গণহত্যায় জড়িত পুলিশের তালিকা হচ্ছে

 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের তালিকা করা হচ্ছে। একই সাথে আন্দোলন দমনের নামে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে কার কী ভূমিকা ছিলো, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের যেসব শহরে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে সেখানে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে কার কার নির্দেশে গুলি করা হয়েছিল, কে কতো গুলি করেছিলো, মাঠ পুলিশের কোন কোন সদস্য আন্দোলন দমনে অংশ নিয়েছিলো তার বিস্তারিত তথ্য জানতে তদন্ত চলছে। পুলিশ সদর দফতর ও একটি গোয়েন্দা সংস্থা হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শত শত ছাত্র-জনতা হত্যার নেপথ্যে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা অদৃশ্য ক্ষমতা বলে এখনো পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে রেখেছেন। যে সব পুলিশ কর্মকর্তা মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালাতে বাধ্য করেছিলেন সেই সব কর্মকর্তাদের অনেকেই এখনো বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের নীতি নির্ধারক। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বঞ্চিত পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাগ্যও নির্ধারণ করা হচ্ছে এদের মাধ্যমে। অথচ ছাত্র-জনতার খুনের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনাই ছিলো বর্তমান সরকারের প্রথম অঙ্গীকার। এছাড়া এদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে বিগত আওয়ামী সরকারের সময় খুন-ঘুমের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ও ছিলো ওপেন সিক্রেট। গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে এসব কর্মকর্তার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত খুনসহ নানা অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিক হলেও তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো উদ্যোগ নেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পুলিশ সদর দফতরের।

নাম প্রকাশ না করে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে দলীয় বিবেচনায় পুলিশে ব্যাপক নিয়োগ হয়েছে। পদোন্নতি ও ভালো জায়গায় পদায়নে তদবির হয়েছে। পুলিশ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরসহ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে যারা জড়িত ছিলো তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া প্রায় শেষ করে এনেছে। প্রাথমিকভাবে ওইসব কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। আওয়ামী সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর পুলিশ সদর দফতরের পিআইএমএস (কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডার) হ্যাক হয়েছিলো। সেখানে কর্মকর্তাদের বাসা-বাড়ির ঠিকানা ও ব্যক্তিগত তথ্য ছিলো। প্রথমে এসব তথ্য না পেলেও মাসখানেক আগে তা পাওয়া যায়। এরই মধ্যে শতাধিক কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড নজরদারি করা হচ্ছে।

একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইনকিলাব বলেন, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে পুলিশ বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছিলো। উচ্চাভিলাষী অপেশাদার কিছু পুলিশ কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে পুলিশের বিভিন্ন আইন ও প্রবিধান লঙ্ঘন করে আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেন। জুলাই-আগস্টের আওয়ামী সরকার পতনের আন্দোলনে নিষ্ঠুরভাবে হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা ও পঙ্গু করা হয়েছে। অথচ এ পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, চাকরির পর বেতন সবই হতো এদেশের সাধারণ জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। যে অস্ত্র দিয়ে ছাত্র-জনতাকে গুলি চালানো হয়েছে সেগুলো পুলিশ বাহিনীকে দেয়া হয় দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। কিন্তু কিছু অপেশাদার পুলিশ কর্মকর্তার কারণে আজ পুরো পুলিশ বাহিনী সাধারণ মানুষের কাছে আস্থা হারিয়েছে। সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনা এখনো চলছে। তারা রাজনৈতিক বলয় থেকে বের হতে নানাভাবে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। এবার সময় এসেছে ‘একটু ঘুরে দাঁড়াতে’। অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা করছে পুলিশ বাহিনী সংস্কার করতে। সংস্কার করতেই হবে। আইজিপি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। রাজনৈতিক সরকার পুলিশের কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। দলীয় বিবেচনায় কাউকে নিয়োগ দিতে পারবে না। সূত্র আরও জানায়, ঢাকায় ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমনে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। এতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ হতাহত হয়। এ বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডের মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশাসনের সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হয়েছে। এরই মধ্যে সারাদেশে ৩০০টি মামলায় অন্তত ৪৫০ জন পুলিশকে আসামি করা হয়েছে। আসামির তালিকায় রয়েছেন চারজন সাবেক আইজিপি ও ২০ জন অতিরিক্ত আইজিপি। দুই সাবেক আইজিপিসহ গ্রেফতার হয়েছেন পুলিশের ১৭ জন কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের বেশকয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শত শত ছাত্র-জনতা হত্যার নির্দেশ দাতা এবং সরাসরি গুলি করে ছাত্রদের হত্যার সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা এখনও অধরা। অথচ দোষী পুলিশ কর্মকর্তা এবং নির্দেশদাতাদের বিচারের মুখোমুখি করা শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি। গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর গুলির ঘটনায় একের পর এক মামলা হচ্ছে। নির্দেশদাতা হিসেবে আসামি হচ্ছেন ওই সব পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা ও আহত করে আওয়ামী সরকারকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন এসব পুলিশ কর্মকর্তারা।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ইনকিলাবকে বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে জড়িত পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে এবং এসব মামলায় অনেকেই এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। আরো তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। আন্দোলনের সময় গুলির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

inqilab

1 COMMENT

  1. About time. Two months too late though because this has given time to the guilty police officers and men to escape, “massage” or “goom” their records, and etc. So, in addition to searching for the guilty one other simple thing for the government to do is to make a list of all the police officers and cadres that have been hired during the 15 years of the AL regime. This is a simple check, because they do not have to search files and files for each man; they just have to find out what year they were hired. ALL SUCH MEN SHOULD BE AUTOMATICALLY ON THE LIST OF CULPRITS UNTIL PROVEN INNOCENT. The next step could also be simple – look at their employment profile to see if they were originally Chatra League members or AL party memeber, or recommended by an AL MP or something like that. These are much simpler/easier steps than looking at all their employment files. Then, fire all of them, UNLESS THEY CAN PROVE THEIR INNOCENCE. The burden should be on them to prove innocence, not on the CG govt to prove them guilty.

Comments are closed.