গণতন্ত্র ও মানবাধিকার না থাকলে জাতি হিসেবে আমরা টিকে থাকবো না: ড. ইউনূস

 

 

আমি চারদিকে বিপদের মধ্যে আছি। এ অবস্থায় কথা না বলা নিজেকে রক্ষা করার একটা সুবিধা। যতো কথা কম বলা যায়, ততোই হয়তো ঝামেলার হাত থেকে বাঁচবো। ১২ তারিখে আমাদের অফিস দখল নিতে গেলো। আমরা পুলিশের কাছে গেলাম। পুলিশ বললো, আমরা এ ব্যাপারে কিছু করতে পারবো না

শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাতে ইউটিউবে ‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশো-তে ‘মুখোমুখি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এমন মন্তব্য করেছেন।

সম্প্রতি গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে দেশের সবাইকে এক কণ্ঠে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছিলেন ড. ইউনূস। এই বক্তব্য ব্যখ্যা করার অনুরোধ করলে তিনি বলেন, আমরা কেউই গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে না এটা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া। আমরা সবাই গণতন্ত্রের পক্ষে, মানবাধিকারের পক্ষে, ন্যায়-নীতির পক্ষে। এগুলো না থাকলে জাতি হিসেবে আমরা টিকে থাকবো না। গণতন্ত্রের কথা সবাই এখন মুখ খুলে বলতে পারছে না।

বিভিন্ন সময় নিজেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতিবাচক মন্তব্যের কারণ হিসেবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমার মনে হয়, উনি মনে করেন যে আমি দেশের সর্বোচ্চ ডাকু, সন্ত্রাসী কিংবা অপরাধী; আমি সেরা চোর।

উনি বলেন যে, আমি সুদখোর, আমি ঘুষখোর। এমনসব কটু শব্দ ব্যবহার করেন যাতে মনে হয় যে আমার সম্পর্কে তার ধারণা খুবই খারাপ।’

বাংলাদেশের কয়জন মানুষ বলবে, আমি সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করবো না? আমিতো করলাম সেটা। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এমন মন্তব্য করেছেন।

অনুষ্ঠানে ২০০৭ সালে “ওয়ান ইলেভেন” পরবর্তী ঘটনা প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, যদি (রাষ্ট্র পরিচালনা করতে) চাইতাম, তাহলে যখন মিলিটারি আমার বাসায় এসে বসে রইলো সারারাত আমাকে রাজি করানোর জন্য, আমিতো লুফে নিতাম! রাজি করানোর জন্য বসে থাকতে হবে কেন! আমি যদি ক্ষমতা-ই চাইতাম তাহলে বলতাম, চলেন চলেন কি কর‍তে হবে, কোন জামাটা পরতে হবে দেখিয়ে দেন, এখনই যাচ্ছি৷ আমিতো সেটা করিনি। তাদের সাথে তর্ক করেছি। সারারাত ধরে তর্ক করেছি যে- না ভাই, আমাকে দিয়েন না। আমি এ কাজের জন্য উপযুক্ত না। আপনারা অন্য লক্ষ্যে যান।

ড. ইউনূস বলছিলেন, কিন্তু তারা আমার উপর মন ঠিক করে ফেলেছে, আমাকেই নিতে হবে। আমিও বারবার বললাম তাদেরকে। শেষে তারা নিরাশ হয়েই ফিরে গেলো এই বলে যে সকাল বেলায় আবার আসবো। সকাল বেলায় আসলে তখন আপনি আমাদের বইলেন, আপনি রাজি আছেন। আমি বললাম, না, সকাল বেলায় আসলে একই কথাই পাবেন।

কারণ, এটাতো এমন কিছু না যে মনের মধ্যে সন্দেহ রেখে, দ্বন্দ্ব রেখে আপনাদেরকে বলছি। অত্যন্ত পরিষ্কারভাবেই আপনাদের বলছি। না হলেতো আমি সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যেতাম।

ড. ইউনূস প্রশ্ন করেন, “কে ছাড়ে? দেশের, সরকারের প্রধান হওয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছে…। বাংলাদেশে এমন কয়জন মানুষ আছে যে বলবে- না, আমি এই দায়িত্ব গ্রহণ করবো না? আমিতো করলাম সেটা। এখন আমার নামে বলা হচ্ছে, আমি নাকি ১০ বছর চেয়েছি! বছর নিয়েতো প্রশ্নই উঠে না! (তারা) প্রশ্ন করে যে, আগামীকাল সকাল বেলায় আপনি শপথ গ্রহণ করবেন? আমি বললাম, না করবো না। এরপরতো ১০ বছর…এই কান্ড…৷ আমি ১০ বছর দিয়ে করবো টা কি? আমিতো বলেছি, আমি এই কাজের জন্য নই। দেশ পরিচালনা করা আমার দায়িত্ব না, আমার কাজ না। আমি জানি না, এটা কিভাবে করতে হয়। আমি যেটা জানি, সেটা করি।”

মানব জমিন