ক্ষমতা মানে আমার কাছে সেবা করার সুযোগ: প্রধানমন্ত্রী

টানা চারবার ক্ষমতায় আসতে পেরে জনগণের প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার কাছে ক্ষমতা কোনো ভোগের বস্তু নয়, আমার কাছে ক্ষমতা মানে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের একটা সুযোগ। মানুষের কল্যাণে কাজ করার এবং মানুষকে সেবা দেয়ার একটা সুযোগ। যেটা আমি আবারো পেয়েছি। গতকাল রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে মাসব্যাপী ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম। স্বাগত বক্তব্য দেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান।

অনুষ্ঠানে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ এবং স্থানীয় ও বিনিয়োগ আকর্ষণে গত ১৫ বছরে গৃহীত সরকারি পদক্ষেপের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে আমাদেরকে আবার তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে এবং মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া চাই যেন খুব সফলভাবে বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারি। আর এক্ষেত্রে আপনাদের সকলের সহযোগিতা আমার একান্তভাবে কাম্য। তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমাদের গ্রাজুয়েশন হয়েছে উন্নয়নশীল দেশে, ২০২৬ সাল থেকে তা কার্যকর  হবে।

কাজেই এই সময়টা আমাদের সরকারে আসাটাও মনে হয় খুব প্রয়োজন ছিল।কারণ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে যে সকল সুযোগগুলো আমরা পাবো সে সুযোগগুলোকে আমাদের যেমন যথাযথভাবে ও  সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে হবে তেমনি যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে সেগুলোও আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ সময় সরকারপ্রধান বৈদেশিক আয় বাড়াতে তৈরি পোশাকের মতো পাট ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য এবং হস্তশিল্পসহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্যে একই গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। বলেন, আমাদের আরও নতুন পণ্য উৎপাদন এবং নতুন বাজার (রপ্তানির জন্য) অন্বেষণে মনোযোগ দিতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, এবার যে নির্বাচন ইশতেহার দিয়েছি সেখানে আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াবো ১৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যদিও এক্ষেত্রে সময় খুব কম, কিন্তু আমাদের নতুন নতুন বাজার ধরতে হবে। আর একটা  লক্ষ্য স্থির থাকলে যেকোনো অর্জন সম্ভব হয়। আমরা সেভাবেই কাজ করতে চাই। তিনি বলেন, দেশে সরকার  ১শ’ অর্থনৈতিক  অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে এবং কোন অঞ্চলে কোন পণ্য ভালো হয় সেখানে সেই শিল্প গড়ে উঠবে। সেবা খাতেও আমাদের যথেষ্ট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে এবং ভালো সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এই খাতে রপ্তানি আয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছে এবং আইসিটি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার বিশাল সুযোগ সামনে রয়ে গেছে।

আইটি খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয় ২৭ দশমিক ৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ দেশে পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারছি। যদিও বিশ্ব মন্দার অভিঘাতে ইউরোপ আমেরিকার অনেক উন্নত দেশেও পণ্য চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। সেটা মাথায় রেখে নতুন বাজার আমাদের খুঁজতে হবে, নতুন জায়গায় যেতে হবে। সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সঙ্গে পণ্য রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে সরকার জাতীয়  ‘ট্যারিফ  পলিসি ২০২৩’ প্রণয়ন করছে। এটা আমাদের রপ্তানিতে আরও সুযোগ-সুবিধা এনে দেবে। তিনি বলেন, এখানে আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বিদেশি অতিথিরা আছেন। আমি একটা অনুরোধ করবো আমাদের আমদানি-রপ্তানিতে ভারসাম্য বজায় রাখা একান্তভাবে দরকার। আপনারা রপ্তানি করেন, রপ্তানি করার সময় যে অর্থ ব্যবহার হয় তার যে রিটার্নটা আসবে ঠিক চাহিদা মতো তা আসে না। সেদিকে সবাইকে একটু যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রতিবছর একটা পণ্যকে বর্ষপণ্য হিসেবে সুনির্দিষ্ট করে দেই।

পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, এভাবে প্রতিবছরই বর্ষপণ্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এবার আমি ঠিক করেছি ‘হস্তশিল্প পণ্যকে’ ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণার। এটি আমাদের নারীদের কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং এর মাধ্যমে নারীরা স্বাবলম্বিতা অর্জন করতে পারবে। তিনি বলেন, এখন পলিটিক্যাল নয় ‘ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি’র যুগ। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের পণ্যের চাহিদাটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর আমাদের প্রত্যেকটি কূটনৈতিক মিশনে আমরা এই মেসেজটাই দিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার আমরা কী রকম ঘটাবো তার ওপরই আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলো কাজ করছে এবং করবে। সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের নিট এবং ওভেন গার্মেন্টস বিশ্ববাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমাদের সুযোগ আরও বাড়াতে হবে। আমরা যে পণ্যটাকে সুযোগ দিচ্ছি তারাই খুব সাফল্য অর্জন করছে। তাহলে আমাদের অন্যান্য পণ্যগুলো কেন বাদ যাবে। তাদেরও আমাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে যাতে ভালো ব্যবসা করতে পারে। এবারের মেলায় তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং ইরানের কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে। বিদেশি কোম্পানির ১৬-১৮টি প্যাভিলিয়নসহ ৩৫১টি স্টল রয়েছে। মেলা সকাল ১০টায় খোলা হবে এবং রাত ৯টায় বন্ধ হবে। সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে দর্শনার্থীরা রাত ১০টা পর্যন্ত মেলায় থাকতে পারবেন।

মানব জমিন