‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই’

নয়া দিগন্ত অনলাইন 

২১ নভেম্বর ২০২১, ১৭:২৩, আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২১, ১৭:৫৫

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল-খালেদা জিয়া-বিএনপি
‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই’ – ছবি : সংগৃহীত

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার একটি আবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে দেয়া হয়েছে। খবরটি নিশ্চত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আইনগতভাবে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার আবেদন বিবেচনা করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এর আগে আইনমন্ত্রীও বলেছেন। মানবিক কারণেই তিনি (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার জন্য কারাগারের বাইরে রয়েছেন।

রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে এ আবেদন পেশ করেন।

আবেদনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে একটি আবেদন নিয়ে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এসেছিল। আমি তাদের আবেদনটি রেখেছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে চান। আমাদের মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম শেষ করে আবেদনটি আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেব।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বিদেশ থেকে যেকোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখানে আসতে পারেন। আমাদের হাসপাতালগুলো ওয়েল ইক্যুইপ্ট। বিদেশ থেকে যেকোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখানে আসতে পারে। বিদেশি চিকিৎসক এলে সে চিকিৎসা ওখানে করা যায়, সে চিকিৎসা এখানেও করতে পারেন। কিছুক্ষণ আগে ইউনাইটেড হাসপাতালের একজন চিকিৎসক আমার এখানে এসেছিলেন, তিনিও আমাকে একই কথা বলেছেন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এখানে এসেছেন। তাদের আবেদনটি ছিল যে, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি একদম জীবনের শেষ প্রান্তে এসেছেন। কাজেই তাকে আরো উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া যায় কি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের একটি আবেদন এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তাদের বলেছি যে, এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই একটা আবেদন করেছিলেন। সেটাও আমি আইন মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠিয়েছিলাম। আইনমন্ত্রী যথাযথভাবে পার্লামেন্টের প্রশ্নোত্তরের সময় বিস্তারিত বলেছেন। আমি এটা বলার পর তারা বলেছেন—এটা মানবিক কারণে দেয়া যায় কি না, বিবেচনা করার জন্য আমার কাছে দিয়েছেন। এটা আমি যথাযথভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেব।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হচ্ছে না। তারা গণঅনশন, মানববন্ধন, দোয়া অনুষ্ঠান করছে। কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু, ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের জানমালের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে তা দমন করা হবে।’

এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ শেষে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার আবেদন জানিয়ে একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়েছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের আবেদন আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন। তিনি এটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি মানবিকভাবে দেখবেন। খালেদা জিয়া একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন। দেশের জন্য তাকে অনেক অবদান রয়েছে। তিনি আজ জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে নিতে হবে।’

সৈয়দ ইব্রাহিম আরো বলেন, ‘অতীতের রাজনৈতিক মান-অভিমান ও তিক্ততা ভুলে গিয়ে সরকার খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে নেয়ার অনুমতি দেবেন।’

প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কারি এমএ তাহের, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিম এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা।