- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৬ অক্টোবর ২০২২, ২০:০২, আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২২, ২০:০৩
‘বিআরটি এখন গলার কাটা’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্লজ্জ’ এ কথা বলার আগে তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গত দশ বছর যাবত মানুষ অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে পড়েছে।
এক-এগারো সরকারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ গণতন্ত্রকে দূরে রাখো। সেই একই সূত্র থেকে, একই চক্রান্ত থেকে পরবর্তীকালে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ যে এটা হঠাৎ করে পরিবর্তন করেছে তা নয়। ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে তারা।
রোববার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর গুলশান-২-এ একটি হোটেলে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক ফোরামের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ‘নির্বাচনকালীন তত্বাবধায়ক সরকার ও বর্তমান পেক্ষাপট’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করা হয়।
ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যেদিন বাতিল করা হলো সেদিন বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে চিরস্থায়ীভাবে অস্থিতিশীলতা এবং অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে এসেছিল আওয়ামী লীগ। এই দাবি নিয়ে ১৭৩ দিন তারা হরতাল পালন করেছিল। এই দাবিকে এস্টাবিলিস্ট করার জন্য। তাদের যুক্তি ছিল দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। সুতরাং এখানে নির্বাচনের সময় একটি নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজন। বেগম খালেদা জিয়ারসহ যারা ক্ষমতা ছিলেন তারা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সান্নিবেশিত করেছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় বলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নাকি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছেন। ইতিহাস বিকৃতির একটা সীমা থাকে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য মানুষের অধিকারকে কেড়ে নেয়ার জন্য সংবিধানকে ধ্বংস করার জন্য যদি কেউ এককভাবে দায়ী থাকে সেটা হচ্ছে আওয়ামী লীগ। ১৯৭৪ সালে এই সংবিধানকে চতুর্থ সংশোধনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বদলে দিয়ে বাংলাদেশের এক দলীয় বাকশাল ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। এটা বাংলাদেশের জনগণ কখনোই চায়নি।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের যে দুঃশাসন সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। অতীতের সমস্ত শাসন ব্যবস্থাকে তারা ছাড়িয়ে গেছে। পাকিস্তানি রুল, পাকিস্তানের রুল, তারপরে এরশাদের রুল সবকিছুকে ছাড়িয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দুঃশাসনে বাংলাদেশ পরিপূর্ণভাবে ব্যর্থ করে ফেলেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশটাকে কিভাবে কোন জায়গায় নিয়ে গেছে সরকার। আমাদের কথা বলতে ভয় হয়, সাংবাদিকদের লিখতেও ভয় হয়। একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে এই সরকার। দেশে এই অবস্থা তৈরি হবে এটা আমরা কখনো কল্পনাও করিনি। আমরা যখন ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছি স্বপ্ন দেখেছি সুখী সমৃদ্ধ একটি স্বপ্নের দেশ তৈরি হবে। আজ সেই বাংলাদেশে আমরা কষ্ট পাচ্ছি।
‘এই দেশটা আমরা যখন তৈরি করেছিলাম তখন যুবক ছিলাম, তরুণ ছিলাম। আমরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছি। ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে অসংখ্য মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। এমন দেশের জন্য নয়। আমরা চেয়েছিলাম একটি ভালোবাসার দেশ, প্রেমের দেশ, উন্নত দেশ, মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার দেশ। আমরা তো এমন দেশ দেখতে চাইনি। সত্যিকার অর্থে ১৯৭১ সালে যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম সেই বাংলাদেশ আমরা ফিরে পেতে চাই।’ যোগ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমভাবে বাংলাদেশ স্বাধীনের পরে এখানে গণতন্ত্র চর্চা সেভাবে হয়নি। কাদের দ্বারা হয়নি যারা স্বাধীনতার পরে ক্ষমতায় ছিলেন। তারাই প্রথমে এখানে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, নিহত করেছে। ৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া এটা সেদিন আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছিল।
বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান মোঃ শাহরিয়ার আলম জর্জের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দীন আহমেদ অসীম প্রমুখ বক্তব্য দেন।