহমাতে যেতে পারলে একই সময়ে ২৫০-৩০০ কেজি পর্যন্ত গোশত পাওয়া সম্ভব, যেটা উৎপাদন খরচকেও কমিয়ে আনবে। কারণ দেশী জাতের এক কেজি গোশত উৎপাদনে ১২-১৩ কেজি খাবার দরকার, যেখানে ব্রাহমার এক কেজি গোশত উৎপাদনে পাঁচ-ছয় কেজি খাবার প্রয়োজন হয়।

মূল বক্তব্যে বলা হয়, প্রসেস ফিডের ইনগ্রেডিয়েন্ট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে স্থানীয়ভাবে উন্নতজাতের ঘাস চাষ ও সাইলেজ তৈরির মাধ্যমে বিকল্প খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারলে দাম কমিয়ে আনা সম্ভব। ফসলের উচ্ছৃষ্টাংশ- ধানের খড়, ভূট্টা গাছের কাণ্ড, বিভিন্ন ডালের গাছ, কলাগাছসহ অন্য সকল প্রকার ফসলের বাইপ্রোডাক্ট প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে উচ্চমানের গো-খাদ্য তৈরি সম্ভব। দানাদার খাদ্যের পরিবর্তে চাষিরা কিভাবে এই খাবার কম খরচে প্রস্তুত করা যায় সে বিষয়ে খামারিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারলে কম দামে বিকল্প খাদ্য পাওয়া সম্ভব। যা গোশতের দামে প্রভাব ফেলবে।

এছাড়া যথাযথ মূল্যে চামড়া বিক্রির ব্যবস্থার কথা বলা হয়। চার-পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের চামড়া এখন ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ চামড়ার সঠিক দাম দিতে পারলে প্রতি কেজি গোশতে ৩০-৪০ টাকার একটা ইমপ্যাক্ট পড়বে।

মো: ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমরা গরুর গোশতের দাম কমাতে চাই। এর অংশ হিসেবে খামারিরা যে দামে গরুর গোশত বিক্রি করছে আগামীকাল (সোমবার) থেকে তার চেয়ে ৫০ টাকা কমে বিক্রি করব। গরুর গোশতের দাম ভোক্তার নাগালের মধ্যে আনতে চাই। এরই পদক্ষেপ হিসেবে এই অ্যাসোসিয়েশনের খামারিরা প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ টাকা কমে গরুর গোশত বিক্রি করব।’

ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামন বলেন, ‘প্রতিবছর ১০ মিলিয়ন পিস চামড়া উৎপাদন হয়, যেখানে আমরা ব্যবহার করতে পারি মাত্র এক মিলিয়ন। বাকিটা নিয়ম মেনে রফতানি করতে পারলে দাম ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’

এ এইচ এম শফিকুজ্জামান আরো বলেন, ‘আমাদের কিছু নীতিগত সমস্যা আছে। আমরা দুধ উৎপাদনকে বেশি প্রায়োরিটি প্রদান করছি, গোশত রয়েছে দ্বিতীয় ধাপে। কিন্তু আমাদের উচিত দুধ ও গোশতের উৎপাদন বাড়ানোটাকে সমানতালে নিয়ে যাওয়া।’

তিনি বলেন, ‘ভোক্তা পর্যায়ে গোশতের দাম কমানোর জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে যে পদক্ষেপ দরকার সেগুলো আরো পর্যালোচনা করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে সুপারিশ আকারে তুলে ধরা হবে।’