ভারতে ফসলের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকেরা গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের মুখে পড়েছেন। দিল্লি অভিমুখী যাত্রা ঠেকাতে পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন কৃষকেরা। তাঁদের নিবৃত্ত করতে ড্রোন থেকেও গ্যাস ক্যানিস্টার নিক্ষেপ করে পুলিশ। এদিকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে কৃষকদের দাবি বাস্তবায়ন করবে তাঁর দল।
ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) আইনি স্বীকৃতির দাবিতে ভারতের হাজার হাজার কৃষক গত মঙ্গলবার ‘দিল্লি চলো’ যাত্রা শুরু করেন। তবে পুলিশ রাজধানী দিল্লি অভিমুখী কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর পাঞ্জাব ও হরিয়ানার হাজার হাজার কৃষক দিল্লি চলো কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিবাদে ২০২০ সালের নভেম্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন ভারতের কৃষকেরা। সেবার দেড় বছরের বেশি সময় বিক্ষোভ করেন তাঁরা। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে ঢুকে পড়েছিলেন কৃষকেরা। তবে এবার কৃষকদের ঠেকাতে আগে থেকেই তৎপর নরেন্দ্র মোদির সরকার।
রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের সীমান্তবর্তী শম্ভু এলাকায় কৃষকদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। সেখানে কৃষক বিক্ষোভের মূল দলটিকে আটকে দেওয়া হয়।
পাঞ্জাবের কাপুরথালা জেলার বাসিন্দা মোহন সিং। সড়কপথে দিল্লি থেকে ৪১৫ কিলোমিটার দূরের জেলাটির ৬৫ বছর বয়সী এই কৃষকও যোগ দিয়েছেন বিক্ষোভে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করছে, যেন আমরা শত্রুদেশ থেকে এসেছি।’ এই কৃষক বলেন, ‘আমাদের সবার চাওয়া দিল্লি যাওয়া এবং আমাদের অধিকারের কথা তুলে ধরা। অথচ পুলিশের হামলায় দেড় শতাধিক কৃষক আহত হয়েছেন।’
হরিয়ানা রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘ব্যাপক ইটপাটকেল’ ছোড়া হয়। এতে পুলিশের ২৪ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
এদিকে প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি জানান, কৃষকদের দিল্লি চলো কর্মসূচির প্রথম দিনেই এমএসপির আইনি বৈধতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ‘ভারত জোড়ো ন্যায়যাত্রা’ চলাকালে মঙ্গলবার ছত্তিশগড়ে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাহুল বলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ মেনে কৃষকদের ফসলের জন্য এমএসপির আইনি নিশ্চয়তা দেবে।
রাহুল বলেন, ভারত জোড়ো ন্যায়যাত্রা থেকে কংগ্রেস পাঁচটি ন্যায় বা নিশ্চয়তা ঘোষণা করবে। এমএসপির নিশ্চয়তা তার প্রথম। বিষয়টি আইনি বৈধতা পেলে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাবেন। দেশের ১৫ কোটি কৃষক পরিবার এর ফলে উপকৃত হবে। তাদের জীবন থেকে অনিশ্চয়তা দূর হবে।
কৃষকদের এই দিল্লি অভিযানের মূল দাবিগুলোর অন্যতম এমএসপিকে আইনের আওতায় আনা, স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশের পূর্ণ রূপায়ণ, কৃষিঋণ মওকুফ এবং কৃষকদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার। ২০২০-২১ সালে কৃষকদের দিল্লি যাত্রার সময়েও এগুলোই ছিল মুখ্য দাবি।
কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহারের মতো দাবি সেবার মেনে নিলেও এমএসপিকে আইনি বৈধতা দেওয়ার বিষয়টি বিজেপি বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কৃষক নেতাদের অভিযোগ, দীর্ঘ তিন-চার বছর ধরে সরকার নানা অসিলায় টালবাহানা করে গেছে। কিন্তু দাবি পূরণ করেনি।
দাবিদাওয়া নিয়ে গত সোমবার চণ্ডীগড়ে কৃষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা ও ক্রেতা সুরক্ষামন্ত্রী পীযূষ গয়াল। কিন্তু মধ্যরাত পর্যন্ত কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। পরে মঙ্গলবার সকালে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ যাত্রা শুরু হয়।