কে হচ্ছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান?

  • হাসিনার শেষ রক্ষা কিছুতেই আর হচ্ছে না।
  • নিকারাগুয়ার ১০০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা।

।। সুরমা প্রতিবেদন ।।

লণ্ডন, ২৩ আগস্ট: শেখ হাসিনার অনৈতিক সরকারের মেয়াদ দ্রুত সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দেশের সাধারণ মানুষ ও বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের অন্যতম প্রধান দাবি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে বিরোধীদলগুলো আন্দোলন করছে। হাসিনা সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতই এবারও প্রতিবেশি দেশের সহায়তায় ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আওয়ামী লীগের নেতারা ঘন ঘন দিল্লীতে ধর্না দিচ্ছেন। কিন্তু হাসিনার শেষ রক্ষা কিছুতেই আর হচ্ছে না।

২০১৪ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য তৈরি হয়েছিল। এবার দেশ দুটির মধ্যে একটা ঐক্য তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তা থেকে তারা পিছপা হবে না। তারা ভিসা নীতিসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেবে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে অগ্রাধিকার রয়েছে, তা তারা বাস্তবায়ন করবে।

৩৮ বছর ধরে কম্বোডিয়া শাসন করা হুন সেনের ক্ষমতাসীন দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি) নিরঙ্কুশ বিজয় ঘোষণার পরই যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে। কম্বোডিয়ার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হওয়ায় এবং বিরোধী দল ছাড়া একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করায় দেশটির কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সেই সঙ্গে সেখানে বিদেশি কিছু সহায়তা কর্মসূচিও স্থগিত করেছে ওয়াশিংটন। কম্বোডিয়ার কর্তৃপক্ষকে প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত বিচারের অবসান ও সরকারি সমালোচকদের মুক্তি এবং ‘দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানের উন্নতি’ করার জন্য স্বাধীন মিডিয়াকে হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

সম্প্রতি নিকারাগুয়ার ব্যাপক কারচুপির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফের (টানা চতুর্থবার) দেশটির রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসা নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট রোজারিও মুরিলোর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ১০০ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নাগরিক স্বাধীনতা হরণকারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য রোজারিও মুরিলোর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শনিবার (১৯ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এ বিষয়টি জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উক্ত কর্মকর্তারা সুশীল সমাজের সংস্থাগুলোকে দমন করার, নাগরিক পরিসর বন্ধ করার এবং অন্যায়ভাবে সরকার সমালোচকদের আটক করার প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছিলেন।

এই বিষয়টি বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্যও প্রযোজ্য। সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের আলোচন থেকে জানা যায় তারা আরো বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, যারা নিকারাগুয়ার গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলছে তাদের জবাবদিহিতা বাড়াতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে (একত্রে) কাজ করা চালিয়ে যাবো। আমরা নিকারাগুয়ার জনগণের মৌলিক স্বাধীনতা এবং তাদের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ফলে ভারতও চাইছে, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ঐকমত্যের স্থান হচ্ছে এমন একটি নির্বাচন আয়োজন, যা অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে; যেখানে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারবে। এ রকম নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করলে দুই পক্ষের স্বার্থ রক্ষা হবে এবং সম্পর্ক টেকসই হবে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ধারাবাহিক আলোচনা হয়েছে। এসব বৈঠক ভারত এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে হয়েছে। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, আগামী মাসে (৭-৮ সেপ্টেম্বর) জি২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হবে। সেই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থাকবেন। অন্যদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভও নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনে যোগ দিবেন। সেখানে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ইস্যুতে তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন। দেশের জনগণের তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী তাকে মেনে নিতে বলবেন। বাংলাদেশে আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তারা এই বার্তা দিবেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের একটি সূত্র সুরমাকে জানিয়েছে যে, ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নাম প্রস্তাব করেছে। শেখ হাসিনা সেই সরকারে তাকে রাখার শর্তে রাজি হয়েছেন। তবে ড. ইউনুস সেই সরকারে হাসিনাকে রাখতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থার একটি সূত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের সেই সূত্রকে সমর্থন করে সুরমাকে জানিয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে আরও কয়েকটি নাম তারা বিবেচনা করছে। তারা সবাই সম্মানিত ব্যক্তি। এর মধ্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের নাম আছে। এই পদে টেকনোক্র্যাট এবং বর্তমানে যেসব ব্যক্তি রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন, তাদেরকে নিয়োগ করার বিষয়ে আপত্তির কথা তারা জানিয়েছে।

তবে শোনা যাচ্ছে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে, বিরোধীদল ও সরকারি দলের প্রস্তাবিত প্রার্থীদের মধ্যে থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান চূড়ান্ত করবে। অর্থাৎ বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফলে দেশের সচেতন মহলে কে হচ্ছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান এ নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় নিয়োজিত বিদেশি কূটনীতিকরাও নড়েচড়ে বসেছে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি অথবা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সবকিছু স্পষ্ট হবে।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় একমাত্র পদত্যাগই রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বাঁচিয়ে রাখবে। এছাড়া গণবিপ্লবে পতন হলে বাকশালের মত এই দলটিও ইতিহাস থেকে মুছে যাবে।