‘দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস’ নীতিমালার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা মানবাধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনকে লঙ্ঘন করতে পারে বলে মনে করছেন জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিকাশ ও সুরক্ষাবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান। তাই জনগণকে সম্পৃক্ত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি প্রক্রিয়ায় এই খসড়া নীতিমালা আরও পর্যালোচনার সুপারিশ করেছেন তিনি।
ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস নীতিমালা নিয়ে নিজের মতামত, উদ্বেগ ও সুপারিশের বিষয়গুলো সরকারকে পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন আইরিন খান। ৬ ফেব্রুয়ারি পাঠানো ওই চিঠি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
চিঠিতে জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার বলেন, অনলাইনে শিশু ও ঝুঁকিতে থাকা অন্যান্য গোষ্ঠীর নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার এই নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু খসড়া নীতিমালায় এমন কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে এবং বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায় এমন অনেক শব্দমালা ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে এটা আইনি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া বৈধ অনেক কনটেন্ট (আধেয়) সরিয়ে ফেলার মতো ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন হবে।
নীতিমালার খসড়া নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আইরিন খান বলেন, বাংলাদেশ সরকার এমন একটি আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে, যেখানে বিচারিক কর্তৃপক্ষের বদলে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কার্যত মানুষের বৈধ বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা পাবে। এ ছাড়া খসড়া নীতিমালা তৈরির আগে আলোচনার প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর যথেষ্ট অংশগ্রহণ ছিল না বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
চিঠিতে খসড়া নীতিমালা নিয়ে কিছু সুপারিশ করেছেন আইরিন খান। তিনি বলেন, হাইকোর্টের এক নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে বিটিআরসি নতুন কনটেন্ট নীতিমালা পর্যালোচনা করছে। ওই নির্দেশনায় হাইকোর্ট অনলাইন কনটেন্ট ও ওটিটির নীতিমালা তৈরির কথা বলেছিলেন। তবে তিনি মনে করছেন, ওই পর্যালোচনায় প্রয়োজনীয় মতামত দিতে আলোচনায় সাধারণ জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকছে না।
এমন অবস্থায় সরকারের প্রতি আইরিন খানের পরামর্শ, খসড়া নীতিমালায় তৈরিতে জনগণের সম্পৃক্ততা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরও পর্যালোচনা ও মতামত নিতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় সরকারি–বেসরকারি দুই পক্ষই থাকবেন। এ ছাড়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গোপনীয়তা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে—এমন সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতকেও অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকা এবং প্রান্তিক বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের কাছ থেকেও পরামর্শ নিতে হবে।
আইরিন খানের বিশ্বাস, যেসব আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, বিশেষ করে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির (আইসিসিপিআর) ১৭ ও ১৯ অনুচ্ছদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি চূড়ান্ত খসড়া তৈরি নিশ্চিত করতে এসব পক্ষের মতামত নেওয়া জরুরি।
প্রসঙ্গত, চিঠিতে উল্লেখ করা ‘দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস-২০২১’ নামের ওই খসড়া নীতিমালাটিতে পরে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ২০২১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসি খসড়া নীতিমালাটি প্রকাশ করে। একই বছর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ‘ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান এবং পরিচালনা এবং বিজ্ঞাপন প্রদর্শন নীতিমালা-২০২১’ খসড়া প্রকাশ করে। দুটিতেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বিষয় থাকার কারণে পরবর্তী সময়ে বিটিআরসি ওটিটি শব্দ বাদ দিয়ে ‘রেগুলেশন ফর ডিজিটাল অ্যান্ড স্যোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মস-২০২১’ নামে আরেকটি খসড়া প্রকাশ করে।