বিরাট কোহলির কাছ থেকে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব কেড়ে নিয়ে গত বুধবার সেটি রোহিত শর্মাকে দিয়েছে ভারত। এ নিয়ে ভারতের ক্রিকেটে আলোচনা চলছে তো চলছেই! এতে ভারতের ভালো হলো কি না, কোহলি আর রোহিতের মধ্যে দ্বন্দ্বের সংঘাত বড় হয়ে দেখা দেবে কি না…আলোচনা-বিতর্কের শেষ নেই!
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার, বোর্ড কর্মকর্তা, ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা তো এ নিয়ে কথা বলছেনই, ভারতের বাইরের অনেকেও আলোচিত বিষয়ে নিজের মতো জানানোর সুযোগ হাতছাড়া করছেন না।
তবে ভারতের সাবেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান গৌতম গম্ভীর এ বিতর্কে মধ্যপন্থাই বেছে নিয়েছেন। কোহলি আর রোহিতের মধ্যে তিন সংস্করণের ক্রিকেটে ভারতের অধিনায়কত্ব ভাগ করে দেওয়ার প্রশ্নে গম্ভীর বলেছেন, এতে রোহিতেরও লাভ হয়েছে, কোহলিরও। যেন ঢোলের দুই দিকেই বাড়ি দেওয়া!
গত মাসে শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে কোহলি নিজে থেকেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন। এর কয়েক দিন আগে আইপিএলে নিজের ফ্র্যাঞ্চাইজি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়কত্বও ছেড়ে দেন কোহলি। কিন্তু সে সময় থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছিল, টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়ানোয় ওয়ানডের অধিনায়কত্বও হারাতে পারেন কোহলি। শেষ পর্যন্ত তা-ই সত্যি হলো!
টি-টোয়েন্টিতে রোহিতের নাম তো আগেই অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দল ঘোষণা করা বিবৃতির শেষ অংশে গত বুধবার ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) খুব অনাড়ম্বরে জানিয়ে দেয়, রোহিত শর্মাই এখন থেকে সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতের অধিনায়ক। অর্থাৎ টি-টোয়েন্টির পাশাপাশি ওয়ানডেরও অধিনায়ক এখন রোহিত।
বিসিসিআই আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক সব ব্যাখ্যায় জানিয়েছে, সাদা বল আর লাল বলের ক্রিকেটে আলাদা অধিনায়কত্ব রাখার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নির্বাচকেরা। ভারতীয় টিভি চ্যানেল স্টার স্পোর্টসের অনুষ্ঠান ‘ফলো দ্য ব্লুজ’-এ প্রায় একই ব্যাখ্যা গম্ভীরেরও।
সাদা বলে অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়া কোহলির ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে গম্ভীরের, ‘লাল বলের ক্রিকেটে রোহিত শর্মার ভূমিকার মতোই ব্যাপারটা, এখানে শুধু অধিনায়কত্বটাই থাকছে না। এটা বিরাট কোহলিকে হয়তো আরেকটু স্বাধীনতা দেবে। কাঁধে অধিনায়কত্বের ভার না থাকায় ও হয়তো সাদা বলের ক্রিকেটে (ব্যাট হাতে) আরও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারবে।’
ব্যাট হাতে কোহলিকে ‘কোহলি’র রূপে ফিরে পাওয়া ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দুই বছরের বেশি হয়ে গেল, তিন সংস্করণের কোনোটিতেই কোহলির ব্যাট শতক দেখেনি। একসময় ভারতেরই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০ শতকের রেকর্ড কোহলি সহজেই পেরিয়ে যাবেন বলে মনে করা হতো, সেই কোহলি ৭০ শতকে আটকে আছেন। টেন্ডুলকার আর তাঁর মাঝে ৭১ সেঞ্চুরি নিয়ে রিকি পন্টিংও আছেন।
এখন অধিনায়কত্বের ভার থেকে মুক্তি পাওয়ায় কোহলিকে আগের ছন্দে দেখার স্বপ্নই দেখেন গম্ভীর, ‘আমি নিশ্চিত, ভারত কোহলির সেরা রূপটাই দেখতে পাবে, সেটা সাদা বলের ক্রিকেটই হোক বা লাল বলের। একই সঙ্গে বলি, এত বছর ধরে ও যে আবেগ দেখিয়েছে, শারীরিক-মানসিক যে শক্তি দেখিয়েছে, সেটা বিরাট কোহলির কাছ থেকে একইভাবে পাবেন। সেটা সে অধিনায়ক থাকুক বা না থাকুক।’
একই সঙ্গে সাদা বলের অধিনায়কত্বটা পুরোপুরি রোহিত শর্মাকে দিয়ে দেওয়া নিয়ে গম্ভীরের বিশ্লেষণ, ‘ভারতীয় ক্রিকেটের জন্যই এটা ভালো হলো যে আমরা দুজন অধিনায়ক পাচ্ছি—একজন সাদা বলে, একজন লাল বলে। রোহিতও এখন সময় পাবে সাদা বলের ক্রিকেটে দলটাকে গুছিয়ে নেওয়ার—সেটা টি-টোয়েন্টি হোক বা ওয়ানডে।’
অধিনায়ক হিসেবে রোহিতের কাছ থেকে কী আশা করা যায়, সেটিও উঠে এল গম্ভীরের কণ্ঠে, ‘আমার মনে হয়, অধিনায়ক হিসেবে রোহিত শর্মা নিশ্চিতভাবেই ভারতের ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু করবে। ভারতের ক্রিকেট ভালো হাতেই পড়েছে, বিশেষ করে সাদা বলের ক্রিকেটে।’
আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের অধিনায়ক হিসেবে রোহিতের পাঁচ শিরোপা জয়কেও রোহিতের ভালো অধিনায়কত্বের প্রমাণ হিসেবে দেখছেন গম্ভীর, ‘ও পাঁচবার আইপিএলের ট্রফি জিতেছে। তার মানে তো এটাই যে অন্য অধিনায়কদের চেয়ে ও আলাদা কিছু করতে জানে!’