- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৯ জুলাই ২০২১
একমাস আগে রাজধানী ঢাকায় করোনা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখন সংক্রমণ ও মৃত্যুতে হটস্পটে পরিণত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে করোনার ভারতীয় রূপ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পরও সরকার আন্তঃজেলা পরিবহন চলাচল বন্ধ করতে সময় নিয়েছিল। রাজধানীতে জনসংখ্যার ঘনত্ব, মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কে জনগণের উদাসীনতাও ঢাকায় দ্রুত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
তারা বলছেন, ব্যাপক হারে নমুন পরীক্ষা, সংক্রমিত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন, লকডাউন বাস্তবায়ন এবং হাসপাতালে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
পরিস্থিতি ভয়াবহ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১০ দিনে ১ হাজার ৪১২ জন রোগী মারা গেছেন এবং ৮৯ হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
গত মঙ্গলবার দেশে ১১ হাজার ৫২৫ জন এবং বুধবার ১১ হাজার ১৬২ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার ঢাকা শহরে ৩ হাজার ৭১৫ জন বা ৩২.২৩ শতাংশ এবং বুধবার ৩ হাজার ২৮৫ জন বা ২৯.৪৩ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে জুনের শুরুতে ঢাকা শহরে কোভিড পজিটিভিটি হার ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
ভাইরাস শুধু ঢাকা শহরেই নয়, বিভাগের আওতাধীন জেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। মঙ্গলবার ঢাকা বিভাগে ৫ হাজার ৯৭ জন রোগী বা ৩১.০৯ শতাংশ এবং বুধবার ৪ হাজার ৭৩২ জন বা ৪২.৩৯ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া, মঙ্গলবার এবং বুধবার সারাদেশে যথাক্রমে ২০১ এবং ১৬৩ জন করোনায় মারা গেছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার ঢাকা বিভাগে ৪৫ জন এবং বুধবার ৫৮ জন মারা যান।
আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অনেক জেলা থেকে মুমূর্ষ রোগীরা রাজধানীর কোভিড হাসপাতালে আসছে। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য ২৭৫টি সাধারণ এবং ১০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। তবে বুধবার ৩০০ জনেরও বেশি রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং কোনো আইসিইউ শয্যা খালি ছিল না।
বুধবার রাজধানীর ১৪টি সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ১১টিতে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি ছিল না। এছাড়া রাজধানীর অন্যান্য সব কোভিড-ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালে রোগীগের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
ইউএনবির সাথে আলাপকালে ডব্লিউএইচও’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা অপর্যাপ্ত। ফলস্বরূপ, ঢাকার আশেপাশের জেলায় ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকাও সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘জনগণকে দ্রুত-অ্যান্টিজেন পরীক্ষার আওতায় আনার পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইন এবং সরকারের উচিত লকডাউন আরও কঠোরভাবে কার্যকর করা।’
মোজাহেরুল বলেন, যাদের কোভিডের লক্ষণ রয়েছে তাদেরকে দেশব্যাপী সরকারি আইসোলেশন কেন্দ্রগুলোতে আসতে উত্সাহিত করা উচিত।
তিনি বলেন, ‘সরকার লকডাউন বাস্তবায়ন ও জনসাধারণের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। কার্যকরভাবে বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন এবং জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে লকডাউন মনিটরিং কমিটি গঠন করা উচিত।’
‘ভাইরাস সংক্রমণ রোধ না করে শয্যা বৃদ্ধি এবং অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। তাই করোনার পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার বিকল্প নেই,’ বলেন এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নতি করা
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা অধ্যাপক মুশতাক হুসেন জানান, করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সীমান্তবর্তী জেলা থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যখন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছিল, তখন আমরা জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি এবং স্থানীয়ভাবে ভাইরাস সংক্রমণক নিয়ন্ত্রণে লকডাউন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারিনি। তাই ভাইরাসটি রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি প্রাথমিক পর্যায়ে আন্তঃজেলা পরিবহন পরিষেবা স্থগিত রাখতে এবং জনসাধারণের চলাচলকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হতাম তাহলে পরিস্থিতি এতটা সংকটময় হয়ে উঠত না।
মুশতাক হুসেন বলেন, এখন চিহ্নিত কোভিড রোগীদের উন্নত হাসপাতালে চিকিৎসবা সেবার আওতায় আনা দরকার। সব রোগীদের হাসপাতালে আসার দরকার নেই। তবে যেসব রোগী নিজের বাড়িতে চিকিত্সা করতে পারছেন না তাদের মাঠ পর্যায়ে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে চিকিৎসা ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে।
সূত্র : ইউএনবি